সিলেট প্রতিনিধি :
আগামী ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে সরকারের কাছ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ আদায় করে ছাড়ব বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গেল শুক্রবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় সিলেটে এনসিপির পদযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে নগরের চৌহাট্টা থেকে পদযাত্রা শুরু করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ হয়।
দেশব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সিলেটে অনুষ্ঠিত জুলাই পদযাত্রায় দলটির সিলেটের হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন। পদযাত্রায় ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’সহ নানা শ্লোগান দেওয়া হয়।
সমাবেশে নাহিদ আরও বলেন, ‘বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি। যেই নতুন সংবিধানে আপনার-আমার অধিকারের কথা থাকবে, মানুষের মর্যাদার কথা থাকবে। আগামী ৩ আগস্ট আমরা শহীদ মিনারে জড়ো হচ্ছি জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ আদায়ের লক্ষ্যে। ইনশাআল্লাহ, শহীদ মিনার থেকে আমাদের দাবি আদায় করে নেব।’
প্রবাসীদের ভোটাধিকারের লক্ষ্যে এনসিপি কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার প্রবাসী সিলেটী ভাইয়ের রক্ত-ঘামে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরে। আমরা সে সকল প্রবাসী ভাইদের ভোটাধিকারের জন্য কথা বলছি। আমরা চাই, সিলেটসহ সারাদেশের প্রবাসী ভাইয়েরা বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণের অংশ হবেন।’
সিলেটকে বহু জাতি-ধর্ম ও বহু সংস্কৃতির প্রতীক উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘সিলেটের আলেম সমাজ, সিলেটের নারীরা, সিলেটের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, সিলেটে নানাবিধ জাতি সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। আমরা বাংলাদেশকে বহুজাতি ও সংস্কৃতির দেশ হিসেবে গড়তে চাই, সিলেট তার অন্যতম প্রতীক। এখানে শত শত ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। আমাদেরকে সে সকল সংস্কৃতি ও সিলেটী ভাষার মর্যাদা দিতে হবে।’
বৈষম্যহীন বালাদেশ গড়তে এনসিপি কাজ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তেল, গ্যাস, পাথরসহ নানা খনিজ সম্পদে ভরপুর এই সিলেট। এই সিলেটকে আগামীর শিল্পন্নোত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সিলেটের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি আগামীতে কাজ করবে। দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য গণঅভ্যুত্থানে শত শত ভাইবোন শহীদ হয়েছেন। আপনার আমার দায়িত্ব হচ্ছে, সেই বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য কাজ করা।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আগামীর নতুন বাংলাদেশে সিলেট হবে এনসিপির অন্যতম দুর্গ। সিলেটবাসী আজ তা দেখিয়ে দিয়েছেন।’
এরপর তিনি বলতে শুরু করেন, ‘যুগযুগ ধরে সিলেট বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিলেট বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে। জনগণের মুক্তির লড়াইয়ে সিলেট ছিল অগ্রগামী। আন্দোলনে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট ছিল অন্যতম কেন্দ্রভূমি।’
তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিলেটবাসীর মূল্যবান অবদানের কথা স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এটিএম তুরাবসহ এই সিলেট জেলার ১৭ জন মানুষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন। আমরা সেসব শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে এসেছি এই সিলেটে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাওয়ায়ারী বলেন, ‘এনসিপি বিএনপিবিরোধী বলে যে প্রচার করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। তবে বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট চলতে দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সিলেটের চা বাগানের শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের ঠিকমতো মজুরি দেওয়া হয় না। চা বাগানের লাভ শুধু মালিক নয়, শ্রমিকদের দেওয়ার ব্যবস্থা করবে এনসিপি।’
বক্তব্যে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করেই এনসিপি উঠে এসেছে। আমরা আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে এসেছি। এনসিপি কোনো চাঁদাবাজ কিংবা টেন্ডারবাজ দলের নাম নয়। সংকট থেকে সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়েই এনসিপি উঠে এসেছে।’
সিলেটে এনসিপিকে শক্তিশালী করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্পিতা আপা, এহতেশাম ভাই, জুনায়েদ ভাইয়ের নেতৃত্বে আপনারা এনসিপির হাতকে শক্তিশালী করুন। আমরা আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, পরবর্তী বাংলাদেশ হবে জনগণের বাংলাদেশ।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী লেখক ও নেতারা এখন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে, তাদের প্রতিহত করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।’
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় সভায় যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশামুল হক, যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, সিনিয়র মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা সেলিমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।