রাজনীতি প্রতিবেদক :
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে ২০২৪ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টির মতো বড় দলও রয়েছে। তবে সব রাজনৈতিক দলকে ছাপিয়ে আয়-ব্যয়ে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগের পুরো মেয়াদে কোণঠাসা এবং অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে থাকা দলটি বর্তমানে সক্রিয় সবচেয়ে বড় দল বিএনপির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ আয় করেছে। আর বিএনপির চেয়ে জামায়াতের ব্যয় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৮টি দল আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে। যেখানে বিএনপির আয় দেখানো হয়েছে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪২ টাকা। আর ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৪ হাজার ৮২০ টাকা। এছাড়াও ব্যাংকে ১০ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার ১৯ টাকা জমা রয়েছে।
জাতীয় পার্টি আয় দেখিয়েছে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ টাকা। আর ব্যয় দেখিয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪ টাকা।
আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) আয় করেছে এক কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৪ টাকা। গণঅধিকার পরিষদের আয় হয়েছে ৪৬ লাখ ৪ হাজার ৩০০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৮ টাকা। এছাড়া বাকি দলগুলোর আয়-ব্যয় জামায়াতের চেয়ে অনেক কম।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালে জামায়াতে ইসলামীর আয় ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ২৯৯ টাকা। আর ব্যয় দেখিয়েছে ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৭ টাকা। সে হিসাবে সব দলের আয়-ব্যয় পর্যালোচনা করলে শীর্ষ রয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার স্বাক্ষরিত ২০২৪ সালের পঞ্জিকা বছরে দলীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হয়েছে। সেই আর্থিক বিবরণ থেকে জানা যায়, গত বছরে দলটির প্রারম্ভিক স্থিতি ছিল ১০ কোটি ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ১০১ টাকা। আর আয় হয়েছে ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ২৯৯ টাকা। ব্যয় হয়েছে ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৭ টাকা। তবে দলটির কোনো ব্যাংক হিসাব নেই বলে জানানো হয়েছে আয়-ব্যয়ের এই বিবরণীতে।
কোন খাতে কত আয় জামায়াতের
কর্মী ও সদস্যদের চাঁদা থেকে জামায়াত আয় করেছে ১৬ কোটি ৫৬ লাখ ৪২ হাজার ১৬২ টাকা। কার্যনির্বাহী কমিটি অথবা উপদেষ্টা পরিষদের চাঁদা অথবা অন্যান্য চাঁদা ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ১৪৯ টাকা। বিভিন্ন ব্যক্তি অথবা সংস্থার কাছ থেকে অনুদান পেয়েছে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৯ টাকা। দলের পত্রিকা, সাময়িকী, বইপুস্তক বিক্রি থেকে আয় ৯ লাখ ১১ হাজার ২৯০ টাকা। অন্যান্য চাঁদা থেকে দলটি আয় করেছে ৭ লাখ ২১ হাজার ৭৯ টাকা। মোট আয় ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ২৯৯ টাকা।
কোন খাতে কত ব্যয় করেছে দলটি
কর্মীদের বেতন ভাতা ও বোনাসে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৭ হাজার ৮৭৩ টাকা। আবাসন ও প্রশাসনিক খরচ হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৭ হাজার ৪৯৫ টাকা।
বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাসসহ বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করেছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ১৮ টাকা। ডাক, টেলিফোন, ইন্টারনেট, কুরিয়ার সার্ভিস, পত্রিকা বাবদ ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৬ টাকা।
প্রচারণা ও পরিবহনে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৬ হাজার ৫৬৩ টাকা। যাতায়াত বাবদ খরচ হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ১ হাজার ৭৭৬ টাকা। জনসভা, পথসভা, ঘরোয়া বৈঠকে ব্যয় হয়েছে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৫ টাকা। প্রার্থীদের অনুদান দেওয়া হয়েছে ১১ কোটি ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪২০ টাকা।
ধর্মীয় বিশেষ অনুষ্ঠান বাবদ ব্যয় ৩২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৫০ টাকা। অন্যান্য ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮৯ টাকা।
জানা যায়, গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি দল আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে। সিপিবিসহ ১০ দল সময় চেয়েছে। আর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টিসহ ১১ দল কোনো সাড়া দেয়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি গত ২ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন পাওয়ায় তাদের আর অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
সময় চেয়েছে-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।
সাড়া দেয়নি-কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন), গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাপ, তৃণমূলক বিএনপি, বাংলাদেশ জাসদ ও গণসংহতি আন্দোলন।
২০০৮ সালের নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, কোনো দল পরপর তিনবার আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে সেই দলের নিবন্ধন বাতিল করার বিধান আছে আইনে। সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়ায় এক যুগ পর আয়-ব্যয়ের হিসাব দিলো দলটি। আর নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় প্রথমবারের মতো হিসাব দিতে হলো না কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে।