অর্থনীতি ডেস্ক :
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মাত্র ২৬% বাস্তবায়িত হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নের হার গেল ১৫ বছর ধরেই অসন্তোষজনক। এ অবস্থায় পরবর্তী সাত মাসে বাজেটের বাকি অংশ বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাজেট বাস্তবায়নের হার আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১% কম। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ২৭%। সম্প্রতি অর্থ বিভাগ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের বাজেট বাস্তবায়নের এ হার চূড়ান্ত করেছে।
অর্থবিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে মোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৮৪ হাজার ৬২১ কোটি টাকা (বাস্তবায়ন হার ১১%) এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ১ লাখ ৯ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে (বাস্তবায়ন হার ১৫%)।
এর বিপরীতে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৪ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজেট বাস্তবায়নের হার কমলেও সার্বিকভাবে টাকার অঙ্কে ব্যয় বেড়েছে।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) তা সংশোধন করে ২ লাখ ৪৫ টাকায় নামিয়ে আনা হচ্ছে। ফলে বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে এডিপি আকার কমছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এডিপিতে মোট ব্যয় হয়েছে ৪১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বাস্তবায়নের হার হচ্ছে মাত্র ১৫%। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১৫ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা (বান্তবায়ন হার ৫%) এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর%) ২৬ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা (বাস্তবায়ন হার ১০%) ব্যয় করা হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার আশানুরূপ না হলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এডিপি বাস্তবায়নের হার ২% বেড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা (বাস্তবায়ন হার ১৩%)।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, আশানুরূপ ব্যয় না হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাজেট ঘাটতির হার দাঁড়িয়েছে জিডিপির ৩%। টাকার অঙ্কে নিট সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (জিডিপির ৮%)।
অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে আলোচ্য সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ৮ হাজার ৭৯ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৫ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩০ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ কমেছে ও সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে।
আলোচ্য সময়ে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে নিট বৈদেশিক অর্থায়ন আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নিট বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ হচ্ছে ১০ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের একই সময়ে নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে আয় হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৫ কোটি টাকার রাজস্ব, যা এনবিআরের মাধ্যমে আহরণ লক্ষ্যমাত্রার ৩৬%।
এছাড়া এনবিআর-বহির্ভূত কর রাজস্ব খাতে ২০ হাজার কোটি এবং কর-বহির্ভূত রাজস্ব খাতে ৫০ হাজার কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে কর-বহির্ভূত রাজস্বের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৪৮% আহরণ হলেও এনবিআর-বহির্ভূত কর রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ১৯%।
এ ব্যাপারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বাংলা আউটলুককে বলেন, ‘প্রথমার্ধে আমরা ধরেই নিই যে ৪০ শতাংশের বেশি বাজেট বাস্তবায়ন হবে না। সে হিসেবে এবার তার চেয়েও কম বাস্তবায়ন হয়েছে। অর্থ সংকটের কারণে সরকারের দিক থেকে ব্যয় কমানোর একটি প্রবণতা তো ছিলই।
তাছাড়া ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ সরকার পরিশোধ করেনি। ফলে সেখানেও কিছুটা অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। তবে সামনের দিনগুলোয় সরকারের ব্যয় বাড়তে থাকবে। বিশেষ করে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে ব্যয় অনেক বাড়বে। আর অর্থবছরের শেষ মাস অর্থাৎ জুনে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হবে।’
সরকারের অর্থ সংকটের বিষয়টি সামনে আসে সার ও বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি এবং নগদ প্রণোদনার অর্থ বকেয়া পড়ার পর। চলতি বছরের শুরুতে এ দুই খাতের ভর্তুকির বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর
অনুকূলে বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ভর্তুকির দায় মেটানোর উদ্যোগ নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এ পর্যন্ত সারে ভর্তুকির বিপরীতে ১৩ ব্যাংকের অনুকূলে ৯ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ও বিদ্যুতে ভর্তুকির
বিপরীতে ২৮ ব্যাংকের অনুকূলে ১০ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকার বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খাত দুটিতে ভর্তুকি বাবদ ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বকেয়া রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে ইস্যু করা হয়েছে ২০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার বিশেষ বন্ড।