খেলার ডেস্ক :
জুলিয়ান রস উডের কণ্ঠে গভীর আবেগ! তিনি বললেন, ‘অবশেষে আমি আগস্টে ৩ সপ্তাহের জন্য পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে বাংলাদেশে আসছি।’ ঢাকায় তার আগে থেকেই কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। ২০২৩-এ তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করেন এবং সে সময় আলোচনায়ও এসেছিলেন। তবে টাইগারদের কোচ হওয়ার বিষয়টি তখন শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি এই সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটারের। এবার সুযোগটা স্বল্প মেয়াদে হলেও তিনি নিজের কাজের ঝলক দেখাতে চান, তাই তিনি এ নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত। তবে তার বড় চ্যালেঞ্জ টাইগার ব্যাটসম্যানদের পাওয়ার-হিটার হিসেবে গড়ে তোলা। কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা অন্য দেশের মতো এখানে বিশালদেহী ব্যাটসম্যান নেই যারা পেশীশক্তির ওপর নির্ভর করে চার-ছক্কা হাঁকান। তবে জুলিয়ান মনে করেন, শুধু শক্তি দিয়েই নয়, কৌশল ব্যবহার করেও বড় শট খেলা যায়। তিনি টাইগারদের সেই কৌশলই শেখাতে চান। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট নিয়ে যে আলোচনা-সমালোচনা আছে সেটিরও উন্নতি ঘটাতে চান তিনি। বাংলাদেশে নিকোলাস পুরানের মতো ব্যাটসম্যান তৈরি করতে চান। এশিয়া কাপের আগে প্রস্তুতি ক্যাম্পে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাকে এই দায়িত্ব দিতে যাচ্ছে।
তবে, তিন সপ্তাহে তিনি নিজের সবটা উজাড় করে দিলেও শেষ পর্যন্ত ফলাফল কী আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ঢাকায় আসার আগে মিয়িার সাথে তার পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়েছেন জুলিয়ান রস উড। সেই কথোপকথনের মূল অংশ নিচে তুলে ধরা হলো-
স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে কোচিং করানো কতোটা চ্যালেঞ্জিং?
জুলিয়ান: অন্যান্য সবকিছুর মতোই, খেলোয়াড়দের সঙ্গে যত বেশি সময় কাটানো যায়, ততই ভালো। এটা বিশ্বাসের ব্যাপার, খেলোয়াড়দের আপনার ওপর আস্থা রাখতে হবে, এবং আপনারও খেলোয়াড়দের ওপর আস্থা রাখতে হবে। এই বিশ্বাস গড়ে তুলতে সময় লাগে। তবে আমি তিন সপ্তাহের এই কার্যকালকে সত্যিই উপভোগ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এটা শুরু করার জন্য একটি ভালো সময়, এবং কে জানে এর থেকে কী আসতে পারে। তবে, এটি আমার উপর নির্ভর করে না। আমি শুধু গিয়ে আমার কাজ করতে পারি।
বিসিবি থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর আপনার প্রথম চিন্তা কী ছিল?
জুলিয়ান: আমি কিছুদিন ধরে এই বিষয়ে আলোচনা করছিলাম, কিন্তু এতদিন কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। আমাকে যা সত্যিই রোমাঞ্চিত করেছে তা হলো সিমো (প্রধান কোচ ফিল সিমন্স), যার সঙ্গে আমি আগে আফগানিস্তানে থাকাকালীন কাজ করেছি। সে জানে আমি কী করি। সে আমার কাজ সম্পর্কে অবগত। তাই আমার জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ ছিল, এবং আমি খুশি যে এটি এখন এসেছে।
বিপিএল এ কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং অনেক বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের সঙ্গে আপনার পরিচিতি থাকার কারণে দায়িত্বটি কতোটা সহজ হবে?
জুলিয়ান: আমি বিপিএল-এ কাজ করেছি এবং আমি কিছু খেলোয়াড়কে চিনি; তারা আমাকে চেনে। আমি মনে করি আমি সারা বাংলাদেশে বেশ পরিচিত, তাই তারা জানে আমি কী বিষয়ে এবং আমি কী করি। আমি অন্ধভাবে আসছি না, এবং খেলোয়াড়রাও আমার পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত। এটি একটি বড় সুবিধা। এখন আমার ওপর নির্ভর করছে খেলোয়াড়দের সঙ্গে সেই সম্পর্কগুলি গড়ে তোলা এবং তাদের আরও ভালো করে তোলা। এটা খুবই সহজ।
লিটন দাসের নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দল সম্পর্কে ধারণা আছে কি?
জুলিয়ান: আমি তাদের সাম্প্রতিক সিরিজগুলো অনুসরণ করেছি, যার মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলাও রয়েছে। তারা একটি প্রতিভাবান দল। আমি তা সরাসরি দেখেছি। একটি জিনিস যা আমি লক্ষ্য করেছি তা হলো ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট, যা প্রায়শই ১২৫ থেকে ১৩০ এর কাছাকাছি থাকে। যদি আমি সেই স্ট্রাইক রেট উন্নত করতে সাহায্য করতে পারি, তাদের আরও তথ্য দিতে পারি, এবং বল স্ট্রাইকিংয়ের ক্ষেত্রে আক্রমণের একটি কাঠামো দিতে পারি, তাহলে তা উপকারী হবে।
প্রশ্ন: একজন স্বাভাবিক নন-হার্ড-হিটারকে পাওয়ার হিটার ব্যাটসম্যান বানানো কতোটা কঠিন?
