Thursday, 10 July 2025

অনিয়ম হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফেরত চায় ইসি


জাতীয় ডেস্ক :

অনিয়ম হলে কোনো সংসদীয় আসনের পুরো ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফেরত চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমানে শুধু কোনো কেন্দ্রে ভোটে অনিয়ম হলে সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিলের ক্ষমতা আছে ইসির। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ক্ষমতা ফেরত চাইল ইসি।আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) অষ্টম কমিশন সভা শেষে এ কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজুল মো. সানাউল্লাহ।


বেলা ১১টার পর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বিকেল ৫টায় কমিশন সভার সার্বিক সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের তুলে ধরেন নির্বাচন আবুল ফজুল মো. সানাউল্লাহ।


সভায় আরপিও সংশোধন প্রস্তাব আলোচ্যসূচিতে থাকলেও তা শুধুমাত্র উপস্থাপন করা হয়, কিন্ত বিস্তারিত আলোচনা এগোয়নি। পরবর্তী বৈঠকে শুধু গণপ্রতিনধিত্ব আদেশের সংশোধন অধ্যাদেশ নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হবে বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার।


অন্যদিকে ভোটে অনিয়ম হলে পুরো নির্বাচনি আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফিরে পেতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের প্রস্তাব রাখার পক্ষে নির্বাচন কমিশন।নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়িত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টাও ভোটে অনিয়ম রোধে আইনের দিকটা খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেন বুধবার। আজ ইসি বলছে, এ ধরনের প্রস্তাবে কমিশনেরও সম্মতি রয়েছে।


নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোনো নির্দিষ্ট আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা আবেদন করেছি। পুরো আসনের নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা আমাদের আগে ছিল। সেটা বাদ দেওয়া হয়েছিল। এখন আমাদের কেন্দ্রের ভোট বাতিলের ক্ষমতা আছে।


সর্বশেষ গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ নির্বাচনে ভোট বন্ধ করে দেয় তৎকালীন ইসি।


সানাউল্লাহ বলেন, কেন্দ্র বাতিলের সক্ষমতা ইসির ছিল। যেটা ছিল না সেটা হচ্ছে, পুরা নির্বাচনি আসন বন্ধ করার ক্ষমতা। একসময় থাকলেও তা সরিয়ে নেওয়া হয়। এটাও আমরা ফেরত পাওয়ার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি এবং আশা করি আমরা এটা ফেরত পাব।


গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আরেকটা বিষয় আলোচনা হয়েছে যে, এর আগে আপনারা দেখেছেন যে নির্বাচন কমিশন আমরা গত সরকারের আমলে একটা উপনির্বাচনের সময় দেখেছিলাম যে, নির্বাচন কমিশন একটা সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করে ওই পুরো একটা আসনের নির্বাচনকে বাতিল করে দিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে আইন সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনের এই ক্ষমতাটা খর্ব করা হয়েছে। তারা শুধুমাত্র এখন নির্দিষ্ট কেন্দ্রে নির্বাচন বাতিল করতে পারেন।


নির্বাচন কমিশনের এই ক্ষমতাটা ফিরিয়ে দেওয়া যায় কিনা– কোনো নির্দিষ্ট আসনে যদি ব্যাপক অনিয়ম হয়, নির্বাচন কমিশন সেই আসনের পুরো নির্বাচনটাকে বাতিল করতে পারে কিনা– সে বিষয়ে আইনের দিকটা খতিয়ে দেখার জন্য প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। জানিয়েছিলেন উপ প্রেস সচিব।


হলফনামায় তথ্য সংযুক্তি :


নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ জানান, প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমার সময় হলফনামায় কিছু নতুন সংযুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলার বিবরণ শুধু ২০ বছর নয়, বরং আজীবনের তথ্য হলফনামায় যুক্ত করতে হবে।


