দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। দ্রব্য মূল্যের বাজারে আগুন - Durontobd

সংবাদ শিরোনাম

.jpg

Saturday, May 13, 2023

দ্রব্য মূল্যের বাজারে আগুন


অর্থনীতি প্রতিবেদক :
দুই দিন আগে চিনির দাম কেজিতে একলাফে ১৬ টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গরুর মাংস, দেশি ও ব্রয়লার মুরগি এবং ডিমের মূল্য। বেড়েছে ধরনের মাছের দামও।
বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে ক্রেতারা ঘুরেন। আর অসহায়ের মত বিভিন্ন পণ্যের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। কিভাবে সংসার সামাল দেবেন ভাবেন বাজারে গিয়ে। কারণ পণ্যের দাম বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে আয় বাড়েনি। সংসার খরচ সামাল দেবেন কিভাবে এই দুশ্চিন্তা অনেক পরিবার কর্তার।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে প্রতিকেজি গরুর মাংস গত এক বছর আগেও ছিল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকার মতো। এক বছরে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে গরুর মাংস বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। কোনো কোনো বাজারে যা ৮০০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা যায়।


সরকারি হিসেবে, খোলা আটা, প্যাকেট ও খোলা ময়দা, ঘোলা এবং বোতল জাত সয়াবিন তেল, খোলা পাম অয়েল, ছোট মসুর ডাল, আলু, দেশী ও আমদানি পিয়াজ, দেশি ও আমদানি আদা, আমদানি রসুন, জিরা, ধনে, গরু, দেশি মুরগি, ডিমের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে দেশি রসুন, ব্রয়লার মুরগির মূল্য হ্রাস পেয়েছে।


বৃহস্পতিবার (১১ই মে) খোলা চিনির দাম কেজিপ্রতি ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আগে থেকে অস্থির চিনির বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়েছে। ১৪০ টাকার কম কোথাও খোলা চিনি মিলছে না। আর বাজারে প্যাকেটজাত চিনিতো কয়েক সপ্তাহ ধরেই উধাও।


ঠিক এক সপ্তাহ আগেই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল ১৮৭ টাকা। তবে নতুন দামের তেল এখনো আসেনি সবখানে। কিন্তু পুরোনো দাম লেখা মোড়কের বোতলও বাজারে বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে।


টিসিবির হিসেবে, বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি  ১৮৫ থেকে ২১৫ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও এ দামে বিক্রি হচ্ছে না। বর্তমানে বাজারে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজিতে। এক বছরের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২২ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়।  


খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। দেশি মুরগির ডিম প্রতি হালি ৭৫ টাকা। এবং হাঁসের ডিমের হালি ৭০ টাকা।


শুক্রবার (১২ই মে) রাজধানীর রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর, শেখেরটেক সহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।


অন্যদিকে খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। এক বছরে পণ্যটির ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ দাম বেড়েছে। যা এক বছর আগেও বিক্রি হতো ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকায়।  
মাংসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে নানা যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন বিক্রেতারা। বলছেন, বর্তমানে সবকিছুর দামই বেড়েছে। গোখাদ্য ও পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম। ফলে খরচও আগের থেকে অনেক বেড়েছে। তাই মাংসের দামও বাড়তি।  


বাজারে, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় প্রতিকেজি গরুর কলিজা বিক্রি হচ্ছে একই দামে। শুধু মাত্র গরুর ফেফসা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। 


মুদি দোকানে লিটারে ১২ টাকা বাড়ানোর খবরের সঙ্গে সঙ্গে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারাও সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও পুরোনো তেল লিটারে ১২ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে না, লিটারপ্রতি ৩-৮ টাকা পর্যন্ত বেশি নিতে দেখা গেছে।


বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মোড়কে দাম ১৮৭ টাকা লেখা, অথচ সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। ৩৭৪ টাকার দুই লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৩৯০ টাকায় এবং ৯০৬ টাকার ৫ লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৯১৫-৯২০ টাকায়।


এছাড়া আটা, ময়দা ও ডালের দাম নতুন করে না বাড়লেও সেগুলো বেশ আগেই বেড়ে বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।


মসলার বাজারে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম। ঈদের পর থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৩০-৩৫ টাকা বেড়ে এখন ৭০ টাকায় ঠেকেছে। যা দুদিন আগেও ৬০-৬৫ টাকা ছিল। এছাড়া প্রতি কেজি আদা কিনতে গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকার কিছু কম বা বেশি। যা গত বছর একই সময় ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে এখন আদার দাম তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। আর শেষ ঈদের পর থেকে বেড়েছে কেজিতে মানভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে আমদানি করা চীনা রসুনের কেজিপ্রতি দাম ২০ টাকা ৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা।


