শিক্ষা ডেস্ক :বাংলাদেশ পড়াশোনা করা ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের একাংশ/ছবি: ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
মাহা আদনান শাবাইর। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থী। ফুল স্কলারশিপে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। চলতি শিক্ষাবর্ষে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক হেলথ বিষয়ে মাস্টার্স করার জন্য পূর্ণ স্কলারশিপ পেয়েছেন। একই সঙ্গে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগও দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু স্কলারশিপের সেই সুযোগ নিতে গাজা ছেড়ে বাংলাদেশ আসতে পারছেন না মাহা। ফিলিস্তিনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। তাই বাংলাদেশের ভিসা সংগ্রহ করতে হলে তাকে পার্শ্ববর্তী দেশ জর্ডানের বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে স্ব-শরীরে আবেদন করতে হবে।
গাজায় কোনো বিমানবন্দর নেই, আর চারপাশের সব সীমান্ত ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে থাকায় সরাসরি জর্ডানে যাওয়া মাহার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনো ই-ভিসাও চালু করা হয়নি।
ফলে একদিকে নিজ দেশে চলমান যুদ্ধ, প্রাণহানি ও অনিশ্চয়তার ভয়, অন্যদিকে বহু কষ্টে অর্জিত স্কলারশিপ হারানোর আশঙ্কা—এই দুই বিপরীত বাস্তবতার মধ্যেই দিন কাটছে মাহার।
মাহার মতো অনেক শিক্ষার্থীই প্রতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফুল স্কলারশিপে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষার্থে আসা ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের সংগঠন জেনারেল ইউনিয়ন অব প্যালেস্টাইন স্টুডেন্ট ইন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্র বাদউই আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে আমরা প্রায় ৮০ জন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে পড়ালেখা করছি। তবে বর্ডার ইস্যুর কারণে গত বছর ২২০ জন ফিলিস্তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পেয়েও আসতে পারেনি।’
তবে এবছর ফিলিস্তিনের কতজন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ স্কলারশিপ পেয়েছেন সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন বলেন জানান বাদউই আহমেদ।
জানা যায়, গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের (কেবল ছাত্র, পরিবার এবং রোগীদের) বের হওয়ার একমাত্র পথ এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা কারেম আবু সালেম ক্রসিং। তবে এর জন্য তাদের কাছে সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা থাকতে হবে এবং ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বের হওয়ার অনুমতি পেতে হবে।
ফলে এখন জরুরি প্রয়োজন ও বৈধ অনুমতিপত্র ছাড়া কোনো ফিলিস্তিনির পক্ষে দেশ ছাড়ার সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে গাজা থেকে বের হওয়ার জন্য গন্তব্য দেশের দূতাবাসগুলোকেই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়। তবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এমন সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
দক্ষিণ গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে জাগো নিউজকে মাহা জানান, ফিলিস্তিনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় সাধারণত জর্ডান ও মিশরে অবস্থিত দূতাবাসগুলো এসব কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করে। ‘গাজার একমাত্র চলাচলের পথ কেরেম আবু সালেম সীমান্ত, যা জর্ডানের দিকে। তাই আমি জর্ডানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে সহযোগিতার জন্য ইমেইল করি। আমি তাদের জানাই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র পাওয়া ছাড়া গাজা ছাড়ার কোনো উপায় নেই, আর সে অনুমতির জন্য দূতাবাসের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। তাহলেই দূতাবাসে সরাসরি উপস্থিত হয়ে ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো।’ বলেন মাহা।
তবে দূতাবাস এ ধরনের সহায়তা করতে অপরাগ বলে জানিয়েছে। আর এটাই মাহাদের মতো বাংলাদেশে স্কলারশিপ পাওয়া ছাত্রদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘এ ধরনের সমন্বয় ছাড়া আমি বাংলাদেশ দূতাবাসে পৌঁছাতে পারছি না, কার্যত আমরা বন্দি অবস্থায় আছি।’ বলেন মাহা। ‘বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি ফুল স্কলারশিপ ও চাকরির অফার পেয়েও শুধু দূতাবাসের সহযোগিতা না পাওয়ায় সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্য অনেক দেশের দূতাবাস তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য এ ধরনের সমন্বয় করে আসছে। আমার এক বন্ধু সম্প্রতি ফ্রান্স থেকে মাস্টার্স স্কলারশিপ পেয়েছে। ফ্রান্সের দূতাবাস তার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি আদায় করে গাজা ছাড়তে সহায়তা করেছে।’
মাহার আকুতি, ‘আমি চাই, বাংলাদেশ দূতাবাসও আমাদের পাশে দাঁড়াক, যেমনটা অন্য দেশের দূতাবাসগুলো করছে।’