দূরন্ত বিডি ডটকম --------------------------------স্বাগতম ২০২৪--------------------------- মানবতার কথা বলে ------------------------------------------------------ durontobd.com ইসরায়েল–ইরান সংঘর্ষে চীন ও রাশিয়ার কূটনৈতিক ‘শান্তির বার্তা’ এবং বৈশ্বিক প্রভাব - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

ইসরায়েল–ইরান সংঘর্ষে চীন ও রাশিয়ার কূটনৈতিক ‘শান্তির বার্তা’ এবং বৈশ্বিক প্রভাব


জহির শাহ্ , স্টাফ রিপোর্টার

বিশ্বরাজনীতির সবচেয়ে জটিল ও বিতর্কিত প্রান্তে ফের উত্তেজনা চরমে উঠেছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত নতুন মাত্রা পেয়েছে, যেখানে দ্বিপাক্ষিক সংঘর্ষের ছাপ শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি দ্রুত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।


এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক মহাসত্ত্বা চীন ও রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে একযোগে শান্তির বার্তা দিয়েছেন। তারা সংঘাত তীব্রতা কমিয়ে আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের পক্ষে শক্তিশালী আহ্বান জানিয়েছেন।


চীনের কূটনৈতিক আপিল:

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা ইসরায়েল ও ইরানসহ সকল পক্ষকে জোর দিয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি যেন তারা অবিলম্বে উত্তেজনা কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। এটি শুধু আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্যও অত্যন্ত জরুরি।”


গুও জিয়াকুন আরও উল্লেখ করেন, “এই সংঘাতের অব্যাহতিবৃদ্ধি বিশ্বশক্তি এবং অর্থনীতির ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আলোচনার মাধ্যমেই দ্বন্দ্বের টেকসই সমাধান সম্ভব।”


চীনের বক্তব্যের অন্যতম মূলভিত্তি হলো, সংঘাতটি শুধুমাত্র দুই দেশের মধ্যকার বিষয় নয়, এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামো ও ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যের জন্য বড় হুমকি। ১৩ জুন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়েছিল যে, তারা ইরানের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা করবে এবং যেকোনো বাইরের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানাবে।


রাশিয়ার ভাবমূর্তি ও কূটনীতি:

অন্যদিকে, রাশিয়া মস্কো থেকেও একই রকম আশঙ্কাজনক সতর্কতা এসেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সংঘর্ষকে “আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘ সনদের বিরুদ্ধে কার্যকলাপ” হিসেবে অভিহিত করেছে। মস্কো উল্লেখ করেছে যে, এই সংঘর্ষ যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে তা একটি বৃহৎ আঞ্চলিক যুদ্ধের অগ্রদূত হতে পারে যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকট ডেকে আনবে।


বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়ার অবস্থান শুধু রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং তারা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে।


আন্তর্জাতিক নিরাপত্তায় প্রভাব ও ভবিষ্যৎ চিত্র:

বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, শরণার্থী সংকটের তীব্রতা, এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চেইনের ব্যাঘাত এই সংঘাতের প্রত্যক্ষ ফল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এই উত্তেজনা শুধুমাত্র অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকলে পৃথিবীর শান্তি নিশ্চিত করা মুশকিল।


চীন ও রাশিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলোর এই সতর্ক সংকেত বিশ্ব নেতাদের জন্য ‘ঘন্টার ঘণ্টা’ স্বরূপ। তাদের বক্তব্যে পরিস্কার যে, সামরিক উত্তেজনা বাড়ানোর পরিবর্তে কূটনৈতিক সংলাপ এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানে মনোযোগ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।


বিশ্লেষকরা আরও মন্তব্য করছেন, এই সংঘাতের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কাঠামোর গুরুত্ব এবং একাধিক মহাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের জটিলতা আবার একবার দৃশ্যমান হলো। এই পরিস্থিতি দ্রুত সামলাতে না পারলে, পুরো বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।


ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। চীন ও রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে দুই পক্ষকে শান্তি প্রক্রিয়ায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বিশ্বের সামনে মানবিক ও কূটনৈতিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।


এই মুহূর্তে বিশ্ববাসীর আশা, মধ্যপ্রাচ্যে যেন দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো মিলেমিশে এই উত্তেজনা বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।