Thursday, 1 August 2024

ছাত্র আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের জন্য আ.লীগ সরকার দায়ী : মুক্ত গবেষক এলায়েন্স


জাতীয় প্রতিনিধি :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সশস্ত্র আক্রমণ ও ক্র্যাকডাউনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন বাংলাদেশ মুক্ত গবেষক এলায়েন্স। 


আজ বুধবার (৩১ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, গত ১৬ জুলাই থেকে আমরা দেখেছি কীভাবে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার—যারা গত ১৫ বছর ধরে নানা অসদুপায়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছে তারা অহিংস ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সশস্ত্র আক্রমণ ও ক্র্যাকডাউন চালিয়েছে। তাদের এই ক্র্যাকডাউনে নামানো হয়েছে রাজনৈতিক, আইনশৃঙ্খলা, সামরিক ও আধাসামরিক দমনমূলক রাষ্ট্রযন্ত্রকে, যাদের মাঝে আছে ছাত্রলীগ, পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তারা প্রকাশ্যে আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমণ করেছে, অস্ত্র ব্যবহার করেছে ও গুলি চালিয়েছে।


বিবৃতিতে বলা হয়, এই দমনমূলক আচরণ অন্তত আড়াইশো’র বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে, যা আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দেখেছি এবং কেউ কেউ সঙ্গত কারণেই বিশ্বাস করেন, এই মৃত্যুর তালিকা হাজার পেরিয়ে যেতে পারে। এই বিশ্বাস অমূলক নয়, কেননা জাতীয় গণমাধ্যম দেশব্যাপী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও প্রচণ্ড সরকারি সেন্সরশিপের মাঝে তাদের তথ্য প্রচার বা সংগ্রহের কাজটিও ঠিকমত করতে পারেনি। 


এছাড়াও, মানুষের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও সোশ্যাল মিডিয়ার ডকুমেন্টেশন(যার মাঝে আছে ভিডিও ও ফটোগ্রাফিক প্রমাণ) আমাদেরকে দেখায় এই রাষ্ট্রীয় জুলুম কোনো সরকারের তার নিজের রাজধানী শহরে চালানো বৃহত্তম হত্যাযজ্ঞগুলির একটি। এই ভিডিও ও তথ্যপ্রমাণগুলি আমাদেরকে আবেগাক্রান্ত করে যখন আমরা দেখি যে সরাসরি মানুষকে খোলা রাস্তায়, বারান্দায়, বা নিজের বাসার জানালায় গুলি করে খুন করা হয়েছে, বা যখন মানুষ তাদের মৃত বন্ধুর চূর্ণ বিচূর্ণ খুলি ধরে রাখার বর্ণনা দেয়। এই দমন আর নিপীড়নের সাথে সাথে সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সামরিক বাহিনীকে রাতের আঁধারে বাসায় বাসায় রেইড ও মানুষকে ধরে নিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছে-বিবৃতিতে বলা হয়। 


বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই চলমান নৃশংসতার মাঝে বাংলাদেশ সরকার ও তার রাষ্ট্রযন্ত্র নিজের অন্যায় কার্যক্রম ক্রমাগত অস্বীকার করে গেছে, যার মাঝে আছে খুন ও শারীরিক লাঞ্ছনার অভিযোগ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে, সরকারি কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্যদের প্রেস বক্তব্যে, এবং সরকার-পক্ষীয় রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক/সামাজিক এলিটদের বক্তব্যে অস্বীকার করা। 


অন্যদিকে, গণরোষ ও এই গভীর ক্ষত রেখে যাওয়া স্বজন হারানোর ও নির্যাতিত হওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে তাদের মিথ্যাচারের কথা। স্বাধীন গবেষক হিসেবে আমাদের নিরীক্ষণ ও ব্যক্তি অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নিপীড়িত মানুষের অভিজ্ঞতাকেই প্রতিফলিত করে। আমরা তিরস্কার জানাই এই সরকারকে, আমরা তাদেরকে সরাসরি অভিযুক্ত করছি এই হত্যাযজ্ঞের দায়ে। আমরা বিশ্বাস করি যে এই সরকার ‘জনগণের দ্বারা (নির্বাচিত), জনগণের জন্য, জনগণের’ নয়, এটা বুঝতে সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহই যথেষ্ট। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের দাবি, খুনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদ এই মুহূর্তে পদত্যাগ করবেন। কোনো আটচল্লিশ বা বাহাত্তর ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া আল্টিমেটাম নয়; এই রক্তপাতের পর এই সরকার আর এক মুহূর্তও গ্রহণযোগ্য থাকে না।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন—

পারভেজ আলম, সাংস্কৃতিক বিশ্লেষক,

দেবাশিস চক্রবর্তী, ক্ষমতার রাজনীতি ও জনমানসের কল্পনাশক্তি বিষয়ক গবেষক

অনুপম দেবাশীষ রায়, সামাজিক আন্দোলন গবেষক

হক মুহাম্মদ ইশফাক, কম্পিউটার বিজ্ঞানী

মঞ্জুরুল মাহমুদ ধ্রুব, রাজনৈতিক যোগাযোগ গবেষক

মিম আরাফাত মানব, কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও ডিজিটাল আইন বিষয়ক গবেষক

নাফিসা রায়হানা, জীব-পদার্থবিদ

সহুল আহমদ, গণহত্যা বিষয়ক গবেষক

সারোয়ার তুষার, উত্তর-/বি-উপনিবেশায়ন ও রাষ্ট্রীয় ভায়োলেন্স বিষয়ক গবেষক

মাহি শফিউল্লাহ, মেশিন লার্নিং গবেষক

অদিতি নওশীন, শিক্ষা ও অধ্যয়ন বিষয়ক গবেষক 

তাহনিয়াত আফসারী, ন্যানোবিজ্ঞানী

ড. আসিফ মাহমুদ, কম্পিউটার বিজ্ঞানী, ইমেজ ও ভিডিও প্রসেসিং গবেষক

সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, সামাজিক মহামারী বিশেষজ্ঞ 

সুমি আনজুমান, শিল্প গবেষক 

খন্দকার তূর আজাদ, উন্নয়ন অর্থনীতি গবেষক

শ্রবণা শফিক দীপ্তি, নগর নৃতাত্ত্বিক

শোয়েব আবদুল্লাহ, ডিজিটাল অধিকার গবেষক

নিসর্গ নিলয়, বিউপনিবেশায়ন বিষয়ক গবেষক

ফরহাদুল ইসলাম, কম্পিউটার বিজ্ঞানী 

সাদিকুল সাকিফ, কম্পিউটার বিজ্ঞানী 

অদিতি শরীফ, সামাজিক নৃতাত্ত্বিক

জয়ন্ত জ্যোতি মণ্ডল, মেশিন লার্নিং গবেষক

সাবিক খায়ের, লাইফ সায়েন্স গবেষক 

রওয়াহাতুর রাব্বী, কম্পিউটার বিজ্ঞানী 

আরেফিন মিজান, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক 

নাফিজ ইমতিয়াজ রাফিন, ডেটা সায়েন্টিস্ট

আপন দাস, সাংস্কৃতিক নৃতাত্ত্বিক

মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, সিস্টেম সিকিউরিটি গবেষক 

ফয়সাল জামান, শিল্প গবেষক

আনিকা তাহসিন মায়ামি, কম্পিউটেশনাল সমাজবিজ্ঞানী

ফাহিম বিন সেলিম, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী