ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়ন, যেখানে সবুজ ধানখেত আর গ্রামের নির্মল বাতাস একে অপরের সঙ্গে কথা বলে, সেখানে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা এখন সবার মনে ঝড় তুলেছে।
গেল ১৭ জুলাই, বেলা ১১টার সকালে, যখন সূর্যের আলো গ্রামের পথে ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন প্রবাসী সামদানীকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ার জন্য নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়। এই নৃশংসতার পেছনে রকিব মিয়া, যিনি নিজেকে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে এলাকায় ভয়ের ছায়া ফেলেছেন।
সামদানী, যিনি এক মাস আগে সৌদি আরব থেকে ফিরে দেশের মাটিতে নতুন স্বপ্ন বুনতে চেয়েছিলেন, তাঁর উপর এই হামলা শুধু তাঁর শরীরে নয়, পুরো গ্রামের আত্মায় আঘাত করেছে। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসা বিএনপি নেতা তৌহিদ মিয়াও এই হিংস্র আক্রমণের শিকার হন, তাঁর ন্যায়ের কণ্ঠকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে চুপ করানোর চেষ্টা করা হয়। এজাহার ও স্থানীয়দের বর্ণনা থেকে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে রকিব মিয়া দলের নাম ব্যবহার করে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি, কিন্তু তৌহিদ মিয়া তাকে এই অপকর্ম থেকে ফিরে আসার জন্য বারবার সাবধান করেছিলেন।
কিন্তু রকিবের লোভ ছিল অপ্রতিরোধ্য। সামদানীর চাঁদা দিতে অস্বীকার ছিল তাঁর সততা ও সাহসের প্রমাণ, কিন্তু এই সাহসের মূল্য তাঁকে দিতে হলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। হামলার পর সামদানীর পিতা রহিছ মিয়া, একজন সাধারণ গ্রামবাসী, ন্যায়ের জন্য লড়তে গিয়ে ২১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এখন সামদানী ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, আর তৌহিদ, যিনি দলের সম্মান রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন, তিনিও আঘাতে ক্লিষ্ট। তৌহিদের কণ্ঠে যন্ত্রণার মাঝেও দৃঢ়তা, তিনি বলেন, “এরা দলের নামে অপমান ডেকে আনছে। এমন চাঁদাবাজদের বিএনপিতে কোনো স্থান নেই।” রকিব এখন পলাতক, তাঁর ফোন বন্ধ, কিন্তু তাঁর ছড়ানো ভয় এখনো কুন্ডার মানুষের মনে কাঁপুনি তৈরি করছে। এই ঘটনা শুধু একটি অপরাধ নয়, এটি একটি সমাজের নৈতিকতার উপর প্রশ্ন। এটি আমাদের মনে তুলে ধরে—আমরা কি নিপীড়নের মুখে চুপ থাকব? কতদিন আমরা ভয়ের কাছে মাথা নত করব? এই রক্তের দাগ সামদানী বা তৌহিদের একার নয়, এটি আমাদের সবার। এটি আমাদের ঘুম ভাঙাক, প্রতিবাদের শিখা জ্বালাক, যেন কুন্ডার মাটিতে আর কোনো প্রবাসীর স্বপ্ন ধূলিসাৎ না হয়, আর কোনো ন্যায়ের কণ্ঠ চিরতরে নিভে না যায়।