দূরন্ত বিডি ডটকম --------------------------------স্বাগতম ২০২৪--------------------------- মানবতার কথা বলে ------------------------------------------------------ durontobd.com খুলনায় একমাসে ১৩ লাশ - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫

খুলনায় একমাসে ১৩ লাশ


জেলার খবর :
খুলনায় আগে থেকেই সন্ত্রাসীদের নানা বেপরোয়া কার্যকলাপে আতঙ্কিত মানুষ। তবে সম্প্রতি নদী-খালসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েছে। উদ্ধার হওয়া এসব মরদেহের মধ্যে অনেকের আবার পরিচয়ও মিলছে না। ফলে শেষমেশ অজ্ঞাতপরিচয়ে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন হচ্ছে। গত ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত অর্থ্যাৎ একমাসে খুনের ঘটনাসহ ১৩ লাশ উদ্ধার হয়েছে। যা নিয়ে সচেতন মহলে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। 


পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, গত ১০ মে খুলনার দাকোপ উপজেলার চড়া নদী থেকে চল্লিশ বছর বয়সের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নদীতে স্থানীয় মরদেহ ভাসতে দেখে থানায় খবর দেন। পুলিশ গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। লাশটি ওই গ্রামের বাসিন্দা অনন্ত মন্ডলের ছেলে গোবিন্দ মন্ডলের। 


একইদিন খুলনা শহর সংলগ্ন ভৈরব নদে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাতনামা (৩৮) যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খানজাহান আলী থানার মিরেরডাঙ্গা এ্যাজাক্স জুটমিল ঘাট এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার হয়।


১৭ মে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মীরেরডাঙ্গা খেয়াঘাট থেকে ১৩ বছরের অজ্ঞাতনামা কিশোরের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়রা নদীর পানিতে মরদেহটি ভাসতে দেখে পাড়ে তুলে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।


একইদিন তেরখাদা উপজেলার আব্দুর রহিম শেখ নামে এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। ছাগলাদহ ইউনিয়নের পাতিলাডাঙ্গা গ্রামের বিলের ভিতরের রাস্তার পাশের বাগান থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত ওই ব্যক্তি পাতিলাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মৃত ওদুদ শেখের ছেলে।

 
২২ মে খুলনার টুটপাড়া এলাকার দারোগার বস্তির পাশে একতলা ভবন থেকে নিলু বেগম (৫৬) নামের এক বৃদ্ধার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ফেরদৌসী বেগম পলির পরিত্যক্ত একতলা ভবন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে ঘরের মালামাল লুট করেছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।


২৬ মে খুলনায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে গোলাম (২৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। সোনাডাঙ্গা থানাধীন ২২ তলা ভবনের পাশে একটি গলিতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক হরিণটানা থানাধীন ময়ুর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো. আলী হোসেনের ছেলে।


প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, রাত সাড়ে ১২ টার দিকে পূর্ব শত্রুতার জেরে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা সোনাডাঙ্গা থানাধীন ২২ তলা ভবনের পাশের গলিতে গোলামের ওপর হামলা চালায়। দুর্বৃত্তের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে গোলামের পেটের মাঝখানে আঘাত করে পালিয়ে যায়। এতে তার পেটের নাড়ি বের হয়ে যায়। উপস্থিত স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 
একইরাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে মো. রনি ওরফে কালো রনি (৩৬) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ওইদিন রাত ১২টার দিকে রূপসা উপজেলার মোছাব্বরপুর গ্রামে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। নিহত যুবক ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হাওলাদারের ছেলে।

 
রূপসা থানার ওসি মোহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান বলেন, নিহত যুবক খুলনার ‘বি’ কোম্পানি গ্রেনেড বাবুর একান্ত সহযোগী ছিল। দুর্বৃত্তরা তার মাথা লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোড়ে এবং গুলিটি মাথা ভেদ করে বের হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।


২৭ মে সকাল ৮টার সময় খুলনার কয়রা উপজেলায় নদীর চর থেকে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে শিকলে তালাবদ্ধ অবস্থায় আব্দুল মজিদ সানা (৬০) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সে নারানপুর গ্রামের মৃত মনজেল সানার সন্তান। 


