দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ভারতীয় চোরাচালানী পণ্য জব্দ - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

.jpg

Wednesday, 27 August 2025

প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ভারতীয় চোরাচালানী পণ্য জব্দ


জহির শাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর এলাকায় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাচারকৃত প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় চোরাচালানী পণ্য জব্দ করেছে সরাইল ব্যাটালিয়ন (২৫ বিজিবি)। বুধবার (২৭ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত এক বিশেষ অভিযানে এই সাফল্য অর্জন করে বিজিবির বিশেষ টহলদল। জব্দকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে উন্নতমানের ভারতীয় সানগ্লাস এবং সিগারেট, যার মোট বাজার মূল্য প্রায় ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার ১৫০ টাকা। এই অভিযানের মাধ্যমে সীমান্তে চোরাচালান রোধে বিজিবির কঠোর অবস্থান পুনরায় প্রমাণিত হয়েছে।



সরাইল ব্যাটালিয়ন (২৫ বিজিবি) এর অধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্রানজিট ক্যাম্পের বিশেষ টহলদল গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ইব্রাহিমপুর এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় তারা ৩,৮৫২ পিস ভারতীয় উন্নতমানের সানগ্লাস এবং ৯১৭ প্যাকেট সিগারেট জব্দ করে। জব্দকৃত এসব পণ্য আখাউড়া কাস্টমস অফিসে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়া, গত ২৫ আগস্ট আরেকটি অভিযানে ২১৭৫ কেজি ভারতীয় ফুচকা এবং ৮১০ কেজি জিরা জব্দ করা হয়, যার মূল্য প্রায় ২৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। এই পণ্যগুলোও আখাউড়া কাস্টমস অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে।



সরাইল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহমেদ জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা এবং হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে চোরাচালান ও মাদক পাচার রোধে সরাইল ব্যাটালিয়ন সর্বদা সতর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, “ভারত থেকে কোনো ধরনের অবৈধ পণ্য বা মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সরাইল ২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের নিয়মিত অভিযানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চোরাচালানী পণ্য জব্দ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গত ৬ আগস্ট বিজয়নগরের বুধন্তী এলাকায় বিজিবি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টাকার চোরাচালানী পণ্য আটক করা হয়, যার মধ্যে ছিল মোবাইল ফোন, ওষুধ, খাদ্যসামগ্রী, কাপড়, কেমিক্যাল ও মসলা। এছাড়া, গত ১৮ আগস্ট বুধন্তী এলাকায় আরেক অভিযানে ৭৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় কসমেটিকস ও আইবল ক্যান্ডি জব্দ করা হয়। এসব অভিযানে জব্দকৃত পণ্যগুলো আখাউড়া কাস্টমস হাউসে জমা দেওয়া হয়েছে।  



ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো ভারত থেকে চোরাচালান ও মাদক পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে বিজয়নগরের সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন মাদক পাচারের কেন্দ্র হিসেবে কুখ্যাত। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে নিয়মিত গাঁজা, ফেনসিডিল, কসমেটিকস, মসলা এবং অন্যান্য পণ্য অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এই অবৈধ কার্যক্রম রোধে বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।  



স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি ও বিজিবির নিয়মিত অভিযানের ফলে চোরাচালানের প্রবণতা কিছুটা হ্রাস পেলেও, সম্পূর্ণ নির্মূল করা এখনও সম্ভব হয়নি। তারা মনে করেন, স্থানীয় সম্প্রদায়ের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশাসনের আরও কঠোর পদক্ষেপ এই সমস্যা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।



সরাইল ২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহমেদ আরও জানান, “আমরা কেবল চোরাচালান রোধে নয়, সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এবং টহল কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।” তিনি স্থানীয় জনগণের কাছে সীমান্তে অবৈধ কার্যকলাপের তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতার আহ্বান জানান।


এই ধরনের অভিযান সীমান্তে অবৈধ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চোরাচালান পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে সীমান্তে নজরদারির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ আরও জোরদার করা প্রয়োজন। বিজিবির এই অভিযান স্থানীয় জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে, এবং তারা আশা করছেন যে, এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে সীমান্ত এলাকায় অবৈধ কার্যকলাপ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।