দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। আকাশপথে বাড়ছে টার্বুলেন্স, সমাধান খুঁজছে এভিয়েশন খাত - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

.jpg

Monday, 28 July 2025

আকাশপথে বাড়ছে টার্বুলেন্স, সমাধান খুঁজছে এভিয়েশন খাত


আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

জ্বালানি নির্গমনজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আকাশপথে টার্বুলেন্স বা ঝাঁকুনির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে, যা বিমানে ভ্রমণের নিরাপত্তা ও আরাম—দুটিকেই হুমকির মুখে ফেলছে। এ প্রবণতা মোকাবিলায় বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও এভিয়েশন কোম্পানিগুলো নতুন প্রযুক্তি ও কৌশলের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে চলেছে। খবর বিবিসির। 


২০২৪ সালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট মিয়ানমারের আকাশে প্রবল টার্বুলেন্সের কবলে পড়ে, এই ফ্লাইটের এক যাত্রী বলেন, “রক্ত ছিটকে ছাদে লেগেছিল… চারদিকে শুধু তাণ্ডব। অনেকে মেঝেতে পড়ে ছিলেন।” একই বছর ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৮৭ ফিলিপাইনের আকাশে একই ধরনের ঝাঁকুনির মুখে পড়ে, যেখানে একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট আঘাত পেয়ে ছাদের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে হাত ভেঙে ফেলেন।


আকাশপথে টার্বুলেন্স বাড়ছে কেন?


রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানী অধ্যাপক পল উইলিয়ামস এর গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৭৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ‘সিভিয়ার ক্লিয়ার-এয়ার টার্বুলেন্স’ ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ২০৫০ সালের মধ্যে এই প্রবণতা তিন গুণ বাড়তে পারে।


বিশেষত পূর্ব এশিয়া ও উত্তর আটলান্টিক রুটে এর প্রভাব বেশি পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে অনেকেই বিমানে ভ্রমণে অনিচ্ছুক হয়ে উঠতে পারেন।টার্বুলেন্স শুধু ভীতিকরই নয়, এটি বিমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, জ্বালানি খরচ বাড়ায় এবং কখনো কখনো ফ্লাইট বিলম্ব করে। এ কারণে এয়ারলাইন্সগুলো এর সমাধানে নতুন প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে।


ছোট যন্ত্র, বড় আশাবাদ


অস্ট্রিয়ার প্রতিষ্ঠান টার্বুলেন্স সোলিউশন একটি ক্ষুদ্র ডিভাইস "ফ্ল্যাপলেটস" তৈরি করেছে, যা বিমানের ডানার বড় ফ্ল্যাপের সঙ্গে যুক্ত হয়। এটি ডানার সামনের বাতাসের চাপ বুঝে নিজে থেকেই কোণ সামঞ্জস্য করে, ফলে ঝাঁকুনির প্রভাব ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ও অ্যারোবেটিকস পাইলট আন্দ্রাস গালফি বলেন, “অনেকে বলে ঝাঁকুনি মেনে নিতে হবে, শুধু বেল্ট বেঁধে বসে থাকলেই চলবে। আমরা বলি, না—এর সমাধান সম্ভব।”


এআই-এর ভরসায় ভবিষ্যৎ


সুইডেনের কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষক রিকার্দো ভিনুয়েসা বলছেন, “টার্বুলেন্সের মতো জটিল সমস্যার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আদর্শ।” তিনি ও তার দল বিমানের ডানায় “সিনথেটিক জেট” নিয়ন্ত্রণে এআই ব্যবহার করছেন, যাতে এআই নিজে শিখে বাতাসের প্রবাহ বুঝে ব্যবস্থা নিতে পারে।এদিকে নাসা টার্বুলেন্স শনাক্তে আল্ট্রা-লো ইনফ্রাসাউন্ড শনাক্ত করতে পারা বিশেষ মাইক্রোফোনও পরীক্ষা করেছে, যা ৪৮০ কি.মি. দূরের ঝাঁকুনি বুঝতে সক্ষম।


চীন ২০২৩ সালে একটি “ডুয়াল-ওয়েভলেন্থ লাইডার” প্রযুক্তি প্রস্তাব করে, যা ৭-১০ কি.মি. দূরে মাঝারি মাত্রার ঝাঁকুনি আগেভাগেই শনাক্ত করতে পারে। তবে এই প্রযুক্তি এখনও বড় বাণিজ্যিক বিমানে ব্যবহারযোগ্য নয়, কারণ এতে যন্ত্রপাতি ভারী ও বেশি শক্তি খরচ করে।


ডেটার ঘাটতি, তবু আশার আলো


বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ বিমানে থাকা অ্যাক্সিলারোমিটার ও প্রায় ১ হাজার ৩০০ আবহাওয়া বেলুন স্টেশনের মাধ্যমে উচ্চ আকাশের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই ডেটা কাজে লাগিয়ে আইএটিএ-এর “টার্বুলেন্স এ্যাওয়ার” প্রকল্প বাস্তব সময়ে ঝাঁকুনির তথ্য এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে, যাতে আগেভাগেই সাবধানতা নেওয়া যায়।


এছাড়া টার্বলি-র মতো অ্যাপ সাধারণ যাত্রীরাও ব্যবহার করতে পারছেন, যেটি ফ্লাইটের সম্ভাব্য ঝাঁকুনি সম্পর্কে তথ্য দেয়।অধ্যাপক উইলিয়ামস বলেন, “২০ বছর আগে আমরা ৬০ শতাংশ টার্বুলেন্স পূর্বাভাস দিতে পারতাম, এখন তা ৭৫ শতাংশ। তবে ডেটা কেনার খরচ কমানো গেলে আরও উন্নতি সম্ভব।”