ফ্যাসিবাদী আমলে বড়াইলে এক প্রতাপশালী চেয়ারম্যান ছিলেন। নৌকার টিকেট নিয়ে টানা দুইবার ইভিএমে বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হন। বড়াইল বাজারের উত্তরে ৪৩ শতক সরকারী খাস জমি দখল করে ২ তলা অবৈধ বিল্ডিং বানান। অটিস্টিক পাগলাটে স্বভাবের হওয়ায় জেলা শহরের বড় নেতারা উনাকে আদর করে "সল্টু" নামে ডাকতেন। তার এক বন্ধু পুলিশে চাকুরী করত। চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে চেয়ারম্যানের দলে যোগ দিলেন তিনি।
চেয়ারম্যান বন্ধুকে অবৈধ টাকা জমানোর ক্যাশিয়ার বানালেন। এলাকায় এক প্রতিবন্ধী কিশোরী মেয়ে ধর্ষনের শিকার হলেন। এর বিচার সালিশ হল গ্রামে। ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হল আসামীকে। সালিশের সে টাকা আদায় করে চেয়ারম্যান নিজের জিম্মায় টাকা রাখলেন। এই মেয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা পেত। সেটা পুলিশ বন্ধুর কাছে জমা থাকত। একদিন সেই কিশোরী মেয়েটি রহস্যজনকভাবে অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন। সবাই বললো আবার ধর্ষণের শিকার হয়েছে মেয়েটি।
পত্র-পত্রিকায় নিউজ হল। তদন্ত হল। চেয়ারম্যানের পুলিশ বন্ধুর কাছে মেয়েটির প্রতিবন্ধী ভাতা'র টাকা জমা থাকলেও সেটা দিয়ে কোন চিকিৎসা করানো গেল না। গ্রামে থেকেও মেয়েটির অসুস্থ্য হওয়া, মারা যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারেননি পুলিশ বন্ধু। অন্যদিকে সল্টু চেয়ারম্যানের কাছে থাকা মেয়েটির পাওনা জরিমানার টাকাও আরেকজনের মাধ্যমে সুদে খাটানো হয় গ্রামে। মেয়েটির দুর্দশা নিয়ে সেই পুলিশ বন্ধুর ছোট ভাই গ্রামের কথিত এক প্রতিবাদী(!) ছেলে ফেসবুকে লেখালেখি করছিলেন। মৃত্যুর পর মেয়েটির মিলাদে সে টাকা ফেরত দিলেন পুলিশ ভাই। মৃত্যুর ঘটনায় বড় ভাই আলোচনায় চলে আসায় আস্তে আস্তে ছোট ভাইয়ের লেখার জোশ কমে গেল। বড়াইলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করলেও নিজের আপন বড় ভাই এবং মাদক কারবারি, সুদ খোর, জুয়ারি মামাতো ভাইদের বেআইনী কাজকর্ম দুর্ণীতি নিয়ে এই বিদ্রোহী একেবারে চুপ! মুখে কুলুপ এটেছেন যেন!!
