সুজা তালুকদার চট্টগ্রাম থেকে :
আজ জাতীয় ভোটার দিবস। আজ নগরীর সার্কিট হাউজে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন ‘ভোটার হব নিয়ম মেনে, ভোট দিব যোগ্যজনে’ প্রতিপাদ্য রেখে নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে ৫ম ভোটার দিবস পালন করেছে। সকাল ১০টায় সার্কিট হাউজ চত্বর থেকে বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য র্যালির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন কার্যক্রমের শুরু করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হেসেন প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, জাতীয় ভোটার দিবস পালন করছি দেশের মানুষকে সচেতন করার জন্য। এই ভোটাধিকার আদায়ের জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষরা কত কষ্ট করেছে সেটা নতুন প্রজন্ম জানে না। একটা সময় সাধারণ মানুষের কোন ভোটাধিকারও ছিলো না। মোঘল আমল, বৃটিশদের শাসন আমল পরে আয়ুব খানের পতন শেষে ইয়াহিয় খান সামরিক শাসনের মধ্যে একটা জাতীয় নির্বাচনের ঘোষনা দিয়েছিল। তিনি লিগেল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার নামে একটা ধারা চালু করেন। তখন সে অর্ডারে উল্লিখিত বিষয়গুলো পড়ে কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সাহস করেনি। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সে নির্বাচনে শর্ত দিয়ে বলেছিলেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন সংখ্যা বন্টন করতে হবে এবং এক ব্যক্তির ১ ভোট নিশ্চিত করতে হবে। আজকে এই যে ভোটাধিকার সেটা আদায় করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সুতরাং আজকের জাতীয় ভোটার দিবস পূর্বপুরুষদের অনেক কষ্টের ফসল।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান এর সভাপতিত্বে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এম এ মাসুদ, জেলাপ্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ প্রেস ও ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
র্যালি শেষে আলোচনা সাভায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান উপস্থিত সকলকে ভোটার হালনাগাদের নিয়মাবলী সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, সারাদেশে ২০ মে ২০২২ হতে ৪টি ধাবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ সম্পন্ন হয়েছে। যাদের জন্ম ১ জানুয়ারি ২০০৭ বা তার পূর্বে এবং ইতোপূর্বে যারা ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হননি, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মোট ৩ বছরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তবে, যাদের জন্ম ১ জানুযারি, ২০০৫ বা তার পূর্বে, তাঁরা ২ জানুয়ারি ২০২৩ সালে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। যাদের জন্ম ১ জানুয়ারি ২০০৬ বা তার পূর্বে তাঁরা ২ জানুয়ারি ২০২৪ সালের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। এছাড়াও যাদের জন্ম ১ জানুয়ারি ২০০৭ বা তার পূর্বে তাঁরা ২ জানুয়ারি ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। উল্লেখ্য এবারের হালনাগাদ কার্যক্রমে হিজড়াদের হিজড়া হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়েছে। এসময় তিনি সকলকে আশ^স্থ করে বলেন, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে দেশের নাগরিকদের হাতে স্মার্ট আইডি কার্ড তুলে দিতে যে কোন প্রকার সহযোগীতা করতে আমরা প্রস্তুত।
বক্তারা বলেন, আমাদের চেতনা কি, নাগরিক হিসেবে আমরা নিজেদের কোথায় নিতে চাই, সেটা নির্ভর করে নির্বাচনে আমরা কাকে নির্বাচন করছি। গণতান্ত্রীক নিয়মে একজন জেলাপ্রশাসাক কিংবা রাস্তার পাশের পান বিক্রেতার ভোটের মূল্য সমান। সুতরাং আমরা নিজেরা সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সকল শ্রেণিপেশার নাগরিকদের সচেতন করতে হবে। যেন আমরা সকলে মিলে মনের খুঁশিমত, একজন যোগ্য মানুষকেই ভোট দিয়ে নির্বাচন করি।
প্রতিদিনই এনআইডির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অনেকে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে আসেন সেবা নিতে। যত সহজ সংশোধনই হোক না কেন, অন্তত ৬ মাসের আগে করা যায় না এ কাজ।
সেবা নিতে আসা অনন নামে এক শিক্ষার্থী দুরন্তকে বলেন, ভোটার হয়েছি বছর তিনেক আগে। এখনও এনআইডি কার্ড হাতে পাইনি। কয়েকবার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ঘুরে গেছি। আজ আসেন-কাল আসেন বলে প্রায় ৬ মাস পার হলো। আকবর আলী নামে এক প্রবাসী নির্বাচন কমিশনে এসেছেন ভোটার হতে। কার্ড নিতে যতটা ভোগান্তি ততটাই ভোগান্তি যেন ভোটার হতে। তিনি বলেন, ভোটার হতে এখন পর্যন্ত চার বার আসা হয়েছে। কিন্তু একবারও সুযোগ পাইনি। একদিন কর্মকর্তা থাকেন না তো অন্যদিন কর্মচারী থাকেন না। এছাড়া এ কাজ, সে কাজ বলে বলে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে দিনের পর দিন। এভাবেই চলছে নির্বাচন কমিশন।
তিনি আরও জানান, আমরা নির্বাচন কমিশনে এলে মনে হয় ঠেকায় পড়ে এসেছি। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, শুধু আঞ্চলিক কার্যালয় নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ভোগান্তি আরও বেশি। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৬ উপজেলা পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়ায় ভোটার হতে গিয়ে শত বাধার মুখে ভুক্তভোগীরা।
কার্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পর থেকে নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে চায় না দায়িত্বরতরা। এ নিয়ে দুদকের একাধিক মামলা থাকায় এবং কেলেঙ্কারির ভয়ে কাজ এড়িয়ে চলতে চান অনেকে। এমনকি ঝুঁকি এড়াতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে এড়িয়ে যান। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়ছে।
ভোটার হতে ভোগান্তির বিষয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, অনলাইনে আবেদনের বিষয়ে সাধারণ মানুষ এখনও পারদর্শী নয়। তারা আবেদন করার পর আমরা সেটা গ্রহণ করি। তাদের মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু তারা সময়মতো পরবর্তী প্রক্রিয়া শেষ করতে আসেন না। তাই আবেদন প্রক্রিয়াধীন থেকে যায়। তাছাড়া তারা যে আবেদন করেছে, তার স্বপক্ষে বেশকিছু কাগজপত্র দরকার হয়। যদি তারা তা না দেয়, আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো কি করে?
আনিসুর রহমান নামে এক প্রবাসী নির্বাচন কমিশনে এসেছেন ভোটার হতে। কার্ড নিতে যতটা ভোগান্তি ততটাই ভোগান্তি যেন ভোটার হতে। তিনি বলেন, ভোটার হতে এখন পর্যন্ত চার বার আসা হয়েছে। কিন্তু একবারও সুযোগ পাইনি। একদিন কর্মকর্তা থাকেন না তো অন্যদিন কর্মচারী থাকেন না। এছাড়া এ কাজ, সে কাজ বলে বলে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে দিনের পর দিন। এভাবেই চলছে নির্বাচন কমিশন।

