দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিক শাহ আলম খন্দকার নৃশংসভাবে খুন: দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

Wednesday, 2 July 2025

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিক শাহ আলম খন্দকার নৃশংসভাবে খুন: দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ


জহির শাহ্,জেলা প্রতিনিধি
 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কাইতলা গ্রামে সংঘটিত এক মর্মান্তিক ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। **দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকার নবীনগর প্রতিনিধি শাহ আলম খন্দকার (৪৮)** নামের একজন সাহসী ও নির্ভীক সাংবাদিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এলাকার ত্রাস **'টাইগার বাবুল ডাকাত'** নামে পরিচিত এক ছিনতাইকারী সন্ত্রাসীর হাতেই প্রাণ হারিয়েছেন এই সংবাদকর্মী। এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত মৃত্যুর নয়, বরং বাংলাদেশের সাংবাদিকতার নিরাপত্তা এবং বাকস্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।


ঘটনার ভয়াবহ বিবরণ

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত বাবুল মিয়া সম্প্রতি একটি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফিরে আসে। সাংবাদিক শাহ আলম খন্দকার ইতিপূর্বে এই বাবুলের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশ করেছিলেন।


ঘটনার সূত্রপাত হয় গত বুধবার সকালে। সাংবাদিক শাহ আলমের পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কাইতলা গ্রামের রাস্তায় তাদের ব্যাগ, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় বাবুল মিয়া। এই খবর জানাজানি হওয়ার পর দুপুরে শাহ আলম নিজেই কয়েকজন স্থানীয়কে সঙ্গে নিয়ে বাবুলের মুখোমুখি কথা বলতে যান।


সেই কথোপকথন চলাকালীনই তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে চাঁদাবাজ বাবুল সাংবাদিক শাহ আলমকে উপর্যুপরি ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। নির্মম প্রহারের শিকার হয়ে শাহ আলম ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে, কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।



অভিযুক্ত আটক, তদন্ত চলছে

ঘটনার পরপরই স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে বাবুল মিয়াকে আটক করে এবং পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) **শাহীনূর ইসলাম** ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, "অভিযুক্ত বাবুল বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে এবং আমরা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি।"


তবে সাংবাদিক সমাজে প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি নিছকই 'মারধরের' ঘটনা, নাকি একজন সাংবাদিককে তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালনের 'প্রতিশোধ' হিসেবে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করে হত্যা করা হয়েছে?


'সাংবাদিক মারলে কী হয়?': রাষ্ট্রকে নাড়া দেওয়ার আহ্বান

এই নৃশংস ঘটনায় ইতোমধ্যেই স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকরা তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, "আজ একজন উপজেলা প্রতিনিধি রাস্তায় খুন হলেন, কাল জেলা প্রতিনিধি? পরশু জাতীয় দৈনিকের ব্যুরো চিফ?" সাংবাদিক নেতারা জোর দিয়ে বলেছেন, এভাবে যদি একজন পেশাদার সংবাদকর্মী তার কাজের জন্য প্রতিশোধের শিকার হন, তাহলে দেশের বাকস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার হুমকির মুখে পড়বে। তাদের দাবি, "সাংবাদিক মারলে কী হয়?" — এই প্রশ্ন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে নাড়া দেওয়া উচিত।


শাহ আলমের কর্মময় জীবন: অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন কণ্ঠস্বর

পরিবার ও সহকর্মীদের মতে, শাহ আলম খন্দকার ছিলেন একজন অত্যন্ত সৎ, নীতিবান এবং সাহসী সাংবাদিক। তিনি শুধু সংবাদ পরিবেশনেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; নিজের এলাকায় মাদক এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে লেখালেখি করতেন, অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করতেন। সম্ভবত এই আপসহীন মনোভাবই তাকে সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত করে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।


সাংবাদিক শাহ আলম খন্দকারের মৃত্যু শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংবাদ জগৎ নয়, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই ঘটনা এখন রাষ্ট্র, গণমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষকে একত্রিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। এটি কেবল একটি শোকের ঘটনা নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে।


সাংবাদিক হত্যা কোনো গণতান্ত্রিক দেশে স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যদি হুমকির মুখে পড়ে, তবে তা কেবল গণতন্ত্রেরই পতন ঘটায় না, বরং সমাজে নৈরাজ্য ডেকে আনে।


এখন একটাই দাবি – দ্রুত মামলা দায়ের, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। তা না হলে, আগামী মৃত্যু সংবাদটি হয়তো হতে পারে আরেকজন সাংবাদিকের।