দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। ভোটের আগে লুটের অস্ত্র নিয়ে মাথাব্যথা সরকারের - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

.jpg

Saturday, 23 August 2025

ভোটের আগে লুটের অস্ত্র নিয়ে মাথাব্যথা সরকারের


রাজনীতি প্রতিবেদক
গত বছর ৫ আগস্টের পর পুলিশের লুণ্ঠিত বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি। সবশেষ হিসাব বলছে, এখনো এক হাজার ৩৬৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুই লাখ ৫৭ হাজার ৭২০ রাউন্ড গোলাবারুদ বেহাত অবস্থায় রয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এসব অস্ত্র ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।



অস্ত্র উদ্ধারে সহায়তা করতে তথ্যদাতাদের পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। যদিও তা এখনো কার্যকর ফল বয়ে আনেনি। গত এক বছরে ডেভিল হান্টসহ একাধিক বিশেষ অভিযান চালিয়েছে সরকার। এখনো অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। তবুও লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদের বড় অংশ রয়ে গেছে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে।



অপরাধ বিশ্লেষক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এ অস্ত্র উদ্ধারে ব্যর্থতা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ঝুঁকি তৈরি করবে। প্রভাবশালীরা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাদের হয়ে সন্ত্রাসীরা নাশকতা চালাতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে সংঘাত ও সহিংসতা। এতে ভোটের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।


আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস সামনে রেখে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা নির্বাচনে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চাপের মধ্যে রাখতে পারে। এসব অস্ত্র আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।



একাধিক হাতবদল খোয়া যাওয়া অস্ত্রের
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এসব অস্ত্র কয়েকবার হাত বদল হয়েছে। ফলে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারে। চলে গেছে অপরাধীদের হাতে। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। যদিও উদ্ধার করা কঠিন।



উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া অস্ত্রের বড় একটি অংশ
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, গত বছর ৫ আগস্টের পর দেশের ৬৬৪টি থানার মধ্যে ৪৬০ থানা ও ১১৪টি ফাঁড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গণভবন থেকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৫ হাজার ৭৫৩টি অস্ত্র লুট হয়। এছাড়া ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২টি গোলাবারুদ নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৯০টি। এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৩৬৩টি। এছাড়া গোলাবারুদের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ১১২টি। এখনো উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭২০টি।



পুলিশ জানায়, লুট হওয়া ১ হাজার ১০৬টি চায়না রাইফেলের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৯৯১টি। আরেকটি মডেলের ১২টি রাইফেলের মধ্যে ১১টি উদ্ধার হলেও একটি উদ্ধার হয়নি। এসএমজি-(টি ৫৬) ২৫১টির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ২২১টি। এলএমজি (টি-৫৬) ৩৪টির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৩১টি। পিস্তল (টি-৫৪) ৫৩৯টির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৩২৫টি। ৯ ইনটু ১৯ মিমি ১ হাজার ৯২টি পিস্তলের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৬৩০টি। ৯ ইনটু ১৯ এসএমজি/এসএমটি ৩৩টির মধ্যে সবকটি উদ্ধার হয়েছে। ১২ বোরের শর্টগান ২ হাজার ৭৯টির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ১৬৭৫টি। ৩৮ মিমি গ্যাসগান ৫৮৯টির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪৫৮টি। ৩৮ মিমি টিয়ারগ্যাস লাঞ্চার ১৫টির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৮টি। এখনো উদ্ধার হয়নি ৭টি। ২৬ মিমি পিস্তল ৩টির মধ্যে একটি উদ্ধার হয়েছে।


গোলাবারুদের মধ্যে বিভিন্ন বোরের ৬ লাখ ১২ হাজার ৯৮২টির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ১১২টি। এখনো উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭২০টি। বিভিন্ন ধরনের টিয়ারগ্যাস শেলের ৩১ হাজার ২১২টির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ১৯ হাজার ৮২১টি, বিভিন্ন ধরনের টিয়ারগ্যাস গ্রেনেড ১ হাজার ৪৮৬টির মধ্যে ১ হাজার ১৯৫টি, সাউন্ড গ্রেনেড ৪ হাজার ৭৪৬টির মধ্যে ৩ হাজার ৫৭৪টি, কালার স্মোক গ্রেনেড ২৭৩টির মধ্যে ২৩২টি, সেভেন মাল্টিপল ব্যাং স্টান গ্রেনেড ৫৫টির মধ্যে ৩৩টি, ফ্ল্যাশ ব্যাং/৬ গ্রেনেড ৯০০টির মধ্যে ৬১৬টি ও হ্যান্ড হেল্ড টিয়ারগ্যাস স্প্রে ১৭৮টির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে মাত্র ৬২টি।

