Wednesday, 28 February 2024

চলমান এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগেই অভিভাবকদের মোবাইলে হুবহু উত্তরপত্র


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর আগে হুবহু উত্তরপত্র পাওয়ার ঘটনায় নড়েচরে বসেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় নাগেশ্বরী নিউ প্রতিশ্রুতি নামক বেসরকারি স্কুলের পরিচালক ও এক শিক্ষককে নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এছাড়াও, কেন্দ্রের একটি কক্ষে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।


মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এ ঘটনা ঘটে। নাগেশ্বরী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ ও নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রূপ কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পরীক্ষা শুরুর আগে পাওয়া হুবহু সেই উত্তরপত্রগুলো এই প্রতিবেদকের কাছেও সংগৃহীত রয়েছে।


জানা গেছে, মঙ্গলবার এসএসসির ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা শুরুর আগে একটি উত্তরপত্রের ছবি অনলাইন মাধ্যমে কিছু অভিভাবকের মোবাইলে আসে। ছবিগুলো আসে সাংবাদিকদের কাছেও। পরে পাওয়া সেসব ছবি নিয়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা।


ছবিটিতে দেখা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারী সকাল ৯টা ৫৩ মিনিটে মঞ্জুর নামের কেউ একজন ‘গ্যালাক্সি এটুফোর’ মডেলের একটি ফোন থেকে ছবিগুলো তুলেছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঞ্জুর নামে নাগেশ্বরী উপজেলার নিউ প্রতিশ্রুতি স্কুলে একজন শিক্ষক রয়েছেন।


প্রসঙ্গত, নিউ প্রতিশ্রুতি স্কুল মূলত একটি কোচিং সেন্টার। আগে থেকেই এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উত্তরপত্র সরবরাহের অভিযোগ ছিল। পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা, কচাকাটা কলেজের ড্যমেনেস্টটর শহিদুল ইসলাম ও শিক্ষক মঞ্জুরকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।


নাগেশ্বরী থানার ওসি রূপ কুমার সরকার বলেন, ছড়িয়ে পড়া উত্তরপত্রটিতে দেখা গেছে, ছবিটি মন্জুর নামে কারও ফোন থেকে তোলা। এ কারণে মঞ্জুরকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। আপাতত দেখা গেছে, ছবি তোলা ফোন এটি নয়। তারপরেও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আসল ঘটনা বোঝা যাবে।


এ বিষয়ে নিউ প্রতিশ্রুতি কোচিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা কচাকাটা কলেজের ড্যমেনেস্টটর শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে স্যারেরা ডেকেছে। আমরা এসেছি। অনেক কিছু জানতে চেয়েছে, বলেছি। কেন ডেকেছে জানি না।


একই কথা বলেছেন নিউ প্রতিশ্রুতির শিক্ষক মঞ্জুর। তিনি বলেন, আমি কিছুই জানিনা। আমাকে ডেকে যা যা জিজ্ঞাসা করেছে সব বলেছি।


এদিকে, এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক অভিভাবক। কিন্তু গণমাধ্যমে কথা বললে তাদের সন্তানদের পরীক্ষায় প্রভাব পরতে পারে তাই তারা নাম প্রকাশ করতে রাজী হননি।


তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রের ভিতরে কিছু পরীক্ষার্থীকে বেছে বেছে এসব উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়। কিছু শিক্ষক এসে এসব দিয়ে যান। এতে অন্য শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয়। শুরু থেকে এভাবেই চলছে।


আব্দুল কাদের নামে একজন অভিভাবক বলেন, আমার নাতনিকে নিয়ে যাই পরীক্ষা হলে। বাইরে দেখি মাস্টাররাও নকল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। নাতনি প্রতিদিন বের হয়ে বলে, ভেতরে অনেক স্যারে নকল নিয়ে যায়। একই কথা বলেন অভিভাবক জহির উদ্দিন ও শহিদুল ইসলাম।


তবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব মোশারফ হোসেন এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, আজকেই প্রথম ‘স্মার্ট ফোন নিয়ে প্রবেশ করায় কেন্দ্রের ৭ নং কক্ষের পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা আব্দুস সাফি নামে এক শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তার ফোনে পরীক্ষা সংক্রান্ত আপত্তিকর কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। ফোনটি জব্দ করা হয়েছে।


নাগেশ্বরী ‍উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই রকেট বলেন, পরীক্ষা শুরুর পর থেকে উত্তরপত্র ছড়াছড়ির বিষয়টি আমরাও শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু কোথা থেকে হচ্ছে এটা বলা যাচ্ছে না। এটা নাগেশ্বরীর বাইরে থেকেও হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে সজাগ আছি।