বর্তমান বিশ্বে ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা। ক্রিকেটে এমন অনেক নিয়ম রয়েছে যেগুলো আমাদের অজানা। “আউট” ক্রিকেট খেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এই লেখাটিতে আমরা ক্রিকেটে কত ধরনের আউট আছে এবং আউট গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলা নয়, ক্রিকেট উপভোগ করার জন্য হলেও সকল নিয়ম কানুন যানা প্রয়োজন। আপনি যদি ক্রিকেটের সকল নিয়ম-কানুন জেনে থাকেন তাহলে খেলা দেখে আরও বেশি মজা উপভোগ করতে পারবেন।
কিছুদিন আগে এক বিরল ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল ক্রিকেট বিশ্ব। বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা চলমান ম্যাচে দেখা গেল এই প্রথম টাইমড আউট। এছাড়াও ক্রিকেটে আরো অনেক ধরনের আউট রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা অজানা। চলুন জেনে নেই ক্রিকেটে কত ধরনের আউট আছে এই সম্পর্কে।
ক্রিকেটে কত ধরনের আউট আছে
ক্রিকেটে সর্বমোট আউট ১১ প্রকার। স্ট্যাম্পিং, বোল্ড আউট, ক্যাচ আউট, রান আউট, LBW সহ মোট ১১ ধরনের আউট রয়েছে। একজন ক্রিকেটার হিসেবে কিংবা একজন ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে অবশ্যই আপনার এই ১১ প্রকার আউট সম্পর্কে জেনে রাখা উত্তম।
আপনি যদি ক্রিকেট খেলার আউট সম্পর্কে না জানেন তাহলে, খেলার মাঝে এঞ্জেলো ম্যাথিউস এর মত (টাইম আউট প্রসঙ্গ) অসস্তিতে পড়বেন। তাই চলুন ক্রিকেটের ১১ ধরনের আউট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
১. বোল্ড আউট
ক্রিকেট খেলায় একটি কমন বিষয় বোল্ড আউট। বল করার পরে যদি স্টাইকে থাকা ব্যাটসম্যানের ব্যাটে আঘাত করে অথবা সরাসরি গিয়ে বল স্টাম্পে লাগে তাহলে সেটিকে বোল্ড আউট বলা হয়। বোলারদের সব সময় টার্গেট থাকে স্টাইকে থাকা ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করার।
২. ক্যাচ আউট বা কট আউট
স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যানের ব্যাটে কিংবা হাতের গ্লোবসে স্পর্শ লেগে, বল মাটি স্পর্শ করার আগে যদি বিপরীত দলের কোন খেলোয়াড় সেটিকে ধরে ফেলে বা তালুবন্দি করে তাকে ক্যাচ আউট বলা হয়। সাধারণত ক্যাচ আউট বা কট আউট ৩ ধরনের হয়ে থাকে।
কট বাই দা ফিল্ডার – উইকেট রক্ষক কিংবা বলার ব্যতীত অন্য ফিল্ডাররা বল তালুবন্দি করলে তাকে কট বাই দা ফিল্ডার বলে।
কট বিহাইন্ড – উইকেট রক্ষক বল তালুবন্দী করলে সেই কট আউটকে কট বিহাইন্ড বলা হয়।
কট এন্ড বোল্ড – বলার বল করার পরে সেই বল মাটি স্পর্শ করার আগে নিজে তালুবন্দি করলে তাকে কট এন্ড বোল্ড বলে।
৩. স্ট্যাম্প আউট
বল হিট করার সময় যদি ব্যাটসম্যান নির্দিষ্ট ক্রিজের বাইরে চলে যান, এবং ক্রিজে ফেরার আগে উইকেট রক্ষক বল স্ট্যাম্পে লাগালে স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যান স্ট্যাম্প আউট হবে।
তবে ব্যাটসম্যানের শরীরের কোন অংশ অথবা ব্যাটের কোন অংশ যদি ক্রিজের দাগের মধ্যে থাকে তাহলে এটি আউট বলে গণ্য হবে না।
৪. রান আউট
বল করার পরে রান সংগ্রহের জন্য ব্যাটসম্যান যখন এক প্রান্ত থেকে দৌড়ে অন্য প্রান্তে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন নির্দিষ্ট সীমানায় (ক্রিজে) পৌঁছানোর আগে বল স্টাম্পে লাগালে তাকে রান আউট বলা হয়। এক্ষেত্রে অপরপক্ষের যেকোনো খেলোয়াড় বল স্ট্যাম্পিং করলে ব্যাটসম্যান রান আউট হবে।
৫. হিট আউট
ব্যাটসম্যানের শরীরের কোন অংশ অথবা ব্যাট যদি স্ট্যাম্পে লাগে তাহলে ব্যাটসম্যান হিট আউট হবে। এছাড়াও রান নেয়ার ক্ষেত্রে যদি ব্যাটসম্যানের শরীরের কোন অংশ অথবা ব্যাট স্টাম্পে লাগে তাহলেও ব্যাটসম্যান হিট আউট হবে।
৬. লেগ বিফোর উইকেট বা LBW
