একজন মানুষ যদি কবরেও শান্তি না পায়—তবে আমরা কোথায় নিরাপদ? নাসিরনগরের মৃত রিয়াজ উদ্দিন সেই প্রশ্নই রেখে গেছেন, নিঃশব্দে—একটি সরকারি নোটিশের মাধ্যমে। ২০১৪ সালে প্রয়াত এই মানুষটি এখন ২০২৫ সালে নাকি ঋণগ্রহীতা! কৃষি ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকার ঋণ, যেটি সুদে-আসলে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজারে—এবং সেই ঋণ পরিশোধে বলা হয়েছে এক মৃত মানুষের পরিবারকে! ব্যাংকের কাগজে ২০২৪ সালের ২৭ জানুয়ারি তার নামে ঋণ অনুমোদন, আর ৩ জুলাই ইউএনও স্বাক্ষরিত চিঠি পৌঁছে গেছে তার পরিবারের ঠিকানায়।
অবাক হওয়ার কিছু বাকি থাকে না যখন জানা যায়—ঋণদাতা ব্যাংকের কোনো মাঠকর্মী কীভাবে একজন মৃত ব্যক্তিকে "ভেরিফাইড" করেছেন, সেটি নিয়ে কারো মুখে কথা নেই। পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা, প্রতিবেশীরা বিস্মিত। রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে মাহমুদ বেগম বিস্ময়ে হতবাক—“আমার বাবা কবর থেকে উঠে কী ব্যাংকে গিয়ে ঋণ নিয়েছেন? এটা কী ধরনের প্রহসন?” এলাকাবাসীও বলছে, ১২ বছর আগে যার দাফন-কাফন হয়েছে, সেই নাম আজ ব্যবহৃত হচ্ছে ঋণের নামে—এটাই কি আমাদের ‘ডিজিটাল প্রশাসন’? ব্যাংক ব্যবস্থাপকের নম্বর বন্ধ, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানালেন, "ব্যাংক এখন বন্ধ, সোমবার আসবেন।"
যেন ঋণ তারা দেয় নি, বরং মানুষই ভুল ঠিকানায় জন্ম নিয়েছে! ইউএনও শাহিনা নাসরিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তদন্তের—কিন্তু বড় প্রশ্নটা থেকে যায়: এই ভুল কি শুধুই একবারের? নাকি ব্যাংকিং ব্যবস্থার কোনো অন্ধকার চক্রের একটি ক্ষুদ্র নমুনা? এই ঘটনা যেন কেবল রিয়াজ উদ্দিনের পরিবার নয়—সমগ্র সমাজের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য এক ধরনের কফিনের আওয়াজ। কারণ আজ যদি কবরবাসীর নামে ঋণ হয়, কাল কে জানে কার নামে ভুয়া চেক, ভুয়া মামলা, ভুয়া জমি বিক্রি হয়ে যাবে!