কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে যখন বাংলাদেশ বল হাতে মাঠে নামে তখনও অতিথি দল আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বরে দাঁড়িয়ে, অন্যদিকে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ৪ নম্বরের সেরা একটি দল। পার্থক্য স্পস্ট হলেও সেটা মাঠে কিন্তু স্বাগতিক লঙ্কান ব্যাটাররা টস জিতে ব্যাট হাতে প্রমান দিতে ব্যর্থ হয়। তবে জায়গা মতো লঙ্কান বোলাররা ঠিকই কাজের কাজ করে পার্থক্য বুঝিয়ে দিয়েছে। অতিথি বাংলাদেশ দলের পেসার তাসকিন একাই ৪টি আর তানজিম হাসান সাকিব ৩ উইকেট পকেটে জমা করে লঙ্কাকে ব্যাকফুটে ঢেলে দিলেও ব্যাটাররা পুরাতন দিনের সেই ব্যর্থতার গান গেয়েই চলেছেন। লঙ্কার উইকেট পতনের দৃশ্য ছিল ধারাবাহিক চিত্র, ৫০ ওভার শেষে স্বাগতিকদের নামের পাশে ২৪৪ অলআআউট, কিন্তু বাংলাদশের উইকেটের পতন রীতিমতো লজ্জাজনক বিষয়, মাত্র ৬ রান যোগ করতেই ৬ উইকেটের পতন! অবিশ^াস্য হলেও এটা গতকালের সত্য একটি বাংলা ক্রিকেট চিত্রনাট্য। ২৪৫ রানের জবাবে ১৬৭ অলআউট, ৭৭ রানে হার। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল লঙ্কান দল।
২ উইকেটে ১০০ রান আর ওভার ১৬.৩ এমন দুর্দান্ত অবস্থান থেকে কি করে একটি দল ৭৭ হারতে পারে সেটা গতকাল প্রেমাদাসার উইকেটে দেখিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শান্ত, লিটন বার হৃদয়- যেকোন একজন ক্রিকেটে দাঁড়িয়ে গেলেই গতকাল এভাবে লজ্জার হার হজম করতে হতো না। ওপেনিং জুটিতে পারভেজ ইমন আর তানজিদ হাসান মিলে দলের স্কোর ২৯ এর বেশি নিতে পারল না। ইমন ১৩ রানে ক্যাচ আউট হলেন, এরপর শান্ত যোগ দিলেন তানজিদের সাথে। দুই জনের মিলে স্কোর দেখে শুনে এগিয়ে নিলেন। ক্যারিয়ারে ২৪তম ওডিআই খেলতে নামা তানজিদ ৪র্থ ওডিআই ফিফটিরও দেখা পেলেন। শান্ত এই ওপেনারকে যথাযথ সমর্থন দিয়ে গেলেন।
এই দ্বিতীয় জুটির ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশের দলীয় স্কোর পৌছে যায় ১০০ রানে। কিন্তু এরপরই যেন মড়ক লাগে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে, মাত্র ২৩ রান করা শান্ত চলে গেলেন রান আউট হয়ে। অভিজ্ঞতার প্রতীক খ্যাত লিটন কুমার দাস কোন রান না করেই এলবি’র ফাঁদে কাটা গেলেন। শান্ত আর লিটন আউট হলেন মাত্র ৫ বলের ব্যবধানে! দলের রান ১০১ থেকে ১০২ অবদি যেতেই ৬২ রানে করা তানজিদ ক্যাচ তুলে বিদায় নিলেন। ৪ উইকেটে ১০২ রান অবস্থায় ক্রিজে মেহেদী হাসান আর তৌহিদ হৃদয়। কিন্তু হতাশ করলেন আরেক অভিজ্ঞ হৃদয় ১ রানে বোল্ড হয়ে। ১০৩ রানে ৫ উইকেটের পতনের পর মিরাজ আর জাকেরের শেষ জুটি লঙ্কান বোলারদের বিপক্ষে যুদ্ধ শুরু করলেন। ৩১.