স্টাফ রিপোর্টার , জহির শাহ্
*তেহরান, ইরান:* গত রাতে মানবতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি বাহিনী তেহরানের পাঁচটি হাসপাতালে নৃশংস হামলা চালিয়েছে। এই পৈশাচিক হামলায় হাসপাতাল ভবনগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং এর ফলে রোগীরা চরম আতঙ্ক ও দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পিরহোসেইন কোলিভান্দ দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই হামলাকে "নৃশংস" আখ্যা দিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে এর তীব্র নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এই ঘটনা কেবল ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং বিশ্ব বিবেকের প্রতি এক চরম আঘাত।
হাসপাতালের ওপর সরাসরি হামলা: যুদ্ধাপরাধের স্পষ্ট দৃষ্টান্ত
কোলিভান্দ তার সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন, "বিস্ফোরণের ধোঁয়ায় রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যাও তৈরি হয়েছে।" এটি কেবল অবকাঠামোগত ক্ষতি নয়, বরং এটি অসুস্থ ও দুর্বল রোগীদের জীবনকে আরও গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলেছে। হাসপাতাল এবং চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি সরাসরি যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়ে। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, হাসপাতালগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে সুরক্ষিত স্থান হিসেবে বিবেচিত হয় এবং সেগুলোতে হামলা চালানো ঘোরতর অপরাধ। ইসরায়েলের এই হামলা যুদ্ধনীতি ও মানবিকতার সমস্ত সীমা অতিক্রম করে মানবতাবিরোধী অপরাধের এক নতুন, ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হতবাক করেছে এবং তাদের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে—ইসরায়েল কি কোনো নিয়মনীতি মানে না?
প্রমাণ সংগ্রহ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে প্রেরণের দৃঢ় অঙ্গীকার
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এই হামলার বিস্তারিত প্রভাব এবং এর সমস্ত প্রমাণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংগ্রহ করছে। পিরহোসেইন কোলিভান্দ দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, এই সমস্ত প্রমাণ রেড ক্রস (ICRC) সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে পাঠানো হবে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলের এই জঘন্য অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ইরান চায়, বিশ্বের কাছে ইসরায়েলের অমানবিক আগ্রাসনের ভয়াবহতা উন্মোচিত হোক এবং অপরাধীরা বিচারের সম্মুখীন হোক। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ইরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিতে চায়—নিরীহ মানুষের ওপর এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে নীরব থাকা মানে অপরাধীদের পরোক্ষভাবে সমর্থন করা।
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর প্রতি জরুরি আহ্বান: ঐক্যের ডাক
এই হামলার ঘটনা বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর বিবেককে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। এই দুঃসময়ে ইরানের পাশে দাঁড়ানো এবং ইসরায়েলের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রতিটি মুসলিম দেশের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান গণহত্যা এবং ইরানের ওপর এই আগ্রাসন মুসলিম বিশ্বের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, যদি তারা চুপ করে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। মুসলিম দেশগুলোর উচিত এই হামলার তীব্র নিন্দা জানানো এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা। এখন সময় এসেছে মুসলিম বিশ্বকে বিভেদ ভুলে একতাবদ্ধ হওয়ার, যাতে কেউ আর মুসলিম ভূখণ্ডে বিনা বাধায় আগ্রাসন চালাতে না পারে। এটি কেবল ইরানের বিষয় নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সম্মান ও নিরাপত্তার প্রশ্ন।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতা কি ইসরায়েলের অপরাধকে উৎসাহিত করছে?
হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর স্থানে হামলা, যেখানে অসুস্থ ও দুর্বল মানুষ আশ্রয় নেয়, তা যুদ্ধাপরাধ ছাড়া আর কিছু নয়। বিশ্ব সম্প্রদায় যদি এই ধরনের জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয় এবং কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তা ইসরায়েলকে ভবিষ্যতে আরও বেপরোয়া হতে উৎসাহিত করবে। বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে, এবং এখন তারা অন্যান্য মুসলিম দেশেও হামলা শুরু করেছে। এই পরিস্থিতি বিশ্বনেতাদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এখন সময় এসেছে ইসরায়েলের এই আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার এবং নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করার। বিশ্বের উচিত ইসরায়েলের এই বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানানো এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা। নীরবতা আর সমাধান নয়, এখন প্রয়োজন সম্মিলিত পদক্ষেপ।