Friday, 15 August 2025

ক্রমেই বাড়ছে দারিদ্র্যের হার, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রায় বড় ধাক্কা


অর্থনীতি ডেস্ক :

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭টি মূল লক্ষের অন্যতম দারিদ্র্য দূরীকরণ। বৈশ্বিক নানা সংকটের যাঁতাকলে পড়ে বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও দারিদ্র্য দূরীকরণ অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত ১০ বছরের প্রথম পাঁচ বছরে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমলেও পরবর্তী পাঁচ বছরে ক্রমেই এই হার বেড়েছে। ফলে প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য পূরণে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।


বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে যতদিন বিভিন্ন কাজে রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতি থাকবে ততদিন এসডিজির গোল অর্জন করা সম্ভব নয়। এর জন্য দেশের সব মানুষকে টার্গেট করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনানিতে হবে। শুধু প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট কিছু কাজ করলে হবে না। এছাড়া দেশের দুর্যোগপূর্ণ এলাকার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে বলেও মনে করেন তারা।


এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা হলো- জাতীয় দারিদ্র্যের হার ২০৩০ সালের মধ্যে ১২.৩ শতাংশের নিচে নিয়ে আসা এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নিয়ে আসা।


এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান অধিদফতরের সবশেষ তথ্য অনুসারে, ২০১৫ সালে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০১৯ সালে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২০ সালে ৪২ শতাংশ (করোনার প্রভাব), ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া বিশ্ব ফুড প্রোগ্রামের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ।


বিভাগ হিসেবে বরিশালে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যান্য বিভাগগুলোর মধ্যে রংপুর ও ময়মনসিংহে তুলনামূলক বেশি, আর ঢাকায় কিছুটা উচ্চ, রাজশাহী ও খুলনায় অপেক্ষাকৃত কম।


এদিকে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, অতি দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে সেটা আগামী বছর ৯ দশমিক ৩ শতাংশে উঠবে। এছাড়া জাতীয় দারিদ্র্য হারও কিছুটা বাড়বে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী হুমায়ুন কবির ঢাকা মেইলকে বলেন, দারিদ্র্য দূর করতে আগে বিভিন্ন সাময়িক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি। দারিদ্র্য কমানোর জন্য সবাইকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। দেশের দারিদ্র্য দূর করতে শুধু প্রজেক্ট রিলেটেড কাজ করে তা সম্ভব নয়। দেশের সবার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।


এই বিশেষজ্ঞ বলেন, আগের সময়গুলো রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতি হয়েছে, বর্তমানেও হচ্ছে। দেশে যতদিন এমন স্বজনপ্রীতির পক্ষ-বিপক্ষ থাকবে ততদিন এসডিজির গোল পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কিছু ব্যক্তি দ্রুত কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দরিদ্র গোষ্ঠীর কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না, তাই সামগ্রিক অর্থনীতিতে তারা কোনো অবদান রাখার সুযোগ পাচ্ছে না।


এই অধ্যাপক আরও বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ কিছু এলাকা রয়েছে। তাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের জন্য সেভাবে কিছু করা হয় না। শুধু রিলিপ আকারে বিভিন্ন সময় অনুদান দেওয়া হয়। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাসস্থানসহ অন্যান্য ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেই। এভাবে কাজ করে উন্নয়ন সম্ভব নয়। এসব জায়গায় দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করতে হবে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, টেকসই উন্নয়নের সব লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচুর প্রচেষ্টা দরকার। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিকসহ নানা রকম অস্থিরতায় কোনো কিছুই ঠিকভাবে হয় না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে একটা গোষ্ঠী বিভিন্ন সেক্টরে লুটপাট করেছে। 


তাদের সময়ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হয়নি, এখনো হচ্ছে না। এটি না হলে দেশের দরিদ্রতার হার কমানো সম্ভব নয়। আর বিভিন্ন দিকের অস্থিরতায় এটি আরও বাড়ছে সম্ভবত। সার্বিক বিষয়ে অগ্রগতি জানার জন্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সচিবকে ফোন করা হলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।