Wednesday, 9 July 2025

"বিচারের বুকে বাজলো গণতন্ত্রের সুর”—৩ বছর ৭ মাস পর শপথ নিলেন ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া


জহির শাহ্, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি 

একটি গণতান্ত্রিক লড়াই, একটানা তিন বছর সাত মাসের দীর্ঘ অপেক্ষা, এবং অবশেষে সত্যের পথে হাঁটার পুরস্কার—শপথগ্রহণ। এমন এক নজির স্থাপন করলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ভলাকুট ইউনিয়নের বলিখোলা গ্রামের মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া, যিনি ২০২১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পরও ন্যায়বিচারের আশায় হাল ছাড়েননি। সোমবার (৭ জুলাই) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা নাসরিনের কাছে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। 


এই শপথ ছিল কেবল একটি সাংবিধানিক আনুষ্ঠান নয়, বরং এটি ছিল আইনের শাসন ও নৈতিক জয়ের এক জীবন্ত ঘোষণা। ঘটনার শুরু ২০২১ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী তৈয়ব হোসেন জয়ী ঘোষণা হন। কিন্তু অভিযোগ ছিল—তিনি সেই সময়ে ফেরারি আসামি ছিলেন, যার ফলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বৈধতা তার ছিল না। বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিতে আনলেও রহস্যজনকভাবে প্রতিপক্ষের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়। অবিচারের এই অধ্যায় পাল্টাতে বাচ্চু মিয়া এক মাসের মাথায় আদালতের শরণাপন্ন হন, শুরু হয় দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর আইনি লড়াই। বিচারপ্রক্রিয়ার শেষে আদালত স্পষ্ট ভাষায় বাচ্চু মিয়ার পক্ষে রায় দেন এবং সেই নির্দেশনা অনুসারে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতীক্ষিত শপথ।


 বাচ্চু মিয়া বলেন, “আমি আইনের প্রতি বিশ্বাস রেখে দাঁড়িয়েছিলাম, আজ সেই বিশ্বাসের জয় হয়েছে। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে শপথ নিতে পেরে আমি গর্বিত।” নাসিরনগর ইউএনও শাহিনা নাসরিন জানান, আদালতের নির্দেশ মোতাবেকই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আর গ্রামের মানুষ, বিশেষ করে প্রবীণ জয়নাল আবেদীন বলেন, “বাচ্চু মিয়া এর আগেও দুইবার মেম্বার ছিলেন, এবার নিয়ে তিনবার। তিনি আমাদের গর্ব। গ্রামের মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও ন্যায়বিচারের সুর মিলিয়ে দিল নতুন প্রত্যাশার দ্বার।” এক কথায়, এটি ছিল সেই সব যোদ্ধাদের গল্প—যারা রাজনীতিকে দম্ভ নয়, দায়িত্ব মনে করে; আর ন্যায়ের জন্য লড়ে দীর্ঘ সময় ধরে।