মুদিপণ্য আর মসলাই নয়, সবজি ও মাছের বাজারও পুড়ছে বাড়তি দামের আগুনে। বাজারে এখন আলু ছাড়া অন্য কোনো সবজির কেজি ৬০ টাকার কমে মিলছে না। পেঁপে ও মুলার মতো তুলনামূলক কম চাহিদার সবজির কেজিও উঠেছে ৮০ টাকায়। যা নিম্নআয়ের মানুষের জন্য খুবই অস্বাভাবিক। এতদিন কমের মধ্যে থাকলেও আলুর দাম গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। মোটা দাগে দারুণ অস্বস্তি এখন সবজির বাজারে।


বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত দু-তিন দিনের ব্যবধানে নতুন করে সবজির দাম আরও বেড়েছে। তাতে এখন বাজারে প্রতি কেজি বেগুন, পটল, মুলা, বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, ঝিঙে, ধুন্দল, করলা, কাঁকরোল, বরবটি, ভেন্ডি, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকা, সজনে ১২০-১৪০ টাকায়।


মোহাম্মদপুর শেখেরটেক কাঁচাবাজারে গরুর মাংস বিক্রেতা আলিফ মিয়া বলেন, মাংসের বেচা-কিনি কমে নাই। বাঙালির মতন ভালো খাওইয়া পৃথিবীতে নাই। তবে গরিব ক্রেতা যারা আছে তারা কেউ মাংস খেতেই পারছে না। গরুর মাংসের দোকানের সামনে আপনি কোনো গরীব মানুষ দেখতে পাবেন না। গরুর মাংসের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। প্রতিটা গরুর দামে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতন বেড়েছে। ফলে আমরা এ দামে মাংস বিক্রি করেও পোষাতে পারি না। পাশাপাশি যারা কিনতেছে তাদেরও খুব চাপ হয়ে যাচ্ছে।


তিনি বলেন, ভারত থেকে যদি গরু মাংস প্রসেস করে না এনে সরাসরি গরু নিয়ে দেশের বাজারে বিক্রি করা হয় তাহলে গরুর মাংসের দাম কমতে পারে। বর্তমানে বাজারে ১ কেজি ভুষির দাম ৭৫ টাকা। আর একটা গরু দিনে সর্বনিম্ন চার থেকে পাঁচ কেজি ভুসি খায়। প্রতিদিনে একটা গরুর পিছে খরচ ৫০০ টাকা, সে হিসেবে মাসে ১৫০০ টাকা খরচ। আর একটা গরু খাবার উপযোগী হইতে দুই বছর সময় লাগে। তাহলে চিন্তা করেন সেই গরুর দাম কত গিয়ে পড়বে।  


মুরগির বাজার ঘুরে দেখা যায়, কিছুদিন আগে ব্রয়লার মুরগির দাম কমে হয়েছিল ১৯০ টাকা কেজি। সেখানে কেজিতে ২০- ৩০ টাকার মতো বেড়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। পাকিস্তানি ছোট সাইজের কক মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়। আর বড় সাইজের কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা। লাল মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫০ টাকায়। 

 
মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজারের ব্রয়লারের মুরগি ব্যবসায়ী আলিম আলী বলেন, আমরা যারা মুরগি ব্যবসায় আছি আড়তে গেলে আড়তদাররা আমাদের কাস্টমারই মনে করে না। তারা বলে যে দাম আছে নিলে নেন নাইলে চলে যান।  আমাদের যদি কাস্টমার ধরে রাখতে হলে তাদের থেকে মাল আনতেই হবে। আমরাও নিরুপায়।


সেই বাজারেই ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী নুরুজ্জামান খান বলেন, এক সপ্তাহ পরে বাজারে আসলাম এসে দেখি সবকিছুই বাড়তি দাম। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকার মতন বাড়ছে। সরকারি উচিত এ সকল পণ্যের দামের ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো। নাহলে আমরা সাধারণ ক্রেতা আছি তাদের খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  


মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ২২০ টাকা কেজির কমে তেলাপিয়া বা পাঙ্গাশ মাছও কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। চাষের রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকায়। আর দেশি উন্মুক্ত জলাশয়ের শিং, টেংরা, বোয়াল খেতে গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা পর্যন্ত। দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের রুই মাছের দাম প্রতি কেজি ৩০০-৩৫০ টাকায়। শোল মাছ প্রতিকেজি ৬৫০ টাকা। শিংমাছ, বাইলা মাছ প্রতিকেজি ৬০০ টাকায়। আকার ভেদে প্রতিকেজি চিংড়ি ৬০০-৭৫০ টাকা।