৩ বার মাদক নিয়ে এলাকায় গ্রেফতার হয়েছেন তার প্রিয় মামাতো ভাই। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবচেয়ে বড় মাদক ও ইয়াবা ডিলার সে। তারপরও তাকে নিয়ে কথিত প্রতিবাদী ব্যক্তিটি ১টি শব্দও লিখেননি কোথাও। নিজেকে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির এবং সুপারম্যান ঠাউরালেও স্বজনপ্রীতিতে সে ১৬ আনা সেয়ানা। ফেসবুকে লেখালেখি করে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে টেনেটুনে এসএসসি পাস ছেলেটি এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বড়াইলের সবচেয়ে বড় ধান্দাবাজ ও চাঁদাবাজ। বড়াইল ইউনিয়নের অনেকে না বুঝে তার হুমকিতে ভয় পেয়ে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে টাকা দিয়ে দেন। ইদানীং "বড়াইলের কতা" নামে খোলা একটি ফেসবুক গ্রুপকে কেন্দ্র করে এলাকায় অনলাইন জুয়ার বোর্ড, মাদকের আখড়া থেকে দেদারসে চাঁদাবাজি করছেন সাংবাদিক ও অনলাইন একটিভিস্ট পরিচয়ে। কুরবানী ঈদের পর দালালি করতে গিয়ে ১০ জুন ২০২৫ খৃষ্টাব্দ বড়াইল বাজারে এই কথিত সমাজসেবী ব্যাপক ধুনা খান এলাকাবাসীর হাতে। মুফতে ঈদী পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। বড়াইলে মামাতো ভাইদের শক্তির ওপর ভর করে বাহাদুরি করতে এসে "বল্টু" বনে যান। বল্টুকে রক্ষা করতে এসে এক মামাতো ভাইও বাটাম খান।
মাইরের ঠেলায় জ্বর উঠে। ঢাকায় ফিরে আসেন বল্টু। কয়েকদিন চিন্তা ভাবনা করে বল্টু ৮ দিন পর ১৮ জুন ২০২৫ "সল্টু জাকির চেয়ারম্যান"কে ১নং আসামী করে নবীনগর থানায় অভিযোগ ও মামলা করেন। একই সময় নবীনগরে যৌথবাহিনীর আর্মি ক্যাম্পে জাকির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগও দেন।
থানায় অভিযোগ করার পরপরই দৃশ্যপট পালটে যায়।
তবে অভিযোগ দেয়ার দিনই সল্টু জাকির চেয়ারম্যান ও তার ক্লোজ লোক স্বাক্ষী মামাতো ভাইদের সঙ্গে নবীনগর বসে ফোনে আলোচনা করেন বল্টু। থানায় দেয়া অভিযোগে বল্টুর দেয়া স্বাক্ষীরা সল্টু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেবেন না বলে রাতে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। এর বিনিময়ে বল্টুকে টাকা দিয়ে আপোসের প্রস্তাব দেয়া হয়। অনেকটা "চোর পুলিশ" লুকোচুরি খেলা আর কি! টোপ গিলে ফেলে মাছ। বিক্রি হয়ে যায় বাদী। বড়াইল গিয়ে স্বাক্ষীদের বাসায় বসে ৩০ হাজার টাকা নজরানা বুঝে নেন বল্টু। কৌশলে নগদ নারায়নের বিষয়টি চেপে যান। সবাইকে টুপি পড়িয়ে জানান, আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের কথায় মাফ করে দিয়েছেন আসামীদের। প্রথম প্রথম এলাকায় গোপন থাকে সব। তবে টাকা নেয়ার বিষয়টি জানাজানি হতে খুব বেশী সময় লাগেনি। মাইরের ঘটনায় টাকা হজম করার পর থেকে সল্টুকে নিয়ে ফেসবুকে বল্টুর লেখালেখি একদম বন্ধ। এখন বল্টু বলে বেড়াচ্ছেন সল্টু চেয়ারম্যান না কি নখ দন্তহীন প্রাণী বড়াইলে। ভাগ্যিস বল্টু নিজেকে প্রাণী আর ভাবতে পারছেন না। বড়াইল বাজারে প্রকাশ্যে মাইর খাওয়ার পর ছেলেটি প্রকৃৃত বল্টুর মতো জড় পদার্থই হয়ে গেছেন একরকম! এতদিন ছেলেটি বলে বেড়াত সে কয়েকবার সল্টু চেয়ারম্যানকে মাইর দিয়েছে বড়াইলে। এটা ছিল মুখে মুখেই। এখন সবাই বলে বেড়াচ্ছে বড়াইলে ছেলেটিকে গণধোলাই ও উত্তম মধ্যম দিয়ে "বল্টু" বানিয়ে ফেলেছে সল্টু চেয়ারম্যানের লোকজন।