বলার কর্তৃক বল করার পরে স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যান এর ব্যাটে না লেগে বল যদি সরাসরি ব্যাটসম্যানের পায়ে কিংবা শরীরের অন্য কোন অংশে আঘাত করে, এক্ষেত্রে আম্পায়ারের যদি মনে হয় বল স্ট্যাম্প লাইনে রয়েছে তাহলে আম্পায়ার লেগ বিফোর উইকেট বা এলবিডব্লিউ (LBW) আউট দিতে পারবে।
৭. অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড
রান নেয়ার সময় কিংবা স্ট্যাম্পিং এর সময় যদি ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে বিপক্ষ দলের ফিল্ডারকে বল ছুরতে বাধা দেয়, তাহলে সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যাটসম্যান অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড বিবেচনায় আউট হবে। ক্রিকেট খেলায় এই দৃশ্য খুব কম দেখা যায়।
৮. টাইমড আউট
ক্রিজে থাকা ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পরে নতুন ব্যাটসম্যান যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্রিজে উপস্থিত থেকে বল ফেস করার জন্য প্রস্তুত না থাকে তাহলে তাকে টাইমড আউট দেওয়া হয়। এছাড়াও ব্যাট, হেলমেট কিংবা অন্য কোন কারণে বিপক্ষ দলের অধিনায়ক ও আম্পায়ারের অনুমতি ছাড়া সময় অপচয় করতে পারবে না।
নতুন ব্যাটসম্যান প্রবেশ করার ক্ষেত্রে ৩ ফরমেটে নির্ধারিত সময়ে রয়েছে। অবশ্যই এই সময়ের মধ্যে নূতন ব্যাটসম্যানকে মাঠে প্রবেশ করে বল ফেস করার জন্য রেডি থাকতে হবে।
টি-টোয়েন্টিতে ৯০ সেকেন্ড।
ওডিআইতে ১২০ সেকেন্ড।
টেস্ট ম্যাচে ১৮০ সেকেন্ড।
ক্রিকেটে টাইমড আউট এর দৃশ্য বিরল। সর্বপ্রথম ২০২৩ সালের ৭ই নভেম্বর, বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকার ম্যাচে এই বিরল আউট দেখা যায়।
শ্রীলংকার ব্যাটসম্যান এঞ্জেলো ম্যাথিউস নির্ধারিত টাইমের মধ্যে মাঠে প্রবেশ করে খেলার জন্য রেডি না হওয়ায় অপরপক্ষের ক্যাপ্টেনের আবেদনের ভিত্তিতে তাকে টাইমড আউট দেয়া হয়। ১৪৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই দৃশ্য সর্বপ্রথম।
৯. রিটায়ার্ড হার্ট
কোনভাবে আঘাত পেয়ে ব্যাটসম্যান যদি আম্পায়ারের সম্মতি ছাড়া মাঠ ছাড়ে। এবং খেলার কোন পর্যায়ে যদি উক্ত ব্যাটসম্যান পুনরায় মাঠে প্রবেশ করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ অধিনায়কের সম্মতি না থাকলে ব্যাটসম্যান রিটায়ার্ড হার্ট আউট হিসেবে গণ্য হবে।
১০. হ্যান্ডেল্ড দ্য বল আউট
প্রতিপক্ষ দলের ফিল্ডারদের সম্মতি ছাড়া যদি ব্যাটসম্যান সরাসরি বল বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে অথবা স্পর্শ করে তাহলে ব্যাটসম্যান হ্যান্ডেল্ড দ্য বল আউট হবেন। তবে বল সরাসরি ব্যাটসম্যানের অনিচ্ছায় ব্যাট ধরে থাকা হাতে আঘাত করলে সেটি আউট বলে বিবেচিত হবে না।
১১. হিট দ্য বল টুইস আউট
ডেলিভারি হওয়া বল ব্যাটসম্যান ব্যাট দিয়ে কিংবা শরীরের অন্য কোন অংশ দিয়ে ২ বার আঘাত করলে ব্যাটসম্যান হিট দ্য বল টুইস আউট হবেন। এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাটসম্যান যদি প্রথমবার হিট করার পরে দ্বিতীয়বার পা কিংবা ব্যাট দিয়ে পুনরায় বল হিট করে তাহলেও ব্যাটসম্যান হিট দ্য বল টুইস আউট হবে।
উপসংহার
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আশা করি ক্রিকেটে কত ধরনের আউট আছে এবং কি কি? এই প্রশ্নের উত্তর জেনে গেছেন। আপনি যদি একজন ক্রিকেট ভক্ত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার এই সকল আউট গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত।
FAQs
কট আউট কত ধরনের?
কট আউট তিন ধরনের হয়। যথাঃ কট বাই দা ফিল্ডার, কট এন্ড বোল্ড এবং কট বিহাইন্ড।
ক্রিকেটে সর্বপ্রথম টাইমড আউট হয় কবে?
সর্বপ্রথম ২০২৩ সালের ৭ই নভেম্বর বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকার ম্যাচে টাইমড আউট দেখা যায়।