ইসলামে জুমার দিনকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এই দিনটি আত্মশুদ্ধি, দোয়া ও আল্লাহর রহমত লাভের এক অনন্য সুযোগ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। এ দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সুরা কাহাফ তিলাওয়াত। সাহাবায়ে কেরামও এই আমল নিয়মিত করতেন, যার ফজিলত অপরিসীম।
সুরা কাহাফ পবিত্র কোরআনের ১৮তম সুরা, যাতে ১১০টি আয়াত রয়েছে। জুমার দিনে এই সুরা তিলাওয়াতের বিশেষ সওয়াব ও কল্যাণ রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিন যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে নুর উজ্জ্বল করা হবে। (সুনানুল কুবরা: ৫৯৯৬)
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে, সে আট দিন পর্যন্ত সব ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। আর যদি দাজ্জালের আবির্ভাব হয়, তবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকেও মুক্ত থাকবে। (আল-আহাদিসুল মুখতারাহ: ৪৩০)
হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে। (সহিহ মুসলিম: ৮০৯)
অন্য একটি হাদিসে হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ অবতীর্ণ হওয়ার মতোভাবে (গভীরভাবে) তিলাওয়াত করবে, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য নুর হবে। (শুআবুল ইমান: ২২১)
বারা ইবনে আজেব (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাতে সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করছিলেন। তাঁর পাশে দুটি রশি দিয়ে বাঁধা ছিল একটা ঘোড়া। এমন সময় একটি মেঘখণ্ড এসে তাঁকে ঢেকে ফেলে। মেঘখণ্ড ধীরে ধীরে নিচে নামতে থাকলে তাঁর ঘোড়া ছোটাছুটি শুরু করে। পরদিন সকালে তিনি নবীজি (সা.)-কে ঘটনাটি জানালে নবীজি (সা.) বলেন, এটি ছিল সাকিনা (রহমত), যা কোরআন তিলাওয়াতের বরকতে নাজিল হয়েছিল। (সহিহ্ বুখারি: ৫০১১; সহিহ্ মুসলিম: ৭৯৫)
ইসলামিক গবেষকদের মতে, বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করলে জুমার দিনের সওয়াব পাওয়া যাবে। পুরো সুরা একসাথে পড়া জরুরি নয়; ভাগ করে পড়লেও সমান ফজিলত রয়েছে।
বর্তমান সময়ে নানাবিধ ফিতনা ও সংকটে এই আমল মুমিনের জন্য রক্ষাকবচ। দাজ্জালের মতো বড় ফিতনা থেকেও হিফাজতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে এ সুরার মধ্যে। তাই জুমার দিনে সুরা কাহাফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে আত্মিক শান্তি ও আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।