জহির শাহ্ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
সংস্কৃতি-বাণিজ্যের সম্মিলনে বাংলার ঐতিহ্যের উদ্ভাস
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা পরিষদ মাঠে মাসব্যাপী শিল্প ও পণ্য মেলার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এক অনন্য সাংস্কৃতিক-বাণিজ্যিক মিলনমেলা, যেখানে বাংলা মাটির শিল্প, আদিবাসী নারীর উদ্যম, এবং স্থানীয় অর্থনীতির স্পন্দন একত্রিত হয়ে এক নতুন আশা ও সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।
আদিবাসী মহিলা উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলা শুধু একটি বাণিজ্যিক আয়োজন নয়—এ যেন এক নীরব বিপ্লব, যেখানে নারীর হাতের তৈরি পণ্য থেকে শুরু করে কৃষকের কলা-কৌশল, এবং স্থানীয় তরুণদের উদ্ভাবনী উদ্যোগ সবই তুলে ধরা হয়েছে এক প্রাণবন্ত পরিসরে। প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি. এম. রাশেদুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন, আর তাঁর কণ্ঠে শোনা যায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগে সর্বাত্মক সহায়তার বার্তা, যা উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষের মাঝে আশার আলো ছড়ায়। সভানেত্রী রাখী মনি সিনহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই উদ্বোধনী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া থানার ওসি মো. ছমিউদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন আব্দু, সাধারণ সম্পাদক ডা. খোরশেদ আলম ভূঁইয়া, সহ-সভাপতি বাহার মিয়া, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি বোরহান উদ্দিন খান এবং যুবদলের আহ্বায়ক জাকির হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা—যারা এই মেলার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য, সামাজিক সংহতি এবং অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের বার্তা দিয়েছেন। মেলায় অংশ নিয়েছেন শতাধিক উদ্যোক্তা, যেখানে রয়েছে গ্রামীণ হস্তশিল্প, কাপড়, অলংকার, খাদ্যপণ্য, প্রযুক্তি পণ্যসহ নানা বৈচিত্র্যের স্টল, যা একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে তেমনি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করছে।
শিশুদের জন্য রয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থা, নারীদের জন্য আলাদা প্যাভিলিয়ন এবং সন্ধ্যা নামলেই মঞ্চে উঠছে স্থানীয় শিল্পীদের সুরেলা পরিবেশনা—সব মিলিয়ে পুরো মেলা যেন পরিণত হয়েছে এক জীবন্ত উত্সবে, যেখানে উন্নয়ন, সংস্কৃতি ও জনসম্পৃক্ততা একত্র হয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি এঁকে দিচ্ছে। এই আয়োজন প্রমাণ করে—যেখানে নারীরা নেতৃত্ব দেয়, সেখানেই সমাজ এগিয়ে যায়, আর যেখানে সংস্কৃতি ও অর্থনীতি হাত মিলায়, সেখানেই জন্ম নেয় স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির নীরব বিপ্লব।