এবার ২০ জানুয়ারি বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহ করে ইসি। এ হালনাগাদে বাদ পড়া প্রায় ৪৪ লাখ ভোটার নিবন্ধিত হয়েছে।সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শিগগির সম্পূরক ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এরপর দাবি, আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে আগস্টের মধ্যে হালনাগাদ চূড়ান্ত প্রকাশ করা হবে।


কমিশনার বলেন, এবার প্রায় ৪৪ লাখ ৬ হাজার ৬০২ জন বাদ পড়া ভোটার আমরা পেয়েছি, যারা নতুন করে নিবন্ধন করেছে। মৃত ভোটার পেয়েছি ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯০ জন। সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহে সম্পূরক খসড়া তালিকা আগামী সপ্তাহে প্রকাশ হবে।


নির্বাচন কমিশনার জানান, ইসি সচিবালয় আইন সংশোধন অধ্যাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিশন সার্ভিস নামে একটি সার্ভিস হবে। সংস্কার কমিশনও এ ধরনের প্রস্তাব করেছে। এ সার্ভিস না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান বিধিতেই চলবে। এছাড়া ১৯৯১ সালে নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইনেও ছোট ছোট সংশোধনপ্রস্তাব করা হয়েছে।ইসি কর্মকর্তাদের আর্থিক ক্ষমতা পুনঃঅর্পণেরও বিষয়েও কিছু সংশোধন প্রস্তাব আনা হয়েছে।


এনআইডি সংশোধনের উদ্যোগের প্রশংসা করে কমিশনার জানান, গত সাত মাসে ৯ লাখ আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এখন মাত্র ৭৪ হাজার পেন্ডিং রয়েছে। এনআইডি সংশোধনে ধর্ম পরিবর্তনের বিষয়ে জটিলতা কমানোর প্রক্রিয়াও নেওয়া হয়েছে।


সীমানা চূড়ান্ত পর্যায়ে, আসন সংখ্যা কমবে না


৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশের উদ্যোগ নিচ্ছে ইসি। কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন পেলে শিগগির খসড়া প্রকাশ করা হবে।এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ চূড়ান্ত পযায়ে রয়েছে। ২২১ টা আসনের বিষয়ে কোনো আবেদনই হয় নি। আশা করি, আগামী সপ্তাহে পুরো প্রকাশ হবে।


ঢাকায় আসন সংখ্যা খুব বেশি কমবে না বলে জানান সানাউল্লাহ।


জনসংখ্যার ভারসাম্য আনার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যার সমতা এনে আসন বিন্যাসের কথা জানান কমিশনার। বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভোটার তালিকা, যেটা জনসংখ্যার বাইপ্রোডাক্ট। টেকনিক্যাল কমিটির কাছে রেফার করেছি। আগামী সপ্তাহে আপডেট জানাব।ইতিমধ্যে ঐকমত্য কমিশনে বিশেষায়িত কমিটির মাধ্যমে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ এসেছে। বাস্তবতার নিরিখে তা কতটুকু করা যাবে, তা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।


নতুন দল নিবন্ধন আবেদন যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে যেসব আবেদন সঠিক রয়েছে তা মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাই চলছে আর যাদের আবেদনে সামান্য ত্রুটি রয়েছে তাদের তথ্য পূরণে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এবার ১৪৪টি দল নিবন্ধন চেয়ে ১৪৭টি আবেদন করেছে।নির্বাচন কমিশনার জানান, ইসির আইনজীবী প্যানেল ‘রিভাইজ’ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। এ নিয়েও আগামীতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।


শাপলা রাখা হয়নি প্রতীক তালিকায় :


সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তাবিত নতুন তালিকা নিয়ে বিধিমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে শাপলা প্রতীক প্রস্তাব করা হয়নি।নির্বাচন কমিশনার বলেন, শাপলা প্রতীক চেয়ে দুটি দল— নাগরিক ঐক্য ও এনসিপি আবেদন করেছে। ইসি সব বিবেচনায় করে শাপলা তালিকাভুক্ত করেনি।