দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ৩ বছর পিছিয়ে পড়ার দাবি - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫

ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ৩ বছর পিছিয়ে পড়ার দাবি


জহির শাহ্

*যুদ্ধ নয়, এ যেন ইতিহাসের এক নতুন বিভীষিকাময় অধ্যায়!*

একটা সময় ছিল যখন পারমাণবিক যুদ্ধের ভয় ছিল শুধু কল্পকাহিনিতে সীমাবদ্ধ। কিন্তু আজ, ২০২৫ সালের ২১শে জুন, আমরা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। ইসরায়েল কর্তৃক ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে "দুই থেকে তিন বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে" বলে দাবি করার পর মধ্যপ্রাচ্য যেন এক জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনা শুধু একটি সামরিক আঘাত নয়, বরং decades old শত্রুতায় এক নতুন মোড়। তেহরানের আকাশে আজ কেবলই ধোঁয়া আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটাই প্রশ্ন—এটা কি *"প্রতিরক্ষা", নাকি *"আক্রমণাত্মক বর্বরতা"**?


ইসরায়েলের হামলা: কৌশল ও লক্ষ্যবস্তু -

গার্ডিয়ান, আল-জাজিরা এবং মিডল ইস্ট আই-এর মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ২০ জুন রাতে ইসরায়েলিরা অত্যাধুনিক ড্রোন ও মিসাইলের মাধ্যমে ইরানের বেশ কয়েকটি সংবেদনশীল পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানে। সুনির্দিষ্টভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়:

*নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্ল্যান্ট:* ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।

*ইসফাহান রিসার্চ সেন্টার:* পারমাণবিক গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।

*পারমাণবিক প্রকৌশল ভবন ও ডেটা স্টোরেজ সেন্টার:* স্পর্শকাতর তথ্য ও প্রযুক্তিগত সরঞ্জামের কেন্দ্রস্থল।


বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই হামলার ফলে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতির একটি বিশাল অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার জন্য এক বিরাট ধাক্কা।


ইসরায়েলের দাবি: ‘বিশ্বকে রক্ষা করার দায়িত্ব’ -

বর্বর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে:

“আমরা ইরানের পারমাণবিক প্রস্তুতি অন্তত ২-৩ বছর পিছিয়ে দিয়েছি। বিশ্বকে রক্ষা করতে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।”


ইসরায়েল এই আক্রমণকে "প্রিভেন্টিভ স্ট্রাইক" বা প্রতিরোধমূলক হামলা হিসেবে তুলে ধরছে, যেখানে তারা দাবি করছে যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য একটি বড় হুমকি ছিল। তাদের বক্তব্য, এই হামলা আগ্রাসন নয়, বরং আত্মরক্ষামূলক। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এক সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এমন সামরিক অভিযান কতটা ন্যায়সঙ্গত?গাঁজার পরে ইরান, এভাবে আর কত মুসলিম দেশকে ইসরায়েল এর অত্যাচার মুখ বুঁজে সহ্য করতে হবে।


তেহরানের কড়া প্রতিক্রিয়া: 'ইসরায়েল এর বর্বরতা আমাদের প্রতিজ্ঞা দৃঢ় করবে' -

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাদের কড়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে:

“ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ছড়াতে চায়। এই বর্বরতা কেবল আমাদের পিছিয়ে দেয়নি, বরং আমাদের প্রতিজ্ঞাকে আরও দৃঢ় করেছে।”


মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরে ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পিরহোসেইন কোলিভান্দ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানিয়েছেন:


“ইসরায়েলের হামলায় পাঁচটি হাসপাতাল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং বহু রোগী শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছেন।”


হাসপাতালের মতো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা সভ্য সমাজের মূল ভিত্তিকে কাঁপিয়ে দেয়।


বিশ্লেষণ: এই হামলার ভূরাজনৈতিক ও মানবিক তাৎপর্য -

বিশ্ব রাজনীতি বিশ্লেষকরা এই হামলাকে কেবল "সার্ভার রুম ধ্বংস" হিসেবে দেখছেন না, বরং এটিকে দেখছেন একটি গভীর "মনস্তাত্ত্বিক স্ট্রাইক" হিসেবে। তাছাড়া মুসলিম দেশ সমূহকে নিশ্চিহ্ন করার প্রজেক্ট ও বলা যায় ইসরায়েল এর হামলাগুলোকে। এর মাধ্যমে শুধু প্রযুক্তিগত ক্ষতিই হয়নি, বরং ইরানের রাষ্ট্রীয় মনোবলে এক বিশাল ধাক্কা লেগেছে। এর পেছনে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহকে দুর্বল করার ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।


আজ সবচেয়ে বড় প্রশ্নগুলি বারবার সামনে আসছে -

*জাতিসংঘ কি সত্যিই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে, নাকি নীরব দর্শকের ভূমিকায় সন্তুষ্ট?*

*মুসলিম বিশ্ব কি শুধু বিবৃতি আর নিন্দা জানিয়েই ক্ষান্ত থাকবে, নাকি কার্যকর পদক্ষেপ নেবে?*

*আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো কি হাসপাতালের ওপর এমন বর্বর হামলা নিয়ে সোচ্চার হবে, নাকি নিজেদের বিবেককে অবদমিত করবে?*


মুসলিম বিশ্বের দায়: উম্মাহর অস্তিত্বের প্রশ্ন -

আজকের এই সংকট শুধু ইরানের সমস্যা নয়। এটি সমগ্র মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্বের প্রশ্ন। যেভাবে গাজার নিষ্পাপ শিশুদের কান্না পশ্চিমা মিডিয়ায় তেমনভাবে ঠাঁই পায় না, ঠিক সেভাবেই ইরানের হাসপাতালের ধোঁয়ায় মানুষ যখন শ্বাসকষ্টে ছটফট করছে, তখন তথাকথিত বিশ্ব নেতৃত্ব যেন শীতল কক্ষে বসে চা খাচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্ব যে ইসলামিক দেশসমূহকে ধ্বংসের এক গভীর চক্রান্তে লিপ্ত, তা এই ঘটনায় আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।


যুদ্ধ নয়, মানবতা প্রয়োজন 

দুরন্ত বিডি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, পারমাণবিক সক্ষমতা কিংবা সামরিক শক্তির দম্ভ দিয়ে নয়—কেবল শান্তি, ন্যায়বিচার ও আন্তঃধর্মীয় সহাবস্থানের ভিত্তিতে এবং মুসলিম দেশসমূহের একতাবদ্ধতার মাধ্যমেই একটি টেকসই ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।


আজকের এই ন্যাক্কারজনক হামলা যদি বিশ্ববিবেককে না জাগায়, তাহলে আগামীকাল হয়তো আরেকটি মুসলিম রাষ্ট্র ছারখার হবে, আর আমরা কেবল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করব। হিংসা কখনোই নিরাপত্তার সমার্থক হতে পারে না। মধ্যপ্রাচ্য যদি আগুনের শিখায় পুড়ে, তবে তার ছাই আমাদের হৃদয়েই জমবে। গাজার পর ইরান, এরপর কোন মুসলিম দেশ, ইসরায়েল ও তার সহযোগী দেশগুলোর হামলার শিকার হবে, তা একমাত্র আল্লাহ্ মাবুদই জানেন।


বিশ্ব জেগে উঠুক, মানবতা আবার মুখ ফিরিয়ে না নিক। আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করুক, আমীন!*