''চালের চাতুরি'' রুখে দাঁড়াল প্রশাসন: জরিমানা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, জনতার থালায়, ন্যায়ের রায়। ❝একটা জাতির ভাতের থালা যখন কাঁপে, তখন তা হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও পুঁজির লোভের মধ্যে এক অদৃশ্য লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি।❞
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র আনন্দ বাজার। যেখানে চাল বিক্রি শুধু ব্যবসা নয়, জনসাধারণের পেটের সঙ্গে তীব্রভাবে জড়িত। সেই বাজারেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং জেলা খাদ্য বিভাগের সমন্বয়ে পরিচালিত হয় এক গুরুত্বপূর্ণ অভিযান।
নেতৃত্বে ছিলেন সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী, সঙ্গে ছিলেন পরিদর্শক রামিম পাঠান, ক্যাব জেলা শাখার এস এম শাহীন, ও আনসার ব্যাটালিয়ন—নীরব পাহারাদার হয়ে।
দুটি দোকান, এক অভিযোগ—চালের দামে চাতুরি
অভিযানে ধরা পড়ে দুটি দোকান: শামীম ট্রেডার্স ও মোশারফ ট্রেডার্স।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ:
◑ চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি
◑ ক্রয়-বিক্রয়ের কোনো বৈধ ভাউচার না থাকা
◑ মজুদের উৎস ও মেয়াদ বিষয়ে কোনো কাগজ না থাকা
◑ দৃষ্টিগ্রাহ্য মূল্য তালিকার অনুপস্থিতি
জরিমানা নয়, আদর্শের বার্তা
⇨ শামীম ট্রেডার্স: ৩০,০০০ টাকা
⇨ মোশারফ ট্রেডার্স: ২০,০০০ টাকা
এই জরিমানা যেন শুধুই শাস্তি নয়, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার পাঠ। সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী বলেন, “বাজারে চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যদি অনিয়ম করেন, তবে নিয়মিত অভিযানে তার জবাব দিতে হবে।”
বিশ্লেষণ: চাল নয়, চালবাজির কারসাজি
বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থার গভীরে জমে থাকা 'মুনাফাকেন্দ্রিক মানসিকতা' এক সময় খাদ্যকেও অস্ত্রে পরিণত করে।
যেখানে চাল হয়ে যায় ‘অস্ত্র’,
আর ক্ষুধা— ‘পণ্য’।
কিন্তু রাষ্ট্র এবার নীরব নয়।
এই অভিযান বুঝিয়ে দিল—
❝চালের রাজনীতি চলবে না, মানুষের অধিকার আগে।❞
জনগণের কণ্ঠে প্রতিধ্বনি- মজিবুর রহমান ( রিকশাচালক) বলেন, “দিনে আয় ৪০০, চাল কিনতেই লাগে ২০০। কই যামু?”। গৃহিণী শারমিন আক্তার বলেন, “চাল কিনতে গেলে মনে হয় যুদ্ধ করছি। এভাবে কতদূর?” শিক্ষক রাশেদা পারভীন জানালেন, “এই অভিযানের মতো কাজ নিয়মিত হলে অন্তত ভোক্তারা একটু বাঁচবে।”
ভবিষ্যতের সম্ভাব্য দৃশ্যপট
এই অভিযান চলতে থাকলে—
(১) শুধু দোকান নয়, গোডাউন
(২)শুধু শহর নয়, গ্রাম
(৩)শুধু খুচরা নয়, পাইকারি সিন্ডিকেট—সব বুঝে যাবে
"ভোক্তা এখন জাগ্রত, প্রশাসনও মাঠে।"
উপসংহার:
চাল শুধু খাদ্য নয়, আত্মমর্যাদার প্রতীক
যখন রাষ্ট্র বাজারে নামে,
তখন বোঝা যায়,
"গণতন্ত্র শুধু ভোটে নয়, পাতে চাল থাকাও গণতন্ত্রের প্রতীক।"
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আম জনতা প্রশাসনকে স্যালুট জানিয়েছে। আম জনতা মনে করে, এই অভিযান শুধু আইন প্রয়োগ নয়, ভোক্তার অধিকার ফিরিয়ে আনার এক সামাজিক বিপ্লব। জনগণের ভাতের থালায় ফিরে আসুক বিশ্বাস ও ন্যায়ের সুগন্ধি।