দীর্ঘ ছয় বছর পর বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের ৯৬০ একর ভূমি অধিগ্রহণে এক হাজার ৯২০ কোটি ১০ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে। এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের। এ দুই জেলার মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপনে তিনটি জংশন ও সাতটি রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এতে ঢাকার সঙ্গে বগুড়ার রেলপথের দূরত্ব কমবে ১১২ কিলোমিটার। ফলে উত্তরের জেলার দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প অনুমোদনের দীর্ঘ ছয় বছর পর ১৬ জুন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শফিউর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে ভূমি অধিগ্রহণের বরাদ্দকৃত অর্থ অবমুক্ত করা হয়।
ওই পত্রে বলা হয়, ‘বগুড়া থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুকূলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে জিওবি বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে মূলধন ব্যয় খাতের ‘ভূমি অধিগ্রহণ’ বাবদ অর্থ অবমুক্ত করা হলো।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প সূত্র জানায়, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের ৮৫ কিলোমিটার রেলপথে ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে বগুড়ার সীমানায় ৫২ কিলোমিটার রেলপথের জন্য ৫১০ একর ও সিরাজগঞ্জ অংশের ৩২ কিলোমিটারে ৪৫০ একর ভূমি। এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছিল এক হাজার ৯২১ কোটি টাকা। যার মধ্যে এক হাজার ৯২০ কোটি ১০ লাখ টাকা ছাড়া হয়েছে। দুই জেলার মাঠ জরিপ শেষে এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে যৌথ তদন্ত।
নতুন এই রেলপথ নির্মিত হলে বগুড়া থেকে ঢাকার মধ্যে দূরত্ব কমবে ১১২ কিলোমিটার। ফলে যাতায়াতের সময় প্রায় ৪ ঘণ্টা বাঁচবে। প্রকল্পের আওতায় মোট ৯টি স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। যার মধ্যে বগুড়ায় ৪টি ও সিরাজগঞ্জে ৫টি স্টেশন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া বগুড়ার রানীরহাট ও সিরাজগঞ্জে দুটি জংশন স্থাপন করা হবে।
দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় ঋণের অর্থে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ দেবে ভারত।
শুরুতে প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু পরামর্শক নিয়োগ এবং নকশা চূড়ান্ত করা নিয়ে বিলম্বের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পর তারা ২০২৩ সালের ৩০ জুন চূড়ান্ত নকশা করে। পরবর্তীতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে এ মেয়াদেও প্রকল্প শেষ করা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজ জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ শেষপর্যায়ে রয়েছে। এটি শেষ হলেই রেলপথের জমি প্রস্তুত হয়ে যাবে। এরপর দ্রুতই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পের দৃশ্যমান কাজ শুরু হবে। আর এটি বাস্তবায়ন হলে ১১২ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। এতে বগুড়াসহ উত্তরের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরও গতি ফিরবে।