সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫

ইসরাইল পাকিস্তানের পিছু নিলে তখন আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না: বিলাওয়াল


আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইরানে ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এর কড়া সমালোচনা করেছে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের আগ্রাসনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতার সমালোচনা করেন তিনি। তবে সবাইকে সতর্ক করেন। বিলাওয়াল বলেন, যদি আমরা ইরানিদের জন্য কথা না বলি, তবে যখন তারা আমাদের পিছু নেবে, তখন আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। 


বিলাওয়াল এমন সময় এই মন্তব্য করলেন যখন সামাজিক যোগাযোগ মিডিয়ায় উড়ো খবর ভেসে বেড়াচ্ছে যে, ইসরাইলের এরপরের টার্গেট পাকিস্তান। তবে এ খবরের কোনো সত্যতা বা কোনো নির্ভরযোগ্যতা পাওয়া যায়নি। এমন এক সময়ে সোমবার জাতীয় পরিষদের এক অধিবেশনে তিনি বলেন, প্রথমে তারা (ইসরাইল) ফিলিস্তিনিদের পিছু নিলো। কিন্তু বিশ্ব নীরব থাকল। কারণ তারা ইসরাইল। এরপর তারা লেবাননিদের পিছু নিলো। কিন্তু আমরা কিছু বলিনি। কারণ আমরা লেবাননি ছিলাম না। তারপর তারা ইয়েমেনিদের পিছু নিলো। কিন্তু আমরা চুপই রইলাম। কারণ আমরা ইয়েমেনি নই। এখন তারা ইরানের পিছু নিয়েছে। আমরা যদি চুপ থাকি, তবে যখন তারা আমাদের পিছু নেবে, তখন আর কেউ থাকবে না। 


তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি শাসনের এই আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। ইসরাইলের গণবিধ্বংসী যুদ্ধাবস্থা আমাদের সবাইকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বিলাওয়ালের বক্তব্য উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরাইল সংঘাতের পটভূমিতে বিলাওয়াল আরও বলেন, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর নয়াদিল্লির সীমান্ত পার হওয়া আক্রমণের জবাবে পাকিস্তান গত মাসে অপারেশন বুনিয়ান-উম-মারসুস চালায়। তাতে  ভারতীয় ৬টি যুদ্ধবিমান (তিনটি রাফায়েলসহ) ও ডজনখানেক ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। ৮৭ ঘণ্টা পর এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের যুদ্ধ থামে ১০ মে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।


বিলাওয়াল বলেন, আল্লাহর রহমতে পাকিস্তান সামরিক, কূটনৈতিক ও ঘটনা বিশ্লেষণ করে বিজয় অর্জন করেছে। তিনি ভারতকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ‘সস্তা অনুকরণ’ বলে উল্লেখ করেন। বিলাওয়াল বলেন, আমরা যুদ্ধের মাঠে, কূটনীতিতে এবং ঘটনা জানানোর ক্ষেত্রে যুদ্ধে ভারতকে হারিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা যুদ্ধ জয় করে ফেলেছি আগেই। পাকিস্তানের অবস্থান যে-‘আঞ্চলিক অস্থিরতা পাকিস্তান ও ভারতের জনগণের স্বার্থবিরোধী’- তা আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন পাচ্ছে। আমরা কাশ্মীরের বিষয়টি তুলে ধরেছি। ২০১৯ সালে ভারতের আগ্রাসনের সময় পূর্ববর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি কী করব, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করব? কিন্তু এখন ভারত ‘কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ দাবি থেকে পিছিয়ে এসেছে। তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার পক্ষে কথা বলেছেন এবং এখন আন্তর্জাতিক সহানুভূতি কাশ্মীরিদের দিকে ঝুঁকছে।



পানিসম্পদ ইস্যুতে বিলাওয়াল বলেন, সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিত করা অবৈধ। পাকিস্তানের পানির প্রবাহ থামানোর হুমকি জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারত যদি এ ধরনের হুমকি কার্যকর করে, তাহলে পাকিস্তান বাধ্য হবে আরেকটি যুদ্ধ করতে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের বিমানবাহিনী অতীতেও ভারতকে পরাজিত করেছে, প্রয়োজনে আবার করবে। বিলাওয়ালের বক্তব্য চলাকালে পার্লামেন্টে বিরোধীরা হট্টগোল শুরু করলে স্পিকার তাদের বক্তব্য রাখতে নিষেধ করেন। বিলাওয়াল স্পিকারকে বলেন, জনাব স্পিকার, দয়া করে তাদের উপেক্ষা করুন। জনগণ তো করেই ফেলেছে। বিলাওয়াল আরও বলেন, ভারতের এবং পাকিস্তানের ভিতরের ‘সহযোগীদের’ সামনে দু’টি পথ- সিন্ধু পানি চুক্তিকে সম্মান জানানো অথবা পরিণতির মুখোমুখি হওয়া।