জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর গত ৯ মাসে কমপক্ষে ৩৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একজন নিহত এবং ৮৯ জন আহত হয়েছেন।
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাফ্যাক্ট’ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পেয়েছে। রবিবার (৪ মে) বাংলাফ্যাক্টের সিনিয়র বিশ্লেষক নাজমুন নাকিব পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক জসিম উদ্দিন হাওলাদার। ঘটনার ১০ দিন পর ২৯ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান তিনি। পরবর্তীতে পটুয়াখালীর দুমকীতে গ্রামের বাড়িতে তাকে সমাহিত করা হয়।
বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ২০২৪ সালের ২১ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোবারক হোসেন অভিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। এ ঘটনার পর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ নোমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি খুলনার শিববাড়ি মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক গ্রুপের আক্রমণে আহত হন অন্য গ্রুপের ৮ শিক্ষার্থী। ২৫ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করে পুলিশে দেওয়ার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের ওপর হামলা করে দলটির নেতা-কর্মীরা। এ সময় দুজন সাংবাদিকও আহত হন।
১৪ মার্চ কেরানীগঞ্জে শহীদ সায়েমের কবর ভাঙচুর করা হয়। শহীদের মা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলামকে দায়ী করেন। ১৮ মার্চ জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ জসিম হাওলাদারের ১৭ বছর বয়সী মেয়ে বাবার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন। মানসিক নিপীড়ন সইতে না পেরে গত ২৬ এপ্রিল ঢাকার শেখেরটেকের ভাড়া বাসায় আত্মহত্যা করেন ওই কিশোরী। একই দিনে কেরানীগঞ্জে শহীদ ফয়জুল ইসলাম রাজনের কবর ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় শ্রমিক দলের একজন নেতা গ্রেপ্তার হন।
২৭ এপ্রিল নোয়াখালীর মাইজদীতে জুলাই আন্দোলনে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোটভাই ১৬ বছর বয়সী শাহরিয়ার হাসানকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে স্থানীয় কিশোর গ্যাং। গ্যাংটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক রয়েছে বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন।
গত ১৬ এপ্রিল বগুড়ায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভায় কথা–কাটাকাটির জেরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াদ হাসানের ওপর হামলার অভিযোগ মিলেছে বিএনপির এক নেতার ছেলের বিরুদ্ধে। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবুকে মারধরের অভিযোগ গড়াইটুপি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
বরগুনায় সমন্বয়ক মীর নীলয়ের গ্রুপের হামলায় আহত হন সমন্বয়ক রেজাউল করিমসহ ৪ জন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেমঘটিত কারণে ভুল বোঝাবুঝির জেরে আরেক সমন্বয়কের ওপর হামলা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওমর ফারুক সাগরের ওপর হামলা চালায় ছাত্রশিবির।
এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্তর্বর্তী বিরোধের জের ধরে আরো দুটি হামলার ঘটনা ঘটে খুলনা ও বরগুনায়।
বাংলাফ্যাক্ট জানিয়েছে, যেসব ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি, এসব ঘটনার ধরন ও পারিপার্শ্বিক আলামত বলছে হামলাগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হতে পারে। তবে গবেষণা সীমাবদ্ধতার কারণে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি অথবা ফলাফলে উঠে আসেনি এমন আরও ঘটনাও থাকতে পারে।
হামলার ঘটনার সবচেয়ে বেশি জড়িত থাকার অভিযোগ গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের বিরুদ্ধে। প্রায় ১৩টি ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর পরেই রয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা তাদের বিরুদ্ধে ৯টি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ৯টি ঘটনায় কোনো হামলাকারীর পরিচয় বা অভিযুক্তের তথ্য নেই। এসব ঘটনায় হামলাকারীদের সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত এবং ছিনতাইকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।