ভোটের আগে লুটের অস্ত্র নিয়ে মাথাব্যথা

হত্যা-চাঁদাবাজি চলছেই
চলতি বছরের ২৫ মে রাত ১১টায় রাজধানীর বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সাধন। এসময় দুই তরুণ তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। এর দুদিন পর ২৭ মে মিরপুরে গুলি করে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর ২১ লাখ টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ৬ আগস্ট মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে গুলিতে মারা যান শাহেন শাহ নামে এক তরুণ।

শুধু ঢাকায় নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে। গত ২০ আগস্ট দাবি করা ৫০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে একদল অস্ত্রধারী যুবক। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে হামলার বিষয়টি ধরা পড়ে। এসব ঘটনায় কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে নিশ্চিত না হলেও লুট হওয়া অস্ত্র ব্যবহারের শঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।


অপরাধীদের হাতে লুট হওয়া অস্ত্র
ঢাকা ও চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক কয়েকটি খুন ও বড় ছিনতাইয়ের ঘটনায় লুট হওয়া অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের তথ্য রয়েছে। অস্ত্র কার হাতে গেছে, কোথায় পাচার হচ্ছে—এসব তথ্য জানার পরও যথাযথ অভিযান চালানো হয়নি বলে অভিযোগ। এতে অপরাধীদের মনোবল বেড়েছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতাও বাড়ছে।


নির্বাচন ঘিরে বাড়ে অস্ত্রের চাহিদা
প্রতিটি নির্বাচন ঘিরে অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা বাড়ে। স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তার, ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর কাজে অস্ত্রের ব্যবহার নতুন নয়। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এবারও নির্বাচনের আগে নতুন করে ‘অস্ত্রের বাজার’ সচল হওয়ার আভাস মিলছে। এর সঙ্গে লুট হওয়া অস্ত্রও মিশে গেলে সহিংসতার ঝুঁকি বহুগুণে বাড়বে।

গত ১০ আগস্ট স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ৫ আগস্টের আগে-পরে যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে, তা উদ্ধারে সরকার শিগগির বিজ্ঞপ্তি দেবে। অস্ত্র উদ্ধারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে সরকার পুরস্কার দেবে।

সরকারের চেষ্টার পরও অস্ত্র উদ্ধার যথাযথ হয়নি
অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘সরকারের চেষ্টার পরও অস্ত্র উদ্ধার যথাযথ হয়নি। লুট হওয়া অস্ত্রগুলো সমাজের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকি। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ অস্ত্র নির্বাচনে ব্যবহার হওয়ার অনেক আশঙ্কা রয়েছে।’


তিনি বলেন, ‘এছাড়া আমরা দেখতে পেয়েছি চাঁদাবাজি, ছিনতাই, দখল বাণিজ্যের হাতবদল হয়েছে। এসব অস্ত্র অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে। পুলিশকে দ্রুতই চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে এসব অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে, না হলে সমাজের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে।’


অস্ত্র উদ্ধারে বেগ পেতে হচ্ছে
লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাব-২ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ নাজমুল্লাহেল ওয়াদুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক বছরে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে পুলিশ বাহিনীকে। গত বছরের ৫ আগস্ট থানা ও স্টেশনগুলো ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলেন পুলিশ সদস্যরা। লুট হয়েছিল তাদের আগ্নেয়াস্ত্র। লুট হওয়া অস্ত্রের একটা অংশ উদ্ধার হলেও এখনো অনেক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি। এসব অস্ত্র কয়েকবার হাতবদল হয়েছে। ফলে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারে।’


ভোটের আগে লুটের অস্ত্র নিয়ে মাথাব্যথা
নির্বাচন সামনে রেখে অনেকেই পরিস্থিতি খারাপের চেষ্টা করছে, তবে সেটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। যদিও উদ্ধার করা কঠিন।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘লুট হওয়া অস্ত্র আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। এসব অস্ত্র পড়ে থাকে না, একাধিক হাত ইতোমধ্যে বদল হয়েছে। সন্ত্রাসীদের কাছে এতদিন পৌঁছে গেছে। এখনো সময় আছে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা জরুরি।’


পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এএইচএম শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলমান। দেশব্যাপী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে লুট হওয়া অনেক অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি অস্ত্রগুলো উদ্ধারেও কাজ করছে পুলিশসহ যৌথ বাহিনী।’