ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাদে উল্টে গেল শ্রমিকদের স্বপ্নবাহী বাস: ৩০ জনের আর্তনাদ, জীবনের লড়াই
সকালের কুয়াশা ভেদ করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের খাঁটিহাতা মোড়ে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে, একটি শ্রমিকবাহী বাস যেন জীবনের তাগিদে ছুটছিল। আশুগঞ্জ থেকে কুট্টাপাড়ার ভেক্টর ব্যাগ কারখানার দিকে যাত্রা, শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমের দিনটি শুরুর প্রত্যাশা নিয়ে। কিন্তু সোমবার, ২১ জুলাই সকাল সাড়ে সাতটার দিকে, সেই যাত্রা রূপ নিল এক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিতে।
একটি ট্রাককে ওভারটেক করার তাড়াহুড়োয় বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালেন। মুহূর্তের মধ্যে বাসটি মহাসড়কের পাশে খাদে উল্টে পড়ল, আর সঙ্গে ভেঙে পড়ল ৩০ জন শ্রমিকের জীবনের ছন্দ। ধাতব ক্রন্দন আর মানুষের আর্তনাদ একাকার হয়ে গেল সেই কালো সকালে। স্থানীয় মানুষ, যারা প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধে এই পথের সাক্ষী, তৎক্ষণাৎ ছুটে এলেন।
তাদের হাতে হাতে আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করা হলো, রক্তাক্ত দেহগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে পৌঁছানো হলো। ১৯ জন এখনো সেখানে চিকিৎসাধীন, জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন। কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েননি—এটাই যেন এই দুর্ঘটনার একমাত্র সান্ত্বনা। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাসটি একটি ট্রাককে অতিক্রম করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনার শিকার হয়। খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক মো. সজীব মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসটি উদ্ধারের কাজ শুরু করেছে।
কিন্তু এই দুর্ঘটনা শুধু একটি বাসের উল্টে যাওয়ার গল্প নয়। এটি সেই শ্রমিকদের গল্প, যারা প্রতিদিন সকালে ঘাম আর স্বপ্ন নিয়ে কারখানার পথে যাত্রা করেন। এটি সেই মহাসড়কের গল্প, যেখানে গতির তাড়না প্রায়ই জীবনের মূল্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। এটি সেই সমাজের গল্প, যেখানে একটি দুর্ঘটনা শুধু শরীরে নয়, হৃদয়ে, পরিবারে, স্বপ্নে আঘাত হানে। প্রতিটি আহত শ্রমিকের পেছনে রয়েছে অপেক্ষমাণ পরিবার, রয়েছে অর্ধেক খাওয়া ভাতের থালা, রয়েছে একটি শিশুর হাসি বা মায়ের উৎকণ্ঠা। এই খবর কোনো সংখ্যার হিসাব নয়; এটি মানুষের জীবনের কাহিনী, যা আমাদের প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করে—আমরা কি আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি? আমাদের সড়কগুলো কি সত্যিই জীবনের পথ, নাকি মৃত্যুর ফাঁদ? এই ৩০ জনের আর্তনাদ কি আমাদের বিবেককে নাড়া দেবে, নাকি এটিও হারিয়ে যাবে আরেকটি সংবাদের ভিড়ে?