কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা শহর লাগোয়া শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠটিতে দীর্ঘ নয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে খেলাধুলার সকল কার্যক্রম। মেলার নামে দোকান ও সার্কাসের সরঞ্জামসহ অন্যান্য সামগ্রী মাঠটিতে পড়ে থাকায় খেলা ও অনুশীলন করতে পারছেন না স্থানীয় খেলোয়াড়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর জুন মাসে হস্ত কুটির শিল্প ও পণ্য মেলার জন্য উপজেলা প্রশাসন উলিপুরের মিনি স্টেডিয়ামটি ভাড়া দেয়। এরপর থেকে নয়মাস ধরে খেলার মাঠ দখলে রাখে মেলা কর্তৃপক্ষ। পরে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদ হস্ত কুটির শিল্প ও পণ্য মেলা শুরু করে । গত ১২ ফেব্রুয়ারি মেলা শেষ হলেও মেলার সরঞ্জামাদি সরিয়ে না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেলোয়াড় ও উপজেলার ক্রীড়া সংগঠকরা।
উলিপুর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানায়, প্রায় দুই বছর আগে স্থানীয় খেলোয়াড়দের অনুশীলন ও উপজেলা পর্যায়ে খেলাধুলা পরিচালনার জন্য এ মিনি স্টেডিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৪২ লাখ টাকা। কিন্তু গত বছর এই মিনি স্টেডিয়াম মাঠ উপজেলা প্রশাসন মেলার জন্য দখলে নিলে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গত বছর জুনে অনুষ্ঠিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের (অনুর্দ্ধ-১৭) খেলা মেলার কারণে উপজেলা শহর থেকে দূরবর্তী ধামশ্রেনী ইউনিয়নের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে নয় মাস ধরে খেলার মাঠ বন্ধ থাকলেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। মেলা শেষ হলেও গত ৮ দিন ধরে মেলার সামগ্রী স্টেডিয়াম মাঠ থেকে সরানো হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুন মাস থেকে স্টেডিয়াম মাঠে খেলাধুলা বন্ধ রেখে, মাঠে করা হয় মেলার আয়োজন। মাসের পর মাস মাঠটি বন্ধ রাখার পর গত ১৯ জানুয়ারি মেলা শুরু হয়। মেলা শুরুর কয়েকদিন পর থেকেই বিভিন্ন রকমের পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিদিন র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি করা হয়। এ নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা শুরু হলে সাময়িক ভাবে গত ১২ ফেব্রুয়ারি মেলা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে মেলা কর্তৃপক্ষ পুনরায় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পুরোদমে মেলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এ কারণে মেলার নামে দখল হওয়া খেলার মাঠ এখনো উদ্ধার হয়নি।
উলিপুর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার খেলোয়াড় রিয়াজুল জানান, দীর্ঘ ৯ মাস ধরে খেলার মাঠটি মেলার দখলে থাকায় আমরা খেলাধুলা ও অনুশীলন কোনোটাই করতে পারছি না। আমরা চাই দ্রুত খেলার মাঠ থেকে মেলার সরঞ্জামাদি সরিয়ে নেয়া হোক। আর কোনোদিনও যেন খেলার মাঠে এমন মেলার আয়োজন করা না হয়।
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গত বছরের জুন থেকে মেলার কারণে এই মাঠে খেলোয়াড়দের অনুশীলন বন্ধ রয়েছে। তবে মেলা ও সার্কাসের বিষয়ে আমার সাথে কারও কোনো আলোচনা হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই খেলার মাঠটির সভাপতি। খেলার মাঠে আরো মেলা চলবে কি না সেটি তিনি ভালো বলতে পারবেন।
মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু জানান, উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চালানো হয়েছে। তারপরের ঘটনা আমার জানা নেই। আমি শুনেছি মেলার পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন প্রশাসনের কাছে মেলাটি পুনরায় চালানোর অনুমতি নিতে চাচ্ছেন। নতুন করে মেলা শুরু হবে কি না সে বিষয়ে তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মাহমুদুর রহমান জানান, মেলা চালানোর অনুমতি এক সপ্তাহ পূর্বে শেষ হয়েছে। তাদের দ্রুত মাঠ খালি করতে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। এরপরেও যদি তারা বিলম্ব করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।