জহির শাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোরাদ হোসেন অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে বিদেশে পালানোর চেষ্টাকালে তাকে আটক করা হয়। ইমিগ্রেশন পুলিশ প্রথমে নিয়মিত চেকিংয়ের সময় তার বিরুদ্ধে মামলা থাকার বিষয়টি শনাক্ত করে, এরপর তাকে হেফাজতে নেওয়া হয় এবং রাতেই আখাউড়া থানার একটি বিশেষ পুলিশ টিম ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। গভীর রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে মোরাদকে পুলিশের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয় এবং সোমবার ভোরে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনা হয়।
আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ছমিউদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, “মোরাদ হোসেন বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পলাতক ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।” স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র জানায়, মোরাদ হোসেন একসময় আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন, বিশেষ করে তৎকালীন আইনমন্ত্রীসহ স্থানীয় ক্ষমতাধর নেতাদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি বিভিন্ন আলোচিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত হয়ে এলাকা জুড়ে পরিচিতি পান। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার দাপটে এলাকায় প্রভাব বিস্তার, বিরোধীদের দমন, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংক্রান্ত মামলাতেও তার নাম উঠে আসে।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শুধু বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা নয়, তার বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, সহিংসতা, হামলা এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে মোরাদ আত্মগোপনে চলে যান এবং গত কয়েক মাসে তাকে এলাকায় দেখা যায়নি। হঠাৎ বিদেশ পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বিমানবন্দরে ধরা পড়ায় সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মতে, তিনি দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর পরিস্থিতি সামলে বিদেশে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ইমিগ্রেশন পুলিশের নজরে পড়ে তার পালানোর পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়; কেউ এটিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন এবং বলছেন, “অবশেষে প্রভাবশালী হলেও আইনের বাইরে কেউ নয়, সেটি প্রমাণিত হলো,” আবার কেউ মনে করছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হতে পারে। মোরাদের গ্রেপ্তারের পর তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সমর্থকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আইনি সহায়তা নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক নেতারা মন্তব্য করছেন, “দীর্ঘদিনের অপকর্ম ও অভিযোগের বিচার শুরু হলো, এটি কেবল শুরু, সামনে আরও অনেকে ধরা পড়বে।”
মোরাদ হোসেনকে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আদালতে হাজির করার প্রস্তুতি চলছে এবং পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে, বিশেষ করে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাটি ছাড়াও অন্যান্য ফৌজদারি মামলা আদালতে তোলা হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে আখাউড়া অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে, সেটি নতুন করে জোরালো হবে, মোরাদের মতো একজন আলোচিত ব্যক্তির গ্রেপ্তার নিঃসন্দেহে আসন্ন সময়ের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
