অর্থনীতি প্রতিবেদক :
দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্বমানের লিফট তৈরি শুরু করেছে প্রাণ-আরএফএল। নিজস্ব কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ প্রকৌশলীদের সহায়তায় এ লিফট উৎপাদন করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশি লিফট রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। এতদিন লিফটের বাজারের সিংহভাগই বিদেশি আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। এই বাজারকে দেশীয় উৎপাদনের পথে নিয়ে এসেছে প্রাণের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘প্রোপার্টি লিফটস’।
শনিবার (২৩ আগস্ট) প্রতিষ্ঠানটির নরসিংদী ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ঘুরে দেখা যায়, কারখানাটিতে সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বমানের লিফট তৈরি করছে প্রাণ-আরএফএল। যেখানে ইউরোপীয় ও চায়না প্রযুক্তিতে তৈরি করা হচ্ছে লিফট। ২৬০ ইউনিটের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কারখানায় বর্তমানে গড়ে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত উৎপাদন করা হচ্ছে। কারখানাটি প্রতিষ্ঠায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে দেশের এই বহুজাতিক কোম্পানিটি।
১৯৮৮ সাল থেকে লিফট আমদানি করে ব্যবসা শুরু করলেও প্রোপার্টি লিফটস ২০১৮ সালে তাদের নিজস্ব কারখানায় সীমিত আকারে উৎপাদন শুরু করে। প্রথম দিকে বিদেশ থেকে কম্পোনেন্ট আমদানি করা হলেও, ধীরে ধীরে কারখানায় বিনিয়োগ বাড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে তারা নিজেরাই লিফটে ব্যবহৃত ৭০-৮০ শতাংশ কম্পোনেন্ট তৈরি করছে, যা ভ্যালু হিসেবে ৫০ শতাংশ যন্ত্রাংশের সমান।
বর্তমানে এ কারখানায় প্রতি মাসে ২৬০ ইউনিট লিফট তৈরি করতে সক্ষম। কারখানার পাশাপাশি মান পরীক্ষার জন্য উন্নতমানের ল্যাব গড়ে তুলেছে প্রোপার্টি লিফটস। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৬ সালের মধ্যে লিফট রপ্তানির পরিকল্পনা করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে চায় বিশ্বের অন্যান্য গ্লোবাল ব্র্যান্ডের সঙ্গে। এজন্য সরকারের নীতিগত সহায়তা দরকার বলেও জানিয়েছেন তারা।
আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল বলেন, ‘এ দেশে ক্রমবর্ধমান লিফটের চাহিদা বাড়ছে। আমদানি করা লিফটের দাম যেমন বেশি, তেমনি পুরোনো ভবনে কাস্টমাইজড লিফট বসানোর সুযোগও সীমিত ছিল। এই বাস্তবতায় আমরা দেশে লিফট তৈরির কারখানা স্থাপন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে এ কারখানায় আমরা ৭০-৮০ শতাংশ কম্পোনেন্ট তৈরি করছি। ভ্যালু হিসেবে ৫০ শতাংশ যন্ত্রাংশ তৈরি করছি। প্রতি বছর এ খাতে ১০-১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করছে।’
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বর্তমানে পায়রা থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, কোরিয়ান ইপিজেড, বে-ইকোনমিক জোন, ইউএন আইএলও অফিস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিটেড, পিডিএল পদ্মা রিসোর্ট, চট্টগ্রাম আর্মি মেডিকেল কলেজসহ অসংখ্য জায়গায় তাদের লিফট ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে মাসে প্রায় ১২০টি লিফট উৎপাদন করতে সক্ষম প্রতিষ্ঠানটি, যা কয়েক মাসের মধ্যে পুরোপুরি সক্ষমতায় চলে যাবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রোপার্টি লিফটস ছাড়া দেশে বর্তমানে লিফট তৈরি করছে ওয়ালটন। দেশের বাজারে প্যাসেঞ্জার লিফট, কার্গো লিফট, হাসপাতাল লিফট, হোম লিফট, ক্যাপসুল লিফট, হাইড্রোলিক লিফট ও সিজার লিফট পাওয়া যায়। ধারণক্ষমতা ও ফিচারের ওপর ভিত্তি করে এসব লিফটের দাম ১৫ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। তবে ব্যবহার হওয়া এসব লিফটের প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ এখনো আমদানিনির্ভর।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে লিফটের বাজার ১৩শ কোটি টাকার, যেখানে বছরে গড়ে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার ইউনিট লিফট বিক্রি হয়। বর্তমানে লিফটের চাহিদা মূলত ঢাকাসহ বড় বড় নগরকেন্দ্রিক। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে লিফটের চাহিদা ৪৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২০ শতাংশ। দাম কমলে এবং দেশে ব্যাপকভাবে উৎপাদন হলে দেশের সর্বত্র লিফটের চাহিদা তৈরি হবে বলে মনে করছেন তারা।
প্রোপার্টি লিফটস বিশ্বসেরা লিফট ব্র্যান্ড কোনে, ম্যাকপুয়ার্সা ও এসআরএইচের বাংলাদেশে একমাত্র পরিবেশক হিসেবেও কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে এ খাতে ৪০ শতাংশের বেশি মূল্য সংযোজন করছে। মৌলিক কাঁচামাল আমদানি হলেও ফ্যাব্রিকেশন ও অন্যান্য কাজের ৮০ শতাংশ দেশেই সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
বর্তমানে প্রোপার্টি লিফটসের কারখানায় ২১০ জন কর্মী কাজ করছেন এবং ইনস্টলেশন ও সার্ভিসিংয়ের জন্য এক হাজারের বেশি মানুষ যুক্ত। তবে সারা দেশে নিরাপদ লিফট স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও পাঁচ হাজার কর্মী নিয়োগ করার পরিকল্পনাও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।’