খেলার মাঠে ডেস্ক
সুইজারল্যান্ডে চলমান নারী ইউরো খেলছেন ১৬টি দেশের সাড়ে তিন শর বেশি খেলোয়াড়। সবারই আলাদা একটা গল্প আছে। এর মধ্যে রাচেল রোর গল্পটা ব্যতিক্রমী। ওয়েলসের ৩২ বছর বয়সী এই ফুটবলার প্রথমবার ইউরোপের শীর্ষ টুর্নামেন্টে খেলছেন কারাগারের অভিজ্ঞতা নিয়ে।
না, রো কখনো কারাবন্দী ছিলেন না। ছিলেন কারাগারের কর্মী। এমনকি খেলোয়াড় হিসেবেও ছিলেন অপেশাদার। সেই রো এখন ওয়েলসের হয়ে নারী ইউরোর মঞ্চে। যুক্তরাজ্যের অংশ হয়ে থাকা ওয়েলস এবারই প্রথম মেয়েদের ফুটবলের শীর্ষ মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় খেলছে।
ইংলিশ ক্লাব সাউদাম্পটনে খেলা রো ওয়েলসের খেলা শুরু করেন ২০১৫ সালে। তবে জাতীয় দলে অভিষেকের সময়ও তিনি ছিলেন আধা পেশাদার। কোনো ক্লাবের সঙ্গে নিয়মিত চুক্তিতে ছিলেন না। ওই সময় সোয়ানসি কারাগারে চাকরিও করতেন জানিয়ে রো বিবিসিকে বলেন, ‘আমি বেশ কটি চাকরি করেছি। কলেজ থেকেই বেরিয়েই কর্মক্ষেত্রে। আমি “বি অ্যান্ড এম”-এ কাজ করেছি, তারপর কারাগারের কাজে যোগ দিই।’
ওয়েলস জাতীয় দলে এখন যাঁরা খেলছেন, তাঁদের বেশির ভাগই পেশাদার ফুটবলার হিসেবেই উঠে এসেছেন। নিজের ও তাঁদের তুলনা টেনে রো বলেন, ‘আমাদের দলে বিভিন্ন প্রজন্মের খেলোয়াড় আছে, যাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। এমনও আছে, যারা কলেজে গিয়ে সেখান থেকে পূর্ণকালীন ফুটবলার হয়েছে। আর আমার যাত্রা সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। তবে এটিই আমাকে আজকের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে।’
কারাগারের কাজ ছেড়ে দেওয়ার পরও দেশের হয়ে ইউরোয় পৌঁছানোর পথটা রোর জন্য সহজ ছিল না। ওয়েলস সরকারের অধীন ব্যবসায় প্রশাসনে শিক্ষানবিশ থাকাকালীন রো ফুটবল ক্লাব রিডিংয়ে আধা পেশাদার হওয়ার সুযোগ পান। ওই সময় সপ্তাহে তিন দিন রোকে সারা দিনের কাজ শেষে সোয়ানসি থেকে বার্কশায়ারের রিডিং পর্যন্ত ৩০০ মাইল ভ্রমণ করতে হতো। এমনও হতো, মধ্যরাতে বাড়ি ফিরে পরনের পোশাক না খুলেই ক্লান্তি ঘুমিয়ে যেতেন, ‘এক বছর ধরে এমনই রুটিন ছিল। ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। সৌভাগ্যবশত আমরা সেবার লিগ জিতে সুপার লিগে জায়গা করে নিই।’
রিডিংয়ে আট বছর কাটিয়ে রেঞ্জার্স হয়ে ২০২৪ সাল থেকে সাউদাম্পটনে খেলছেন রো। তবে পেশাদার ফুটবলার হয়ে উঠলেও ওয়েলসকে ইউরোপের মঞ্চে তুলে ধরার তাড়না রয়ে গিয়েছিল এই ফরোয়ার্ডের। আর সেটিই বাস্তব হয়ে ধরা দিচ্ছে শনিবার নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়েলসের ঐতিহাসিক প্রথম ম্যাচ দিয়ে।
সুইজারল্যান্ডে পৌঁছার পর কেমন রোমাঞ্চিত জানিয়ে রো বলেন, ‘যখন আমরা এখানে পৌঁছালাম এবং ইউরো লোগো–সংবলিত বাসটি দেখলাম, দৃশ্যটা আমার মনে গেঁথে গেল। এটা এমন এক অনুভূতি, যা এখন হজম করে ফেলতে হবে, বেশি আবেগপ্রবণ হওয়া যাবে না। কারণ, এটা সত্যিই বাস্তব মনে হচ্ছিল।’