রাজনীতি প্রতিবেদক
ভারতে আশ্রয় নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল অলি আহমদ বীরবিক্রম (অব.)। তিনি বলেছেন, ওই দেশে বসে তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত। অন্যদিকে ভারত সরকার বলে, আমরা বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু এবং সুপ্রতিবেশী। সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা, বর্তমান ভারত সরকার বাংলাদেশের বন্ধু নয় বরং দেশদ্রোহীদের বন্ধু। এর পরিণাম ভারতের জন্য শুভ হবে না।
মঙ্গলবার (১২আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মগবাজারের এলডিপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।
এলডিপির প্রেসিডেন্ট বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বে দেশদ্রোহীদের গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, অন্যথায় কখনও সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ শেখ হাসিনা ভারতে বসে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে এবং তার লোটাবাহিনীও সরকারের অভ্যন্তরে সক্রিয়।
অলি আহমদ বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে, যে সমস্ত কর্মকর্তা কর্মচারী দায়িত্বরত হবে, তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় স্বৈরাচারী সরকারের মদদপুষ্ট গুন্ডাবাহিনীরা ভোট কেন্দ্রে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এর কোন বিকল্প নাই। এই ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নতুনভাবে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
শেখ হাসিনার দোসরা এখনও চাকরিতে বহাল আছে জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, ‘এর জবাবদিহিতা কে করবে। তাদের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে দেশবাসীকে কে রক্ষা করবে। সরকারি, বেসরকারি স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থাগুলোতে কাজের চরম ধীরগতি। গত এক বছরে কোন কোন সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ে কাজের তেমন কোন অগ্রগতি নাই বললেই চলে।’
এলডিপির শীর্ষনেতা বলেন, সমগ্র দেশে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি। কিছু কিছু মন্ত্রণালয় দেউলিয়াপনায় ভুগছে। কারণ এখনও স্বৈরাচারী সরকারের মদদপুষ্ট অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে বসে আছে। পৃথিবীতে প্রথমবার শুনলাম, নির্বাচনের পূর্বে লটারির মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদেরকে বদলি করা হবে। মনে হয় অনেকে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। বদলির জন্য লটারী কোন সমাধান হতে পারে না। বরং বদলি করা হবে নির্দিষ্ট এলাকার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে। লক্ষ্য হওয়া উচিত অস্ত্রধারী এবং গুন্ডারা যেন নির্বাচন প্রভাবিত করতে না পারে।
অলি আহমদ বলেন, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন আমলে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত মিথ্যা মামলা রুজু করা হয়েছে, ওই সমস্ত মামলাগুলো এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয় নাই। আশা করি উপদেষ্টা এই ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
স্বৈরাচারী সরকারের গুণ্ডাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিগৃহীত নেতা কর্মীরা বিগত এক বছরে যেসমস্ত মামলা রুজু করেছে, এখনও পর্যন্ত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করা হয় নাই। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুর্নীতিবাজ এবং দেশদ্রোহীদের খুঁজে বের করতে হবে, তাদেরকে কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যে বা যারা স্বৈরাচারদের সাহায্য করবে, তারা পরাজিত হবে এবং ভারতের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হবে। দুর্নীতি এখনও বন্ধ হয় নাই। আমাদের প্রত্যাশা দুর্নীতি দমন কমিশনকে তাদের কর্মকান্ডের পরিধি আরো বৃদ্ধি করতে হবে।
অলি আহমদ বলেন, শোনা যাচ্ছে, দেশদ্রোহী আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক সদস্য শেষ পর্যন্ত তাদের পিত্রালয় ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় তারা ভারতের সক্রিয় সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অফিস প্রতিষ্ঠা করে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে ও বাংলাদেশকে ধ্বংস করার কাজে তারা লিপ্ত। অন্যদিকে ভারত সরকার বলে, আমরা বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু এবং সুপ্রতিবেশী। সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা, বর্তমান ভারত সরকার বাংলাদেশের বন্ধু নয় বরং দেশদ্রোহীদের বন্ধু। এর পরিনাম ভারতের জন্য শুভ হবে না।
ইদানিং ফার্মেসীগুলিতে বিভিন্ন ধরণের জরুরি ঔষধ পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, সঠিক চিকিৎসাও নাই। তাহলে দেশের মানুষের কী অবস্থা হবে, কোথায়. যাবে? এর সমাধান বা কোথায়? আশাকরি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এই ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে। বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক বিনা অজুহাতে তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরি থেকে বের করে দিচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টার উচিত এ ব্যাপারে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। বিগত এক বছরে কতজন নতুন চাকুরী পেয়েছে এবং কতজনকে ব্যাংক থেকে বের করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এ ব্যাপারে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাশা করছি। অথচ দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও শেখ হাসিনার দালালেরা বহাল তবিয়তে আছে। অনেক উপদেষ্টা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, লে. জেনারেল (অব.) ড. চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, ড. নেয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, হামিদুর রহমান খান, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহে আলম চৌধুরী, চেয়ারম্যানের গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা সালাহ উদ্দিন রাজ্জাক, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব বেলাল হোসেন মিয়াজী প্রমুখ।