শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫

ইরানের মিত্র কারা, মিত্রদে কৌশলগত ভূমিকা!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম পরাশক্তি ইরান ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় অস্তিত্বগত হুমকির মুখে পড়েছে ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে। তবে তেহরানের মিত্ররা এখনো পর্যন্ত কেবল প্রতীকী ও দুর্বল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।


ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দখলদার ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য’ আখ্যা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তেহরান মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক গোষ্ঠীগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘অক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ জোটের সমর্থন আশা করতেই পারে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।


পাশাপাশি চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর “ক্রিংক” জোটেও ইরান রয়েছে। ক্রিংক দিয়ে সাধারণ চীন, রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার জোটকে বুঝানো হয়। যদিও এই দেশগুলোর আদর্শ ও কৌশলগত লক্ষ্য ভিন্ন, তারপরও তাদের এ জোট অনেকটা সময়ের সদ্ব্যবহার এবং কিছুটা ‘বিপদে পড়ে-বন্ধুত্ব’ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


ইরানের মিত্র ও তাদের ভূমিকা

রাশিয়া

ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির তথ্য অনুযায়ী, ইরান রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে পশ্চিমা মিত্রদের সন্দেহ দীর্ঘদিনের। জানুয়ারিতে দুই দেশ একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে যৌথ মহড়া ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের প্রতিশ্রুতি থাকলেও পারস্পরিক প্রতিরক্ষার নিশ্চয়তা ছিল না। মে মাসে ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়া-নেতৃত্বাধীন ইউরেশীয় অর্থনৈতিক জোটে যোগ দেয়।


বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার কাছে এই সম্পর্ক মূলত দ্বিতীয় সারির গুরুত্ব রাখে—তাদের আসল লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমান্তরালে বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা।


তবে, ইসরায়েলের সঙ্গেও রাশিয়ার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ অবস্থায় ভ্লাদিমির পুতিন সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা নিতে পারেন বলে মনে করেন কেউ কেউ। অপরদিকে, দীর্ঘমেয়াদে এই সংঘাত বিশ্বদৃষ্টি ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নিতে পারে, যা রাশিয়ার পক্ষে কাজ করতে পারে বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন।


চীন

চীন এখনো ইরানের তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এবং ২০২৩ সালে ইরানকে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় সদস্যপদ দিয়ে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছে।


যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ডেভন ক্রসের মতে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে সহায়তাস্বরূপ উপাদান সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাতে ইরান তার অস্ত্রভাণ্ডার পুনর্গঠন ও মিত্রদের সামরিকভাবে শক্তিশালী করতে পারে।


তবে রাশিয়ার মতো চীনও বৃহত্তর কৌশলগত খেলা খেলছে। একদিকে তারা ইসরায়েলের আক্রমণকে ‘ইরানের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার লঙ্ঘন’ বলে নিন্দা করছে, অপরদিকে তারা নিজেকে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী’ হিসেবে তুলে ধরছে। এমনকি বেইজিং এখন ওয়াশিংটনের বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করছে বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন।


উত্তর কোরিয়া

ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে আদর্শগত মিল না থাকলেও, আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র হিসেবে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সীমিত সহযোগিতা রয়েছে। বহুদিন ধরেই ধারণা করা হচ্ছে উত্তর কোরিয়া ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে সহায়তা করে আসছে।


বিবিসি-র নিরাপত্তা বিশ্লেষক ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার জানান, উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শক্তিশালী পারমাণবিক অস্ত্র ও আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে, যা যেকোনো সম্ভাব্য হামলাকারীকে দ্বিধায় ফেলতে পারে।


কিম জং উন এমনকি রাশিয়ার মাধ্যমে ইরানে পারমাণবিক অস্ত্র পাচার করার চেষ্টা পর্যন্ত করতে পারেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।


মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রক্সি বাহিনী

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান বহু বছর ধরে গাজায় হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনে হুথি এবং ইরাকে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স-এর মতো গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকারকেও সমর্থন দিয়েছিল তেহরান, যদিও গত বছর তার শাসনের পতন ঘটে।

তবে “অক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স” হিসেবে পরিচিত এই জোট এখন পর্যন্ত কার্যত নীরব। ইসরায়েলের দুই বছরের সামরিক অভিযানে এই গোষ্ঠীগুলোর সামর্থ্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

ইরানের দীর্ঘদিনের কৌশল ছিল যুদ্ধ শুরু হলে হিজবুল্লাহর মতো মিত্রদের প্রথম প্রতিরক্ষা হিসেবে ব্যবহার করা। কিন্তু এখন এই মিত্রদের আগেই দুর্বল করে দিয়েছে ইসরায়েল। ২০২৩ সাল থেকে ইসারেয়েলের সঙ্গে লড়াইয়ে হামাস ও হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে পড়েছে।