দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। ভিপি নুরের উপর হামলা, রাজনীতির হিংস্র মুখোশ উন্মোচিত - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

.jpg

Saturday, 30 August 2025

ভিপি নুরের উপর হামলা, রাজনীতির হিংস্র মুখোশ উন্মোচিত


জহির শাহ্ প্রতিনিধি

২৯ আগস্ট ২০২৫, শুক্রবার, রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের গভীর বিভক্তি, হিংসা, ও অস্থিরতার এক জ্বলন্ত চিত্র উন্মোচন করেছে। 


গণ অধিকার পরিষদের শান্তিপূর্ণ মিছিল, যা আওয়ামী লীগের সহযোগীদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত হয়েছিল, হঠাৎ করেই রক্তাক্ত সংঘাতে রূপ নেয়। এই ঘটনায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হন, তার মাথা ফেটে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 


এই ঘটনায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, নুরের রক্তাক্ত মুখ, ফাটা নাক, আর স্ট্রেচারে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য, যা পাঠকের হৃদয়ে শিহরণ জাগায় এবং রাজনৈতিক হিংসার ভয়াবহতাকে সামনে নিয়ে আসে।


প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে গণ অধিকার পরিষদের মিছিল জাপা কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে, জাপা ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়, যা উসকানি হিসেবে কাজ করে। 


গণ অধিকার পরিষদের নেতা আবু হানিফ দাবি করেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। তাদের ৩০০-৪০০ জনের একটি দল ইট-পাটকেল ছুড়ে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।” এই হামলায় নুরুল হক নুরসহ অনেকে আহত হন, এবং পরিস্থিতি দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। জাপার পক্ষ থেকে পাল্টা অভিযোগ উঠেছে যে, গণ অধিকার পরিষদের কর্মীরাই তাদের কার্যালয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা করেছে, এবং তারা কেবল নিজেদের প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। 



জাপার দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, “আমাদের একটি শান্তিপূর্ণ আলোচনা সভা চলছিল। হঠাৎ নুরের দল মিছিল নিয়ে এসে আমাদের কার্যালয়ে হামলা চালায়। আমাদের ১০-১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, একজনের চোখে গুরুতর সমস্যা হয়েছে।” তবে, এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মাঝសত্যতা যাচাইয়ে কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করেছে, যার মধ্যে নুরও আহত হন। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, এবং অনেকে এটিকে “ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক এবং মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “ভিপি নুরের উপর এই কাপুরুষোচিত হামলা স্বাধীনতাকামী জনতার কণ্ঠরোধের একটি নোংরা প্রয়াস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ জড়িত থাকা জাতির জন্য গভীর উদ্বেগজনক।” এনসিপি নেতা সারজিস আলম প্রশ্ন তুলেছেন, “কার নির্দেশে নুর ভাইকে রক্তাক্ত করা হলো? সেনাবাহিনী কখনো উপরের নির্দেশ ছাড়া এক পা-ও ফেলে না। এই হামলার পেছনে কার কালো হাত, তা খুঁজে বের করতে হবে।” রাত সাড়ে আটটার দিকে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়, যখন গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা জাপা কার্যালয়ের সামনে পুনরায় জড়ো হয়। 



এ সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ জাপা নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয় এবং গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের ১০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারা না সরায় ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু হয়, যার ফলে নুর গুরুতরভাবে আহত হন। তার অবস্থা এতটাই গুরুতর যে তাকে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “নুরুল হক নুরের অবস্থা শোচনীয়। তার খিঁচুনি উঠেছে, আমরা জানি না তিনি বাঁচবেন কি না।” এই ঘটনার পর রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করে, স্লোগান দেয়—‘নুরের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব দে!’ এই বিক্ষোভ পটুয়াখালীর গলাচিপায় মশাল মিছিলে রূপ নেয়, যেখানে নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি জানায়। 



এই ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তদন্ত করা হবে।” তবে, সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো এই হামলার সত্যতা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, নুরের উপর লাঠিচার্জের দৃশ্য, যা জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। একদিকে গণ অধিকার পরিষদ জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ তুলেছে, অন্যদিকে জাপা দাবি করছে, তারা কেবল নিজেদের কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের রক্ষা করেছে। বিজয়নগরের এই রক্তাক্ত সংঘর্ষ শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনীতির গভীর সংকট, বিভক্তি, এবং হিংসার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এই ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে—কার স্বার্থে এই হামলা? কার নির্দেশে একজন রাজনৈতিক নেতার উপর এমন বর্বরতা চালানো হলো? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনো অধরা, তবে এই রক্তাক্ত দিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।