দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। ফেনীর ৩৫ গ্রাম প্লাবিত, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

Wednesday, 9 July 2025

ফেনীর ৩৫ গ্রাম প্লাবিত, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

ফেনী প্রতিবেদক :

ফেনীতে টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫ স্থান ভেঙে গেছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৩৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।


ফেনী বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, প্লাবিত এলাকার অনেক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক মিটার ও সাব-স্টেশন ডুবে যাওয়ায় নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ ব্যবস্থা চলতে পারে।


জেলা প্রশাসন জানায়, ফেনী জেলায় সোমবার সকাল ৯টা হতে আজ বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ৯ টা পর্যন্ত ৪৮ ঘন্টায় ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।


মুহুরী নদীর পরশুরাম গেজ ষ্টেশন মঙ্গলবার সকাল ৬টায় পানির লেভেল ৬.৯৭ মিটার, রাত ৮টায় ১৩.৮৫ মিটার ছিল। বিপদসীমা ১২.৫৫ মিটার, এই সময় প্রায় ৭ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। দীর্ঘ সময় বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর ডান তীরে জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ ভারত টাই বাঁধের সংযোগস্থল দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।


মুহুরী নদীর উভয় তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে পরশুরাম উপজেলায়, জঙ্গলগোনা-২টি (মুহুরী, ডান তীর), উত্তর শালধর-১টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), নোয়াপুর -১টি (মুহুরী নদীর বাম তীর), পশ্চিম অলকা-১টি (মুহুরী নদীর বাম তীর), ডি এম সাহেবনগর-১টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর), পশ্চিম গদানগর-১টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর), দক্ষিণ বেড়াবাড়ীয়া -১টি (কহুয়া নদীর বাম তীর), পূর্ব সাতকুচিয়া-১টি (কহুয়া নদীর ডান তীর), উত্তর টেটেশ্বর-১টি (কহুয়া নদীর বাম তীর) সহ ১০টি স্থানে ভাঙ্গন হয়েছে এবং ফুলগাজী উপজেলায় দেড়পাড়া-২টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), শ্রীপুর-১টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), উত্তর দৌলতপুর -১টি (কহুয়া নদীর ডান তীর), কমুয়া-১টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর) সহ ৫টি সর্বমোট ১৫ স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে।


এছাড়া বন্যা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে পানি উপচিয়ে বন্যা বাঁধে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। সবশেষ সকাল ৯ টায় পানির লেভেল ১৩.৩১ মিটার।


ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, পরশুরামের মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ১২টায় নদীর পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ১৩.৯২ মিটার, যা বিপদসীমার চেয়ে ১.৫৭ মিটার বেশি। মাত্র ১৫ ঘণ্টায় নদীর পানি ৬.৯২ মিটার (২২ ফুট ১০ ইঞ্চি) বেড়েছে।


আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ফেনীতে ৪৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, বুধবার ও বৃহস্পতিবারও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।


পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুহুরী নদীর বাঁধের পরশুরামের জঙ্গলঘোনায় দুটি, অলকায় তিনটি, শালধরে একটি এবং ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুরে একটি স্থানের বাধঁ ভেঙেছে। সিলোনিয়া নদীর পরশুরামের গদানগরে একটি ও ফুলগাজীর দেড়পড়ায় দুটি স্থানে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া কহুয়া নদীর পরশুরামের সাতকুচিয়ায় দুটি, বেড়াবাড়িয়ায় একটি এবং ফুলগাজীর দৌলতপুরে একটি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।


পরশুরামের চিথলিয়া এলাকার জাকিয়া আক্তার জানান, রাত ৮টার দিকে পানি ঘরে ঢুকতে শুরু করে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি। গত বছরও বন্যায় সব হারিয়েছি, এবার আবারও একই পরিস্থিতি।


মির্জানগরের রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, পাউবো কর্মকর্তাদের অবহেলায় বল্লামুখা বাঁধের প্রবেশপথ বন্ধ করা হয়নি। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এ বিপদ এড়ানো যেত।


পরশুরামের ইউএনও আরিফুর রহমান বলেন, মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং চলছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হলেও এখনও অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না।


ফুলগাজীর ইউএনও ফাহরিয়া ইসলাম জানান, তিনটি নদীর বাঁধে চারটি ভাঙন নিশ্চিত হওয়া গেছে। শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ  উপজেলার সব উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।


ফেনী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন সতর্ক করে দিয়ে বলেন, উজানে ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানির স্তর আরও বাড়তে পারে, নতুন বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।


জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ফুলগাজী ও পরশুরামে ১৩১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রায় ১৫০ মানুষ এরই মধ্যে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গতদের জন্য ৬.৫ লাখ টাকার খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।


জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা করা হয়েছে। ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, দাগনভূঞা ও ফেনী সদর উপজেলায় ত্রাণ কার্য (নগদ) ১৭লাখ ৫০ হাজার টাকা উপ-বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। উপজেলায় ত্রাণ কার্য (চাল) ১২০ মে. টন উপ-বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৪০০ প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার উপ-বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। 


ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলায় যথাক্রমে ৯৯, ৩২ এবং ২২ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারীদের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলায় ২,৫৪৭জন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।


জেলা/উপজেলা/ইউনিয়নের সকল সরকারি/ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার প্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র (কম্পিউটার/ল্যাপটপ/প্রিন্টার) এবং প্রয়োজনীয় নথি যথাযথ ভাবে সংরক্ষণের ও নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।