খেলার মাঠে রিপোর্ট
ঘরোয়া ক্রিকেটে কয়েক ম্যাচ ভালো করলেই হুটহাট টেস্ট অভিষেক করিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি বাংলাদেশে বেশ পুরনো। এসব ক্রিকেটারের বেশিরভাগই হাতে গোনা কয়েকটি টেস্ট খেলে স্থায়ীভাবে হারিয়ে গেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম বলটা খেলা শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত মনে করেন, এসব ক্রিকেটারদের অনেকেই টেস্ট খেলার যোগ্যই নন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন টাকার ছড়াছড়ি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডই (বিসিবি) তো বিশ্বের চতুর্থ ধনী ক্রিকেট বোর্ড বলে শোনা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটের উষালগ্নে পরিস্থিতি এমন ছিল না। তখন ঘরোয়া লিগ ছিল জমজমাট। টাকার ওড়াওড়ি হতো সেখানে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তেমন টাকা-পয়সা ছিল না। ক্রিকেটারদের বেতনও চালু হয়েছে শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুতদের দিয়েই।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম বলটা খেলেছিলেন শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত। ২০০৪ সালে ক্রিকেট ছেড়ে পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করছেন একসময়ের এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। দেশ রূপান্তরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অতটা মনে নেই। আমাদের দিয়েই খুব সম্ভবত বেতন শুরু হয়েছিল । এ গ্রেডে মনে হয় বেতন ছিল ৬০:৭০ হাজার টাকা, বি গ্রেডে মনে হয় ৫০ হাজার টাকা আর সি গ্রেডে ২৫:৩০ হাজার টাকা।’
তবে ওই সময় ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো টাকা পাওয়া যেত বলে জানান সাবেক এই ওপেনার, ‘ঢাকা লিগে টাকার পরিমাণ ভালো ছিল, আমরা মৌসুমে ৭:৮ লাখ টাকাও পেয়েছি। এরপর অফিস লিগ ছিল, তখন আমরা বেক্সিমকোতে খেলতাম কিংবা কোনো একটা ব্যাংকে খেলতাম, দেখা গেছে ওরা আমাদের ১ বছরের বেতন দিয়ে দিত। জাতীয় দলে ও রকম টাকা ছিল না। তখন আমরা খ্যাপ খেলতাম প্রচুর। আমি আর বুলবুল ভাই (আমিনুল ইসলাম বুলবুল, বিসিবি সভাপতি) অনেক খ্যাপ খেলেছি একসঙ্গে।’
খ্যাপ আর ঘরোয়া লিগ মিলিয়ে আয়-রোজগার বেশ ভালোই হতো শাহরিয়ারদের, ‘বছরে সব মিলিয়ে ১০:১৫ লাখ টাকার মতো আয় হতো, তবে আমার যে ব্যাকগ্রাউন্ড তাতে আমি টাকার জন্য ক্রিকেট খেলিনি। আকরাম ভাই আবাহনীতে খেলে বছরে ৮ লাখ টাকা মনে হয় পেতেন, আমি যতটুকু জানি। নান্নু ভাইও ও রকম পেতেন, ৭-৮ লাখ টাকা। এখন তো শুনেছি সাকিবকে (আল হাসান) মোহামেডান ১ কোটি টাকাও দিয়েছে। এরপর প্লেয়ারদের বিজ্ঞাপন থেকেও আয় আছে। আমাদের সময়ে বছরে আমরা ১০ লাখ টাকা দেখতাম চোখে, তবে হিসাব করলে সেই ১০ লাখ টাকা এখন অনেক টাকা।’
শাহরিয়ারের কাছে প্রশ্ন ছিল- এখনকার ক্রিকেটাররা টাকা আর খ্যাতি পেয়েই সন্তুষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিনা? জবাবে শাহরিয়ার ভারতের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে তারা তো বাংলাদেশের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি উপার্জন করে। যদিও ভারতে একটা ক্রিকেটারের জাতীয় দলে আসাটা আমাদের চেয়ে ১০০ গুণ কঠিন। অনেক মানুষ, তবুও তো বাংলাদেশে ক্রিকেটাররা চলে আসে জাতীয় দলে। এই যে ১০৭ জন টেস্ট ক্রিকেটার বাংলাদেশের, তাদের অনেককেই আমি বলব যে টেস্ট খেলার উপযুক্ত ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেক কিছু খেলে এরপর জাতীয় দলে এসেছি। এখন এমন অনেক প্লেয়ার আছে, ১ মৌসুম ঢাকা লিগ খেলেই জাতীয় দলে চলে আসছে। ভারতে খেলোয়াড়রা অনেক সংগ্রাম করে। ওরা রঞ্জি ট্রফি, ঘরোয়া আরও টুর্নামেন্ট এসব অনেক কিছু খেলে, সেখানে ২০০ জন পারফর্ম করে, নেয় মাত্র ১ জন বা ২ জনকে। আমাদের দেশে কী হয়, ১ বছর প্রিমিয়ার লিগ ভালো খেললেই তাকে জাতীয় দলে ঢুকিয়ে দেয়। এমনও প্লেয়ার আছে, ২০টা ওয়ানডে খেলেছে, ৫টা টেস্ট খেলেছে, রানে নেই প্রিমিয়ার লিগে ২টা ম্যাচে ভালো করলে আবার জাতীয় দলে ঢুকে যায়। আমার মনে হয় আরেকটু তৈরি হয়ে জাতীয় দলে এলে ভালো। আরেকটু বুঝে প্লেয়ারদের জাতীয় দলে নেওয়া ভালো।’