Tuesday, 5 March 2024

চট্টগ্রামে ৯৭ শতাংশ বহুতল ভবন অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
চট্টগ্রামে ৯৭ শতাংশ বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি রয়েছে। এ সব ভবনের ৯৩ শতাংশেরই অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনাপত্তিপত্র নেই। আর ৯৭ শতাংশ ভবনে এ নিয়ে কোনো ছাড়পত্রই নেই। সম্প্রতি বেসরকারি এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ অবস্থায় জেলায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পদক্ষেপ নিয়ে এমন পরিসংখ্যানে তদারকির দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর ভূমিকা এখন প্রশ্নের মুখোমুখি বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।


এ ছাড়া অনুমোদিত, অনুমোদনহীন কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ কোনো রেস্টুরেন্টের তালিকা নেই কোনো সংস্থার কাছেই। এ অবস্থায় নগরীকে অগ্নিঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে দ্রুত ফায়ার সেফটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।  


সম্প্রতি বেসরকারি এক জরিপে জানা যায়, প্রায় ৭০ লাখ মানুষের বসবাস বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে। যেখানে প্রতিনিয়ত মানুষের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বহুতল ভবনের সংখ্যাও। আর এসব অধিকাংশ বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে নেই পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা। যদিও ভবনের কাজ শুরুর আগে ফায়ার সার্ভিস থেকে অনাপত্তিপত্র নেয়ার বিধান আছে, কিন্তু ৯৩ শতাংশ ভবনের সেই অনাপত্তিপত্র নেই। 


এ ছাড়া ভবন নির্মাণ শেষে ফায়ার সার্ভিস থেকে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে ছাড়পত্র নেয়ার বিধান থাকলেও, ৯৭ শতাংশ ভবনের সেটি নেই। এমনকি অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেই এমন ভবনের সংখ্যা ৯৭ শতাংশ। ফলে নগরীর প্রতিটি ভবনই যেন এক একটি মৃত্যু কূপ।


চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের জরিপ দলের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মো. শাহ জালাল মিশুক বলেন, যে ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ সংখ্যক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে সেটাকে আমরা জরিপের আওতায় নিয়ে আসছি।


এ ক্ষেত্রে ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা তদারকির দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর ভূমিকা ও নকশা অনুযায়ী যে ভবন নির্মাণ হচ্ছে কিনা তার তদারকি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে যে কোনো ট্র্যাজেডির পরে নড়েচড়ে বসে এই সমস্ত সংস্থাগুলো।


এ নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, যেসমস্ত বহুতল ভবনে নিয়ম বহির্ভূত কাজ করা হবে সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে অ্যাকশন নেয়া হবে। আর যারা অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি; সেটা আমরা ফায়ার সার্ভিসকে জানাবো, তারাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। যৌথভাবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে যেন, সামনে বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।


গত বছর ঢাকার বঙ্গবাজারে আগুনের পর চট্টগ্রামের বিপণিবিতানগুলো নিয়ে জরিপ কার্যক্রম শুরু করেছিল ফায়ার সার্ভিস। সেখানে হর্কাস মার্কেট, টেরিবাজারসহ দুই শতাধিক মার্কেটকে উচ্চ ঝুঁকিতে রাখা হয়। তবে রেস্টুরেন্টের কোনো তালিকা তাদের কাছে নেই বলে জানান চট্টগ্রাম অঞ্চল ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মালেক।


তিনি বলেন, আমরা কাউন্সিলিংয়ের অবস্থায় আছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু পাইনি। সচেতনতা ও ফায়ার সেফটি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু আরও বেশি পানির দরকার রয়েছে।


ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে চট্টগ্রামের ১৪০০ বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আর এসব ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বিশ কোটি টাকা।


চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি যেখানে
২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ২০০ থেকে বেড়ে ৬৭৫ হয়েছে। ২৫৪১টি অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনার মধ্যে ৪৭ শতাংশ আবাসিক এলাকায় এবং ২৭ শতাংশ বাণিজ্যিক এলাকায় ঘটেছে। সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে ২, ৪, ১৬, ৩২, ও ৩৬ নং ওয়ার্ড অগ্নিকাণ্ডের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।


অগ্নি ঝুঁকিতে থাকা মার্কেটগুলো হচ্ছে- খাতুনগঞ্জ, জহুর মার্কেট, টেরিবাজার, তামাকুমণ্ডি লেন, গোলাম রসুল মার্কেট, বাগদাদ ইলেকট্রিক সুপার মার্কেট, হাজি সরু মিয়া মার্কেট, নূপুর মার্কেট, ঝাউতলা বস্তি, আমবাগান বস্তি, সেগুনবাগান বস্তি, কদমতলী রেলওয়ে বস্তি, সিঙ্গাপুর সমবায় মার্কেট, কর্ণফুলী মার্কেট, পোর্ট মার্কেট, বড় পুল বাজার, ইসা মিস্ত্রি মার্কেট, ফকিরহাট মার্কেট, নয়াবাজার মার্কেট, ফইল্লাতলি বাজার।


এ ছাড়া ইপিজেড ফায়ার স্টেশনের অধীন চৌধুরী মার্কেট, কলসি দিঘির পাড় কলোনি, আকমল আলী কলোনি, মহাজন টাওয়ার, রেলওয়ে বস্তি, চকভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিং মল, গুলজার মার্কেট, আলী মার্কেট, মতি টাওয়ার, শাহেন শাহ মার্কেট, হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার সুপার মার্কেট, নজু মিয়া হাট মার্কেট এবং বলির হাট মার্কেটও রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি ঝুঁকির তালিকায়।


লামার বাজার স্টেশনের অধীন ভেড়া মার্কেট, চালপট্টি, শুঁটকিপট্টি, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, মিয়া খান পুরোনো জুট মার্কেট ও ওমর আলী মার্কেট, রেলওয়ে বস্তি, অক্সিজেন এলাকার রেলওয়ে বস্তি, বার্মা কলোনি, ২ নম্বর গেট ড্রাইভার কলোনি, রৌফাবাদ কলোনি, শেরশাহ কলোনি, শেখ ফরিদ মার্কেট, যমুনা সুপার মার্কেট, ষোলশহর সুপার মার্কেট, ইমাম শপিং কমপ্লেক্স এবং চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স।