বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

তেহরান ছাড়ছেন বাসিন্দারা, বাংকারে ইসরায়েলিরা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে দুই দেশেই বেসামরিক মানুষজনের প্রাণহানি বাড়ছে। হামলা থেকে বাঁচতে রাজধানী তেহরান ছাড়তে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তেহরান ছাড়ার আহ্বানের পর এ প্রবণতা আরো বেড়েছে। অন্যদিকে হামলা-পাল্টা হামলার শুরু থেকেই দিন-রাতের বেশির ভাগ সময় বাঙ্কারে অবস্থান করছেন ইসরায়েলিরা।


এএফপির যাচাইকৃত একটি ছবিতে দেখা গেছে, উত্তর দিকের তেহরানের একটি মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি এবং বিপরীত লেনে প্রায় কোনো যানবাহন নেই।


বিবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্পের বার্তার পর মঙ্গলবার তেহরান ছাড়ার প্রবণতা বেড়েছে। সোমবারও কেউ কেউ শহর ছেড়েছেন। যদিও অনেকে শহরেই থেকে গেছেন।


অনেকের আবার তেহরান ছাড়ার সুযোগও নেই।


এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, আমার অনেক প্রতিবেশী তেহরান ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু আমি রয়ে গেছি। যাব কোথায়? আমার পুরো জীবন তেহরানে কেটেছে।


তবে সংকটকালে তেহরান ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষের জন্য গ্রামাঞ্চলের মানুষ তাদের বাড়ি খুলে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার যাদের গাড়ি নেই, নিজ গাড়িতে করে তাদের দূরদূরান্তে পৌঁছে দিচ্ছেন।

যদিও সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত রাজধানী তেহরান ছাড়ার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ‘শত্রুর মানসিক যুদ্ধ’ বা মনস্তাত্ত্বিক চাপের অংশ। কিছু অনলাইন ব্যবহারকারীও এই বার্তার পেছনে ‘ভুয়া আতঙ্ক’ ছড়ানোর কথা বলছেন।


তারা বলছেন, তেহরান নিরাপদ। যদিও শহরে প্রতিদিনই ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটছে। 
এদিকে ইসরায়েলিরা হামলার প্রথম দিন ১৩ জুন থেকেই দিন-রাতের বেশির ভাগ সময় ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় (বাঙ্কার) অবস্থান করছেন। ইরানের হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলজুড়ে নিয়মিত সাইরেন বাজছে, মানুষ আতঙ্কে বাঙ্কারে ছুটছেন। এ অবস্থায় দেশটিতে স্বাভাবিক জনজীবন কার্যত থমকে গেছে।


ইরানের শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে বাঙ্কারগুলো ইসরায়েলিদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারছে কিনা– তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়ার পরও আতঙ্কে দিন পার করছেন ইসরায়েলিরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ইরানের হামলার পর বাঙ্কারের ভেতর আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হওয়ার চিত্র উঠে এসেছে।


ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শক্তপোক্ত দেয়াল ও ছাদ ইসরায়েলিদের মাথার ওপর ধসে পড়েছে। আতঙ্কিত লোকজন সাহায্যের জন্য দিগ্বিদিক ছুটছেন।


ইরানের সশস্ত্র বাহিনী আগেই বেসামরিক ইসরায়েলিদের সতর্ক করে বলেছিল, তারা যেন দখলকৃত ভূখণ্ড (ইসরায়েল) পুরোপুরি ত্যাগ করে, ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী হামলা চলাকালে বাঙ্কারগুলো তাদের রক্ষা করতে পারবে– এমন আশা যেন না করে তারা। ইরান এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর হোম ফ্রন্ট কমান্ড। তারা বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন না। 


তবে ইরান বলেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তারা। ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় চালানো ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে তেহরান।