দূরন্ত বিডি ডটকম -----------স্বাগতম ২০২৫------------মানবতার কথা বলে ---------- durontobd.com--------ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, “জুলাই” মনে রেখে ভোটের নিশ্চয়তা চাই, অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। ফেনী মৌসুমের রেকর্ড বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে - durontobd

সংবাদ শিরোনাম

Tuesday, 8 July 2025

ফেনী মৌসুমের রেকর্ড বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে


ফেনী প্রতিবেদক :
টানা দুই দিনের বর্ষণে ফেনী জেলার বিভিন্ন স্থানের রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি ও দোকানপাট পানিতে ডুবে গেছে। পশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।


ফেনী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মজিবুর রহমান জানান, ফেনীতে গত সোমবার (৭ জুলাই) বেলা ৩টা থেকে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি রেকর্ড করেছে ৪৪০ মিলিমিটার। যা গত চলতি বছরে এ মৌসুমের সর্বাধিক বৃষ্টি। এতে করে শহরজুড়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টিতে ফুলগাজী বাজারের শ্রীপুর রোডে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি দোকান ধসে গেছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী, পাউবো বরাদ দিয়ে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সিলোনিয়া নদীর পানি ও পরশুরামে বৃষ্টির পানি বিপদসীমায় পৌঁছে গেছে।


বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে শহরের এসএসকে রোড, একাডেমি রোড, পাঠানবাড়ী রোড, নাজির রোড, মিজান রোড, কলেজ রোড, শান্তি কম্পানি রোড, কদলগাজী রোড, পেট্রোবাংলোসহ বিভিন্ন এলাকা। শহরে রিকশা, ভ্যান ছাড়া তেমন কোনো যানবাহন দেখা যায়নি। বৃষ্টির পানি জমে কোথাও দেখা দিয়েছে হাঁটু পানি, কোথাও আবার কোমর পানি। শহরের অধিকাংশ বাসা বাড়ির নিচ তলায় পানি উঠে গেছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা স্কুলের যাওয়ার চেষ্টা করলেও সড়কে কোমর পরিমাণ পানি থাকায় যেতে পারেননি। স্কুলগুলো বিভিন্ন গ্রুপে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছুটি ঘোষণা করেছে। যারা পরীক্ষার্থী ছিলেন তারা বিশেষ ভাবে পানির মধ্যে হেঁটে ও রিকশা ভ্যানগাড়িতে চড়ে গিয়ে অংশ নিয়েছে। মার্কেট ও দোকানগুলোতে পানি ঢুকে পড়েছে।


শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে পড়ে অনেক গাড়ি। সকাল থেকে সড়কে আটকে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের। মঙ্গলবার সন্ধা ৬টা পর্যন্ত শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকতে দেখা যায় কোমর পানি। 


ফুলগাজী বাজারের শ্রীপুর রোডে মুহুরী নদীর বেড়ীবাঁধ ভেঙে কয়েকটি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফেনী পৌর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী তারেক জানান, সকাল থেকে দোকানে পানি ঢুকে সব মালপত্র ভিজে গেছে। গেল বছরের ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে আমাদের এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে হতো না।


পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নে সিলোনিয়া নদীর মেলাঘর, গদানগর ও মনিপুর গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল মান্নান বলেন, মঙ্গলবার দুপুর থেকে সিলোনিয়া নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি গড়িয়ে সুবার বাজারের দক্ষিণা অঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।


ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ‍্য মতে, পরশুরামের মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমা ১২.৯৬ মিটার প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে বিকেল ৩টায় ১২.২৬ মিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছিল। বিকেল চারটার পর থেকে মুহুরি নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। 


ফেনী উজানে ভারতের ত্রিপুরা ও ফেনীতে এখনও ভারী বর্ষণ হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রেজ রিডার নেপাল সাহা বলেন মঙ্গলবার (৮ জুলাই) চারটার পর থেকে মুহুরি নদীর পানি বিপদ সীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। 


ফেনী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মজিবুর রহমান জানান, আগামী ২-৩ দিন জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় পানি নামছে ধীর গতিতে।


ফেনী পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মো. বাতেন বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে পানি দ্রুত নেমে যাবে। ইতোমধ্যে পৌরসভার ৭টি টিম মাঠে কাজ করছে। চলমান বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিক কহুয়া নদীর বাঁধের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকছে। তবে এখনো তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণ সীমান্তবর্তী মুহুরী, কহুয়া সিলোনিয়া নদীর পানি বাড়ছে।