১ ওভার তখনও প্রয়োজন ১৪২ রান! রীতি মতো কঠিন এক মিশন বটে। একি করলেন নতুন অধিনায়ক মিরাজ, শূণ্য রানে এলবি’ল ফাঁদে পা দিলেন। মিরাজ যাবার পর তো জাকের আলীর আর কিছু করার ছিল না। এরপর তো সবই বোলার, তানজিম সাকিব, তাসকিন, মুস্তাফিজ আর তানভির ইসলামরা মুলত লঙ্কান বোলারদের সামনে অসহায়ের মতো উইকেট উপহার দিয়েছেন, এছাড়া বার কিছু করার ছিল না।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ভেবেছিল উইকেট থাকবে ব্যাটিং স্বর্গের মতো। কিন্তু শুরুতেই তাদের সেই ধারণা ভেঙে দেয় বাংলাদেশের পেসাররা। নতুন বলে বাউন্স ও গ্রিপ পাওয়া পেসারদের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে ধুঁকতে থাকে লঙ্কান ব্যাটিং লাইনআপ। তবে চারিথ আসালাঙ্কার দুর্দান্ত সেঞ্চুরি (১০৬) দলকে এনে দেয় লড়াইয়ের মতো সংগ্রহ। আসালাঙ্কার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন কুসাল মেন্ডিস (৪৫), লিয়ানাগে (২৯), মিলান রাথনায়েক (২২) ও হাসারাঙ্গা (২২)। শেষ পর্যন্ত ৪৯.২ ওভারে অলআউট হয়ে শ্রীলঙ্কা তোলে ২৪৪ রান। শুরুতেই বাজিমাত করেন বাংলাদেশের তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বাউন্সে বিভ্রান্ত করে আউট করেন নিসাঙ্কাকে (০)। এরপর মিলানকে বোল্ড ও শেষ ওভারে আসালাঙ্কাকে ফিরিয়ে তার শিকার দাঁড়ায় ৩ উইকেট। অন্যদিকে, অভিজ্ঞ তাসকিন আহমেদ শুরুর ধাক্কা আরও তীব্র করে দেন। মাদুশকা (৬) ও কামিন্দু মেন্ডিস (০) ফিরিয়ে দেন দ্রুতই। পরে হাসারাঙ্গা ও থিকশানাকে ফিরিয়ে ৪ উইকেটের পূর্ণতা পান তিনি। অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত লাইন-লেন্থে বোলিং করেন বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম।
মাঝপথে চোটজনিত সমস্যায় পড়লেও মেন্ডিস ও আসালাঙ্কার বিপদজনক জুটি ভেঙে দেন তিনি। ম্যাচের শুরুতে পাওয়ার প্লে’তে মাত্র ৫০ রানেই হারায় ৩ উইকেট। ১০ ওভারের মধ্যে নিসাঙ্কা, মাদুশকা ও কামিন্দু ফিরে গেলে চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। সেখান থেকে আসালাঙ্কা এবং মেন্ডিসের ৫০ রানের জুটি কিছুটা স্থিতি আনে। পরে লিয়ানাগের সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন আসালাঙ্কা। শেষ দিকে রানের গতি বাড়াতে গিয়ে দ্রুত উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। ৪৫তম ওভারের পরপরই হাসারাঙ্গা ও থিকশানা ফিরে গেলে ২৪৪ রানের বেশি যেতে পারেনি তারা। বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ১০ ওভারে ৪৭ রানে ৪টি, তানজিম সাকিব ৯.২ ওভারে ৪৬ রানে ৩টি, তানভীর ১টি এবং শান্ত ১টি উইকেট শিকার করেন। প্রথম ইনিংসে লঙ্কানদের এই সংগ্রহ বাংলাদেশি ব্যাটারদের জন্য কেমন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, এখন সেটিই দেখার বিষয়। ২৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামবে মেহেদী মিরাজের নেতৃত্বাধীন দল।