Tuesday, 6 August 2024

হাসিনার পতন ও পালানোর গল্প লিখেছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

কোটা সংস্কারের দাবিতে পড়ুয়াদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত পরিণত হল রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক পালবদলে। যার পরিণামে সোমবার (৫ আগষ্ট, ২০২৪) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সেনার ঘেরাটোপে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা। সোমবার দুপুরে বোন রেহানাকে নিয়ে ঢাকার সরকারি বাসভবন ‘গণভবন’ ছাড়েন তিনি। তাঁকে নিয়ে কপ্টার রওনা হয় ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’র উদ্দেশে। বাংলাদেশ বায়ুসেনার কপ্টারটি উড়িয়ে নিয়ে যান বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এয়ার কমান্ডার আব্বাস। এমনটাই লিখেছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা।


শেখ হাসিনার সমর্থক ভারতের গণ মাধ্যম এবার সত্য প্রকাশ না করে পারেনি। আনন্দবাজার লিখেছে- এর পরে জানা যায়, ভারতের আকাশসীমায় দেখা গিয়েছে হাসিনার বিমান। জল্পনা ছিল যে, দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করবে হাসিনার বিমান। কিন্তু পরে জানা যায়, দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ না করে রাজধানী লাগোয়া গাজ়িয়াবাদের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে অবতরণ করেছেন হাসিনা। অশান্তির মধ্যেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হাসিনার ইস্তফার খবর ঘোষণা করে জানান, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর ইস্তফা এবং দেশত্যাগের খবর প্রকাশ্যে আসার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গণভবনে চড়াও হন কয়েক হাজার মানুষ। চলতে থাকে যথেচ্ছ লুটপাট। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম ‘প্রথম আলো’ লিখেছে বহু সাধারণ মানুষ গণভবনে ঢুকে পড়েন। তাঁদের হাতে গণভবনে ব্যবহৃত জিনিসপত্রও দেখা যায়। গণভবনের ভিতর থেকে ঘাড়ে, কাঁধে, পিঠে নানা আসবাব সামগ্রী, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম এমনকি গণভবনের পোষ্য ছাগল, খরগোশ, হাঁস নিয়ে বেরিয়ে আসার ছবি, ভিডিয়োও প্রকাশ্যে আসে। সেই রকমই একটি ভিডিয়ো ফেসবুকে প্রকাশ করেন বাংলাদেশের এক ছাত্র আন্দোলনকারী। ভিডিয়োর বিবরণে লেখা ‘হাসিনার রুমে’। তাতে দেখা যাচ্ছে মাথায় বাংলাদেশের পতাকার ফেট্টি বাঁধা এক তরুণ পায়ে জুতো পরে উঠে পড়েছেন একটি পরিপাটি নীল চাদরে মোড়া বিছানায়। পায়ের উপর পা তুলে বিছানায় শুয়ে তিনি চিৎকার করে জানাচ্ছেন, তাঁরা গণভবনের দখল নিয়েছেন। আরও একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে গণভবনের পাকশালে রান্না করা খাবারে দেদার ভোজ সারছেন আন্দোলনকারীদের একাংশ (সেই ভিডিয়োরও সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। তবে সমাজমাধ্যমে বাংলাদেশের অনেকেই ওই ভিডিয়ো পোস্ট করে লিখেছেন, আন্দোলনকারীরা গণভবনের রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছেন। শুধু হাসিনার সরকারি বাসভবন নয়, তাঁর একাধিক মন্ত্রীর বাড়ি এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দফতরও জনতার রোষের শিকার হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ৩২ ধানমন্ডি ভবনে। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট ওই ভবনেই অভ্যুত্থানকারী সেনা অফিসারদের গুলির নিহত হয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান মুজিব। তাঁর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালও নিহত হয়েছিলেন ঘাতকের বুলেটে। বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন মুজিবের দুই কন্যা, হাসিনা এবং রেহানা। ঘটনাচক্রে, সোমবার তাঁরা দু’জন সেনার কপ্টারে ঢাকা ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আগুন ছাই হয়ে যায় মুজিবের স্মৃতি বিড়জিত ৩২ নম্বর ধানমন্ডি রোডের সেই সংগ্রহশালা। ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনটি বড় মাপের সেনা অভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়েছে ভারতের পূর্ব প্রান্তের প্রতিবেশী দেশ। সেনার হাতে নিহত হতে দেখেছে দুই প্রেসিডেন্ট— শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমানকে। এ ছাড়া, গত সাড়ে পাঁচ দশকে একাধিক ছোট-বড় ব্যর্থ অভ্যুত্থানও হয়েছে সে দেশে। শেষ বার ২০০৭ সালে সরকার গঠনে হস্তক্ষেপ করেছিল বাংলাদেশ সেনা। যদিও রাষ্ট্রপুঞ্জের বিধি-নিষেধের কারণে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন সরাসরি ক্ষমতার চাবিকাঠি হাতে নেননি। এই পরিস্থিতিতে জামান কী করবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মধ্যে।