জুলিয়ান: এটি করার বিভিন্ন উপায় আছে; আপনি শুধু একই ছাঁচে সবকিছু করতে পারবেন না। খেলোয়াড়রা শারীরিকভাবে ভিন্ন ভিন্ন আকারের হয় এবং তাদের শক্তিও ভিন্ন ভিন্ন। বিশালদেহী খেলোয়াড়রা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে খুব বেশি নড়াচড়া না করেও জোরে মারতে পারে। খর্বদেহী খেলোয়াড়রা, এবং বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা সাধারণত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের মতো পেশি ও শরীরের জন্য পরিচিত নয়, তারা তাদের মুভমেন্ট, ছন্দ এবং সময়ের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই, আমি প্রতিটি খেলোয়াড়কে দেখব এবং তাদের আরও বিকল্প দেওয়ার চেষ্টা করব। তাদের যত বেশি বিকল্প থাকবে, ব্যাটিংয়ের সময় আতঙ্কিত হওয়ার সম্ভাবনা তত কম হবে।
একজন পাওয়ার-হিটিং ব্যাটসম্যান হতে কি শক্তি ছাড়াও কৌশলের প্রয়োজন?
জুলিয়ান: হ্যাঁ, আপনার কৌশল এবং শক্তি উভয়ই প্রয়োজন, অবশ্যই। কিন্তু বিশ্বে কিছু খেলোয়াড় আছে, যেমন নিকোলাস পুরান, যার সঙ্গে আমি কাজ করেছি। সে খুব বিশালদেহী নয়, কিন্তু তার মুভমেন্ট এবং সময়জ্ঞান চমৎকার। মানসিকতাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ; আপনার সঠিক উদ্দেশ্য থাকতে হবে। আপনি একজন বোলারের সেরা বল মারতে পারবেন না, কিন্তু যদি বোলার ভুল করে, তাহলে আপনি সেই বলটি সর্বোচ্চ ব্যবহার করছেন, তা ছয়, চার, দুই বা তিন রানই হোক না কেন। তাই হ্যাঁ, শক্তি ছাড়াও অনেক কৌশল জড়িত। কিছু খেলোয়াড় স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের চেয়ে বল জোরে মারবে; আমার কাজ হলো প্রত্যেকের ক্ষমতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেয়া।
কোন কোন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের পাওয়ার হিটার হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
জুলিয়ান: নির্দিষ্ট করে কারো নাম বলবো না। দূর থেকে, আমি কিছু পরিসংখ্যান দেখেছি। অনেক খেলোয়াড়ের স্ট্রাইক রেট ১২৫-১৩০। আমার ভূমিকা হল এই খেলোয়াড়দের সেই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, যাতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আতঙ্ক সৃষ্টির ক্ষমতা নিয়ে খেলতে পারে। বিশেষ করে পাওয়ার প্লেতে, আমি উপরের সারিতে এমন কিছু খেলোয়াড় চাই যারা প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে পারে এবং সেই এক্স-ফ্যাক্টর সরবরাহ করতে পারে। মাঝের ওভারগুলিতে, ডট বল কমানোর বিষয়ে, এবং তা করতে খেলোয়াড়দের বিকল্প দিতে হবে। আমার প্রধান ভূমিকা হবে এমন খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করা যারা দলের মধ্যে নির্দিষ্ট ভূমিকায় খেলতে সক্ষম। আমি এই বিষয়ে প্রধান কোচের সঙ্গে এখনও সময় কাটাইনি, তবে এটি আমার দৃষ্টিভঙ্গি: খেলোয়াড়দের স্বাধীনতা দেওয়া যাতে তারা সেই ভূমিকা পালন করতে পারে, প্রতিপক্ষের ওপর চাপ ফিরিয়ে দিতে পারে।
স্বল্প সময়ের মধ্যে এই ধরনের দায়িত্ব পালন করা কতোটা কঠিন?
জুলিয়ান: আমি মনে করি না এটি একটি কঠিন ভূমিকা, তবে এটি একটি চ্যালেঞ্জিং ভূমিকা। এবং এটি এমন একটি চ্যালেঞ্জ যা আমি সম্ভবত চেয়েছিলাম। যেমনটি আমি আগে বলেছি, এই বিষয়ে চার-পাঁচ বছর ধরে কথা হচ্ছিল, এবং এখন এটি সত্যিই ঘটেছে, যা দারুণ। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমাকে দলে আনার জন্য। এটি একটি লক্ষণ যে তারা জানে একটি সমস্যা আছে যা দেখতে হবে, এবং তারা আমাকে এনেছে। আমি সারা বিশ্বে কাজ করেছি, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, এবং বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিতে। তাই আমি জানি তাদের জন্য কী প্রয়োজন। হ্যাঁ, এটি একটি স্বল্পমেয়াদী চুক্তি হওয়ায় চ্যালেঞ্জিং হবে, এবং শেষ পর্যন্ত কী হবে তা কে জানে। তবে আমি অবশ্যই একটি পার্থক্য তৈরি করতে এখানে এসেছি।