দূরন্ত বিডি ডটকম --------------------------------স্বাগতম ২০২৪--------------------------- মানবতার কথা বলে ------------------------------------------------------ durontobd.com জুলাইয়ের মধ্যে সব বিমানবন্দরেই কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

জুলাইয়ের মধ্যে সব বিমানবন্দরেই কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে


জাতীয় প্রতিবেদক :

বাংলাদেশ থেকে হঠাৎ করেই ভারত ট্রানজিট বন্ধ করে দেওয়ার পর বিপাকে পড়তে হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের শীর্ষপর্যায়ে একাধিক বিশেষ বৈঠক হয়েছে। দেশের সবকটি বিমানবন্দরে কীভাবে কার্গো বিমান চালু করা যায়, তার উপায় বের করার নির্দেশ দেওয়া হয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক)। আর নির্দেশনা পেয়ে সংস্থাটি দফায় দফায় বৈঠক করেছে। 


সংস্থাটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের সক্ষমতা জানান দিতে সব বিমানবন্দরেই কার্গো ফ্লাইট চালু করা হবে। তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশাপাশি কক্সবাজার বিমানবন্দরেও ফ্লাইট উঠানামা করবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোও কার্গো ব্যবহারে উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে শাহজালাল ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুরোদমে কার্গো সার্ভিস চালু করা হয়েছে। 


আগামী মাসের মধ্যে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার বিমানবন্দরে কার্গো বিমান উঠানামার কার্যক্রম চালু করবে। যদিও কক্সবাজার বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। তারপরও কার্গোর জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। 


জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ভারত ট্রানজিট ব্যবহার বন্ধ করলেও আমাদের কোনো সমস্যা নেই। দেশের সবকটি বিমানবন্দর কার্গোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে শাহ আমানত ও কক্সবাজারে কার্গো ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে। 


তিনি আরও বলেন, শাহ আমানত বিমানবন্দরের কার্গো শেডে ২৫০ টন আমদানি এবং ২০ টন রপ্তানি পণ্যের ধারণক্ষমতা এখনই আছে। ২০২২ সাল থেকে বিমানবন্দরে আমদানি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তবে যাত্রী ফ্লাইটে সীমিত আকারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। বিমানবন্দরের কার্গো স্টেশনটি অনেকটাই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিল। সম্প্রতি নতুন করে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন সপ্তাহে বড় দুটি কার্গো ফ্লাইট এলেও তার পণ্য হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হবে স্টেশনটি।


তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করতে দ্রুত কাজ চলছে। জমিজমার কিছু ইস্যু আছে, আমরা যে টার্গেট ধরে এগোচ্ছি। কিছু জায়গা তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ঝিনুক মার্কেট নিয়েও কাজ চলছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এটি হয়ে গেলে আমরা কাজ শুরু করতে পারব।


বেবিচকসংশ্লিষ্টরা সাংবাদিকদের জানায়, কার্গো বিমান চলাচল নিয়ে ভারতের সঙ্গে ‘অনেকটা টেক্কা’ দিতেই দেশের সবকটি বিমানবন্দর ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এমনকি ল্যান্ডিং, পার্কিং ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের চার্জ কমানোরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই নিয়ে বেবিচকসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ‘নোট’ পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে নানা কৌশল নিয়েছে বেবিচক। দ্রুততার সঙ্গে সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো চালুর পর এখন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরও কার্গোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঢাকায়ও বাড়ানো হয়েছে সক্ষমতা। এই তিন বিমানবন্দর পূর্ণভাবে চালুর পর দেশের সব কার্গোই সামলানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে বেবিচক। বছর চারেক আগে করোনা মহামারির সময় ঢাকার পাশাপাশি ভারত দিয়ে কার্গো পাঠানো হতো বাংলাদেশ থেকে। ওই সময় রপ্তানিকারকদের যুক্তি ও অভিযোগ ছিল শাহজালালের চাহিদা মোতাবেক কার্গো পাঠানোর সক্ষমতা ছিল না, আবার ব্যয়ও বেশি। সেই তুলনায় ঢাকা থেকে সড়কপথে  বেনাপোল হয়ে কলকাতা ও দিল্লি এয়ারপোর্ট দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্গো পাঠানো বেশ লাভজনক ও সুবিধাজনক। বারবার ব্যবসায়ীরা দাবি জানালেও বেবিচক উচ্চচার্জ কমানোর  কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু ভারত হঠাৎ তাদের স্থলবন্দর দিয়ে ঢাকা থেকে কার্গো ট্রান্সশিমেন্ট বন্ধ ঘোষণা করায় বর্তমান সরকার বিকল্প পন্থায় কার্গো পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ  নেয়। তারই অংশ হিসেবে দুমাসের মাথায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো পাঠানো শুরু করে।


বেবিচকের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, কিছুদিন আগে কার্গো ফ্লাইট নিয়ে জরুরি বৈঠক হয়েছে। দেশের প্রতিটি বিমানবন্দরেই কার্গো ফ্লাইট উঠানামা করবে। আমরা চাচ্ছি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতেও যেন কার্গো বিমান ব্যবহার করতে পারে। সেই আলোকেই আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আমাদের টার্গেট আগামী মাসের মধ্যেই শাহ আমানত ও কক্সবাজার বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো উদ্বোধন করার প্রস্তুতি চলছে। এই জন্য শাহ আমানতে দুটি ইডিএস বসানো হচ্ছে। বিমানবন্দরগুলো আমরা রিজিওনাল কার্গো হাব হিসেবে গড়ে তোলব। ইতিমধ্যে এখানকার সবচেয়ে বড় ইপিজেড ইয়াংগুন কোম্পানির সঙ্গে সফল আলোচনা হয়েছে। তারা এষানকার তৈরি পণ্য পূর্ব কুনমিং পশ্চিমে সেন্ট্রাল এশিয়া হয়ে গড়ে তুলবে বিশেষ সংযোগ। দেশের সব কার্গো সামলানো হবে। আমরা ভারতকে বুঝিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশ আগের চেয়ে বেশি সক্ষম। এক কথায় বলা যায়, আমাদের মূল টার্গেট ভারতকে টেক্কা দিয়ে জানান দেওয়া- আমরাও পারি। 