জানা গেছে, কয়রা থেকে খুলনাগামী লঞ্চের যাত্রীরা সকালে খুলনা যাওয়ার পথে চরে খুঁটির সাথে শিকলে তালা অবস্থায় মরদেহটা দেখতে পায়। পরে নারানপুর লঞ্চঘাটে খবরটি পৌঁছে দেয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।


২৯ মে খুলনার ৬ নম্বর মাছ ঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মরদেহ। তার পরনে ব্লু রংয়ের গেঞ্জি ও কালো রংয়ের প্যান্ট ছিল। ব্যক্তিটির মুখ ও হাতের আঙ্গুলের টিস্যু পচে যাওয়ার কারণে সিআইডি এবং পিবিআইয়ের বিশেষজ্ঞ টিম তার পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। পরে তার শরীর থেকে ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরবর্তীতে সুরতহাল রিপোর্ট এবং ময়নাতদন্ত শেষে ওই মরদেহ আঞ্জুমান মফিদুলে দাফন করা হয়।

 
৩০ মে খুলনার কয়রা উপজেলার উলা গ্রামের মো. সাহেব আলী গাজী (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে খুন করে তার আপন বড় ভাই মো. শহিদুল গাজী। তারা উলা গ্রামের মৃত দ্বারা গাজীর সন্তান। দুপুর আড়াইটায় নিজ বসতবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ আসামি শহিদুলকে গ্রেপ্তার করে। 


স্থানীয়রা জানায়, শহিদুল ইসলাম তার স্ত্রীকে মারপিট করে দড়ি দিয়ে আড়ার সঙ্গে টাঙিয়ে দেয়। এ সময় তার চিৎকারে পাশের বাড়ি থেকে সাহেব আলী ছুটে গিয়ে ভাবিকে বাঁচাতে যায়। তখন শহিদুল হাতে থাকা শাবল দিয়ে সাহেব আলীকে বারি মারলে সাহেব আলী মাটিতে পরে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর শহিদুল বটি দিয়ে তার আপন ছোট ভাই সাহেব আলীকে জবাই করে।


গত ৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সোনাডাঙ্গা থানাধীন ময়লাপোতা হরিজন কলোনিতে ঘটনাটি ঘটে। নিহত যুবক সাচিবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা হেমায়েতের ছেলে।


সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এসআই আব্দুল হাই বলেন, নিহত যুবক ওয়াসার শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিল। সে সাচিবুনিয়ার বাসিন্দা। সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতা এলাকার হরিজন কলোনিতে রাতে তার বড় বোনের বাড়িত বেড়াতে এসেছিল। রাতে সেখান থেকে বের হওয়ার পর ৪-৫ জন যুবক তার ওপর অতর্কিত হামলা করে। তাদের মধ্যে এক যুবকের হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে তার পেটের নীচে আঘাত করলে সবুজ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। পরবর্তীতে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়া গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


৪ জুন খুলনা সদর থানাধীন মতিয়াখালী খালে একটি ডালে বেঁধে ছিল এক নারীর মরদেহ। ওই নারীর শরীরের ওপর অংশে কোনো কাপড় ছিল না। কিন্তু তার শরীরের নীচের অংশে একটি কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। পরবর্তীতে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুলে দাফন করা হয়।

 
সর্বশেষ ৯ জুন সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়ন সংলগ্ন আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাস নালীতে গভীর ক্ষত চিহ্ন ছিল। তার পরনে ছিল নীল রংয়ের প্যান্ট এবং তার শরীরের ওপরের অংশে কোন কাপড় ছিল না। 


রূপসা নৌ-পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আবুল খায়ের বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সকাল দুপুর পর্যন্ত তার কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি। আশপাশের থানায় তার ছবি তুলে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হবে। 


খুলনা সদর নৌ-পুলিশের অফিসার ইনচার্জ বাবুল আক্তার বলেন, শারীরিক ও হাতের আঙ্গুলে পচন থাকায় লাশগুলোর ব্যক্তিগত পরিচিতি সিআইডি ও পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা উদ্ধার করতে পারেনি। ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। 


এ ব্যাপারে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, গুম ও খুনের মতো অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সত্যিই খুবই উদ্বেগজনক। এ গুলো নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতা বাড়ানো দরকার।