আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে এক মামলায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে রায় দিয়ে তার নীতি কার্যকরে বিচারকদের ক্ষমতা সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৭ জুন) এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ফলে ফেডারেল আদালত ও প্রেসিডেন্টদের ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনল। খবর রয়টার্সের।
৬-৩ ভোটে দেওয়া এই রায়ে কনজারভেটিভ বিচারপতি অ্যামি কনি ব্যারেট লেখেন, নিম্ন আদালতগুলোকে তাদের দেওয়া দেশব্যাপী স্থগিতাদেশ পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তবে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করার অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং এই নীতির আইনগত বৈধতাও সরাসরি রায়ে উল্লেখ করা হয়নি।
ট্রাম্প তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই রায় “সংবিধান, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং আইনের শাসনের জন্য একটি যুগান্তকারী বিজয়।” তিনি আরও জানান, তার প্রশাসন জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করা, অভিবাসীদের শরণার্থী পুনর্বাসন স্থগিত এবং “অপ্রয়োজনীয়” ফেডারেল তহবিল বন্ধসহ নানা নীতি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাতে পারবে। রায়ে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের আদেশ রায়ের ৩০ দিন পর কার্যকর হতে পারবে। এর ফলে আদেশটি আংশিকভাবে দেশের কিছু অংশে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০২৫ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিনেই নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব অস্বীকারের নির্দেশ দিয়েছিলেন যদি তাদের অন্তত একজন পিতা-মাতা মার্কিন নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা না হন।
মামলায় তিনটি রাজ্যের ফেডারেল আদালত ট্রাম্পের আদেশ স্থগিত করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট এই দেশব্যাপী স্থগিতাদেশের ব্যাপ্তি সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছে। রায়ে ব্যারেট সতর্ক করে লিখেছেন, “কেউ বিতর্ক করছে না যে নির্বাহী বিভাগকে আইন মানতে হবে। কিন্তু বিচার বিভাগকে সীমাহীন ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।”
অন্যদিকে, লিবারেল বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়োর তার বিরোধিতামূলক রায়ে একে “আইনের শাসনের জন্য বিপর্যয়কর” বলেছেন এবং এই রায়ে ট্রাম্পের নীতির সাংবিধানিকতা উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।
ডেমোক্র্যাটিক অ্যাটর্নি জেনারেল, অভিবাসী অধিকারকর্মীসহ মামলার বাদীপক্ষের দাবি, ট্রাম্পের আদেশ কার্যকর হলে বছরে ১.৫ লাখ নবজাতক নাগরিকত্ব হারাবে। তারা যুক্তি দিয়েছেন, ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেকেই নাগরিক হওয়ার অধিকারী, যা ট্রাম্পের নীতি লঙ্ঘন করছে। এ রায়ের পর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং অভিবাসী অধিকারকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ সি এল ইউ-এর কোডি উফসি বলেছেন, “এই নির্বাহী আদেশ স্পষ্টতই অবৈধ এবং নিষ্ঠুর।”
সুপ্রিম কোর্টের চলতি মেয়াদের শেষ দিনে দেওয়া এই রায়ে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব মামলার পাশাপাশি ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি, এলজিবিটি বিষয়ক গল্পের পাঠ, ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের অর্থায়ন প্রক্রিয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা নীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ রায় দেওয়া হয়েছে।