বেবিচকের অপর এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে ঢাকায় প্রতি কেজি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে চার্জ পড়ে প্রায় ০ দশমিক ২৯ ডলার, যা ভারতের দিল্লির ০ দশমিক ০৫ ডলারের তুলনায় ছয় গুণ বেশি। পাশাপাশি জেট ফুয়েলের দামও ভারতের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। এই ব্যয়ের জন্য রপ্তানিকারকরা চাপে থাকেন। এই জন্য কার্গো হ্যান্ডলিং খরচ কমাতে বিদ্যমান ট্যারিফ পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই নতুন হারে চার্জ ঘোষণা করা হবে। 


বেবিচক সূত্র জানায়, কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ, কার্গো উইং মেশিন  কেনা এবং আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করা হচ্ছে শাহ আমানত বিমানবন্দরে। পাশাপাশি জার্মানির এয়ারপোর্ট কনসাল্টিং পার্টনার জিএমবিএইচ কর্তৃক বিমানবন্দরের জন্য একটি আধুনিক মহাপরিকল্পনাও প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। এই বিমানবন্দরও থেকে বহির্বিশ্বে সরাসরি গার্মেন্টস পণ্য পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চীন, ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে সরাসরি পাঠানো যাবে মালামাল। এই বিমানবন্দরে ২৭০ টন ধারণক্ষমতার একটি কার্গো স্টেশন প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি দুটি আধুনিক স্ক্যানিং এবং একটি ওজন মাপার যন্ত্র সচল করা হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দর দিয়ে গড়ে ২৫-৩০টি যাত্রীবাহী বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করছে।


এক সময় চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে থাই, এয়ার এশিয়া, সিল্ক এয়ার, কুয়েত এয়ার, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, এমিরেটস এয়ারলাইনসের কার্গো ফ্লাইট চলাচল করত। ২০২২ সাল পর্যন্ত দুটি কার্গো ফ্লাইট চালু ছিল। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য না পাওয়ায় ওই বছর ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে যাত্রী ফ্লাইটে সীমিত আকারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। এই বিমানবন্দরকে রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তুলতে দিনরাত পুনঃলোডেট বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ নিশ্চিতের জন্য ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে বিমানবন্দরের আশপাশে বসতভিটা থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া জমি অধিগগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিমানবন্দরের অনুকূলে বন্দোবস্তকৃত ভূমি হতে পুরনো ঝিনুক মার্কেটে ১৪টি দোকান ও বস্তিসহ ৪২ পরিবারকে অপসারণ এবং ঝিনুক মার্কেট এলাকায় অবশিষ্ট ০.০৪ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বেবিচককে। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে বাধা আসায় ফায়ার স্টেশন ভবন, ড্রেনেজ, পেরিফেরিয়াল রোড ও সিকিউরিটি বাউন্ডারি দেওয়াল নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নির্ধারিত সময়ে এই বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করা কঠিন হতে পারে।


তারপরও বেবিচক চাচ্ছে আগামী মাসের মধ্যে যাত্রীবাহী বিমান উঠানামা করতে না পারলেও কার্গো বিমান যাতে উঠানামা করতে পারে সেদিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। এই বিমানবন্দরে আমদানি কার্গো এরিয়ায় থাকা ৩টি ওয়েইং মেশিনের প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৫ টন। কিন্তু কার্গো অপারেশন শুরু হওয়ার পর রপ্তানি এরিয়ায় কোনো মেশিন স্থাপন করা হয়নি। জরুরি ভিত্তিতে এখানে ওয়েইিং মেশিন জরুরি স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বিমানবন্দরের কার্গো ভবনের নিচতলার সোনালী ব্যাংকের শাখাটি নিরাপত্তা ও অপারেশনাল কার্যক্রমের স্বাভাবিক গতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ব্যাংকটি অন্যস্থানে প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া আরএ-৩ জোন স্থাপন করবে। 


কার্গো ফ্রেইটের সভাপতি কবীর আহমেদ জানিয়েছেন, এক সময় ভারত থেকে গরু আসত। তখন কোরবানির গরুর জন্য ভারতের ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু ভারত সেটা বন্ধ করে দেওয়ায় দেশ এখন গরু উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে কার্গোতেও চাহিদা মেটানোর জন্য পূর্ণ সক্ষম করে তোলা হচ্ছে সব বিমানবন্দর। ইতিমধ্যে চালু হয়েছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বেবিচক বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং, পার্কিং ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চার্জ কমানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।


তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে পোশাক কারখানা এবং ইপিজেডগুলো এতদিন আকাশপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। ফলে রপ্তানির জন্য পণ্য ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঠাতে হতো। অথবা ভারত হয়ে অন্য দেশে যেত। শাহ আমানত চালু হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। অল্প সময়ে আমরা কার্গো পরিবহনে সক্ষম হবো।