স্টাফ রিপোর্টার জহির শাহ্
ঢাকা, আমাদের প্রিয় রাজধানী, দেশের হৃদয় কেন্দ্র—আজ বায়ুদূষণের কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন। এটি শুধু একটি শহরের সমস্যা নয়, বরং গোটা জাতির স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের এক বড় চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন হলেও, পরিবেশের অগ্রগতির পাল্লা এখনও পিছুটান খাচ্ছে। তাই, আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এসে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে।
দূষণের প্রকৃতি ও প্রভাব:
ঢাকার বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাসের মাত্রা উদ্বেগজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এসব দূষণ স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে—বিশেষ করে বাচ্চা, বৃদ্ধ ও শ্বাসকষ্ট রোগীদের জন্য।
ধূলা ও বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি, হৃদরোগসহ নানারকম জটিলতা বাড়ছে। অর্থনৈতিক ক্ষতি হিসাব করলে, কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে, চিকিৎসার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই বায়ুদূষণ কেবল স্বাস্থ্য নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়নেরও বড় বাধা।
দূষণের উৎস: একাধিক দিক থেকে সংকট
ঢাকায় দূষণের মূল উৎস হিসেবে শনাক্ত হয়েছে: পুরাতন ও অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণকৃত যানবাহন: ২০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে চলা গাড়িগুলো থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়, যা বায়ুদূষণের বড় কারণ।
নির্মাণ কাজে ধূলা: নগরীর তীব্র উন্নয়নের ফলে অনেক নির্মাণকাজ চলছে, যেখান থেকে বিশাল পরিমাণ ধূলা ছড়িয়ে পড়ে।
অনুমোদনহীন ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা ছাড়া ইটভাটা: অনেক ইটভাটা আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে বেশি দূষণ সৃষ্টি করে।
শিল্প কারখানার দূষণ: নিয়মিত নজরদারি না থাকায় অনেক কারখানা থেকে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে না।
এসব কারণ মিলিয়ে ঢাকা শহরের বাতাসে বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা আজকের অত্যাবশ্যক।
সরকারি উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা:
সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী যানবাহনের নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ধূলা কমানোর জন্য নির্মাণ সাইটে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ইটভাটা ও শিল্প কারখানাগুলোতে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রণোদনা এবং কঠোর তদারকি চলছে।
এসব পদক্ষেপ ইতোমধ্যে কিছু ফলও দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও কার্যকর হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে কাজ হচ্ছে, যা দেশের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্ব বহন করে।
বিভিন্ন দলের পরামর্শ ও সমালোচনা:
রাজনৈতিক দলসমূহও দূষণ কমাতে সরকারের পরিকল্পনাগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, পরিবেশ রক্ষায় আরো স্বচ্ছতা ও তৎপরতা দরকার। আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগে জোর বাড়ানো উচিত এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বজনীন মত অনুযায়ী, দূষণ মোকাবেলায় সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে নাগরিকেরা স্বস্তিতে শ্বাস নিতে পারে। তারা সরকারের কার্যক্রমকে সহযোগিতা জানিয়ে সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
নাগরিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণের গুরুত্ব
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শুধু সরকারই নয়, নাগরিকরাও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। দূষণ ছড়ানো যানবাহন বা অবৈধ নির্মাণ কাজ দেখলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো, প্লাস্টিক ও বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা, গাছ লাগানো ও পরিবেশবান্ধব জীবনধারা অনুসরণ করা সবাইকে সচেতন হতে হবে।
স্কুল-কলেজ পর্যায়ে পরিবেশ শিক্ষা বৃদ্ধি, সামাজিক মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া দূষণ মোকাবেলা অসম্ভব।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা:
ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে চলমান উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, গবেষণা ও উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় পরিবেশ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সরকার, সকল দল, ব্যবসায়ী সংস্থা, নাগরিক ও শিক্ষাবিদ সবাইকে মিলিত হয়ে কাজ করতে হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
ঢাকা শহরকে সুস্থ, সবুজ, বাসযোগ্য ও উন্নত নগরীতে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন অর্জনে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।
শেষ কথা:
ঢাকার বাতাস আজ আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা—পরিবেশ রক্ষায় আমরা কতটুকু দায়বদ্ধ, কতটুকু সচেতন। সরকার ও রাজনৈতিক দলসহ সকল অংশীদারের ঐক্যমত্য ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে আমরা এই পরীক্ষা পাস করব।
আমাদের ছোট ছোট প্রয়াস একসঙ্গে মিলিত হয়ে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। একটি স্বচ্ছ, সুস্থ ও সুন্দর ঢাকার স্বপ্ন দেখা আর সেটা বাস্তবায়ন করার সময় এখনই।
আজ যদি আমরা সঠিক পথে হাঁটি, আগামী প্রজন্ম ধন্য হবে। কারণ পরিবেশ রক্ষা মানেই জীবন রক্ষা।