Friday, 4 July 2025

ভোটকেন্দ্রে কালো টাকার খেলা খেলতে দেব না : জামায়াত আমির


রংপুর প্রতিনিধি

সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘ভোটকেন্দ্রে কোনো কালো টাকার খেলা খেলতে দেওয়া হবে না’।


শুক্রবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জামায়াতের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।


এসময় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলি মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি। আমরা সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।’


তিনি হুঁশিয়ারি দেন, কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকেন তাদের মহান আল্লাহর সাহায্যে সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন করে ছাড়বো। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না, কোনো প্রশাসনিক ক্যু বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। ভোটকেন্দ্রে কোনো কালো টাকার খেলা খেলতে দেওয়া হবে না।


দীর্ঘ ১৭ বছর পর রংপুরে জনসভা করল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শুক্রবার রংপুর জিলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এ জনসভা, যেখানে জনস্রোতে পরিণত হয় দলীয় সমর্থকদের উপস্থিতি। জুলাই হত্যার বিচার, রাজনৈতিক সংস্কার, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার— এই পাঁচটি দাবিকে সামনে রেখে আয়োজন করা হয় সমাবেশটির।


বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের মধ্যেই পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা আবেগ, উত্তাপ ও প্রত্যাশা যেন একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়— সেটিই দেখা যায় অংশগ্রহণকারীদের চেহারায়, কণ্ঠে ও স্লোগানে।


জনসভায় বক্তব্য দেন সদ্য কারামুক্ত সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ দলটির শীর্ষ নেতারা।


এসময় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শিষ্টাচার জানত না বলেই অপকর্মের স্বাদ ভোগ করে বিদায় নিতে হয়েছে। এখন এটি যদি কেউ করে তাহলে তাদের জন্য আরো ভয়ঙ্কর স্বাদ অপেক্ষা করছে। পাটগ্রাম তো আপনাদের খুব কাছে সেখানে কী হয়েছে এবং হচ্ছে দেখতে পাচ্ছেন। শুধু পাটগ্রাম নয় সারা বাংলাদেশকে পাটগ্রাম বানিয়ে ফেলছে এক দল। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের কল্পনাও করা যায় না।


আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছেন দাবি করে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বহু ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি, নানা ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কথা আমরা জানতে পারছি। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তার লোক বসিয়েছিল, ক্যাডার বসিয়েছিল। কিন্তু যখন গণবিস্ফোরণ ঘটেছে তখন তাকে কেউ রক্ষা করতে পারেনি। যে জনগণ এত রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়েছে সে জনগণ আর একটা ফ্যাসিবাদকে কায়েম করতে দেবে না। যতদিন দেশে ফ্যাসিবাদের সামান্য চিহ্ন থাকবে ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ফ্যাসিবাদকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত আমাদের লড়াই কেউ থামাতে পারবে না।


আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে জামায়াতের আমির বলেন, অতীতে যারা অপরাধ করেছে তাদের বিষয়টি রাষ্ট্র দেখবে। এখন আপনারা যারা দায়িত্বে আছেন তারা দায়িত্ব পালন করুন।


জুলাই আন্দোলনে হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে, যারা পঙ্গু হয়েছেন আমরা তাদের চিকিৎসা দিতে পারিনি। এসব অপরাধ যারা করেছে তাদের বিচার এ দেশের জনগণ দেখতে চায়। যদি তাদের বিচার হয় তাহলে কোনো দলকে তুষ্ট করার জন্যও দেশের জনগণের ওপর এরকম নোংরা হামলা চালাতে কেউ দুঃসাহস পাবে না। আর যদি বিচার না হয় তাহলে অবিচারের সংস্কৃতির কারণে বাংলাদেশ একটা জঙ্গলে পরিণত হবে।


আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের অনেক নেতাকে খুন করা হয়েছে। দুজন আমির, দুজন নায়েবে আমির, দুজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল, একজন নির্বাহী পরিষদ সদস্য। এরকম করে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ১১ জন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারপ্রক্রিয়া যে ষোলো আনা মিথ্যা সেটি এটিএম আজহারুল ইসলামের রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। হত্যার শিকার নেতারা বেঁচে থাকলে আমরা একই রায় পেতাম।


পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো ৩৩ প্রার্থীকে আগামী নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। এসময় প্রত্যেক প্রার্থীকে মঞ্চের সামনে দাঁড় করিয়ে পরিচয় করে দেওয়া হয়। প্রার্থীরা হাত নাড়িয়ে উপস্থিত জনতাকে অভিবাদন জানান।


জামায়াতের এ বিভাগীয় জনসভায় একমঞ্চে দেখা যায় বিভিন্ন সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদের। উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রংপুর মহানগর সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুর রহমান কাসেমী, সেক্রেটারি আমিরুজ্জামান পিয়াল, গণঅধিকার পরিষদের জেলা আহ্বায়ক শেরে খোদা আসাদুল্লাহ এবং এনসিপির মহানগর কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আলমগীর কবির।


বক্তব্যে তারা বলেন, ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর একটি কার্যকর জোট গঠনের প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’ -এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো একতরফা নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন বলেও জানান।


মঞ্চে শহীদ পরিবার, বিচার চাইলেন শহীদ আবু সাঈদের ভাই জামায়াতের সভামঞ্চে উপস্থিত হন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন এবং তার দুই ভাই রমজান আলী ও আবু হোসেনসহ জুলাই আন্দোলনে অঞ্চলের শহীদ পরিবারের সদস্যরা।


বক্তব্যে আবু সাঈদের হত্যার বিচার দাবি করে তার ভাই রমজান আলী বলেন, আমার ভাইকে যেভাবে পুলিশের গুলিতে হত্যা করা হয়েছে তার বিচার আমি পাই নাই। আমাদের পরিবার শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার কবে পাব। এক বছর পেরিয়ে গেল আমরা আনুষ্ঠানিক একটা ঘোষণা পেয়েছি যে, ৪ জন কারাগারে ও ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। শুধু গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে হবে না, যারা দেশ ও দেশের বাইরে আছে তাদেরকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির মঞ্চ সাজিয়ে তাদের বিচার করতে হবে।