ফাহিম আহমেদ সিলেট থেকে :
কষ্টের বোরো ফসল রক্ষায় কোন সরকারি অনুদান ছাড়াই কৃষকদের স্বার্থে ৮১ গ্রামের মানুষের সহায়তায় সুনামগঞ্জে মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলা বিস্তৃত টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
নিজস্ব অর্থায়নে বাঁশ, বস্তা নিয়ে নজরখালী বাঁধটির নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেছেন আসন্ন মধ্যনগর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান।
জানা যায়, বিশ্বব্যাপী পরিচিত বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালীতে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ নিয়ে প্রতিবছরই দ্বিধায় থাকে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে টাঙ্গুয়ার হাওরটি ‘পরিবেশ সংকটাপন্ন’ এলাকা হওয়ায় এখানে বাঁধ দেওয়া বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গেল ২০২২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে সরকারি টাকায় বাঁধ দিলেও স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় নজরখালী বাঁধটি ভেঙে বিপুল পরিমাণ জমি ডুবে যায়। তবে টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ হলে ৮১ গ্রামের কৃষকের ১০ হাজারের উপর হেক্টর জমিতে লাগানো বোরো ফসল রক্ষা হবে জানান স্থানীয় কৃষকরা। তবে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করলেও সরকারি সহায়তা চান কৃষকরা। কারণ হিসেবে কৃষকরা বলছেন বর্তমানে ৫-৬ লক্ষ টাকার বাজেট থাকলেও টেকসই বাঁধ করতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন এবং প্রতি বছর সরকারি উদ্যোগেই এখানে বাঁধ নির্মাণ করার দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে হোসেনপুর গ্রামের কৃষক কুদ্দুস মিয়া বলেন, বুধবার থেকে আমাদের ৮১টি গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় এখানে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আমরা প্রতিবছরই এখানে বাঁধ দেওয়ার দাবি জানাই এখানে আমাদের একমাত্র বোরো ফসল লাগানো হয় এটি আমাদের জীবিকার উৎস, এবারও সরকার থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড এখানে বাঁধ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু আমাদের প্রায় ১০ হাজারের বেশি হেক্টর জমি রয়েছে সেই জমির ফসলগুলো যদি তলিয়ে যায় তাহলে আমাদের পথে বসতে হবে। সেজন্য সবাই মিলে নিজেদের অর্থায়নে এখানে বাঁধের কাজ শুরু করেছি।
রংচি গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই বলেন, এখানে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। কারণ আমাদের নিজেদের শ্রম দিয়েও এখানে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা প্রয়োজন, অনেক মাটি আনতে হবে, অনেক কাজ আছে করতে হবে। এখানে যদি সরকারি পাওয়া যায়, আমাদের জন্য খুব ভালো হবে। এছাড়া এখানে প্রতি বছর কৃষকের কথা চিন্তা করে যেন সরকারিভাবে পাউবো বাঁধ করে দেয়।
বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী বাঁধ আমাদের ৮১টা গ্রামের ফসলরক্ষা বাঁধ করতে হয়। ৮১ গ্রামের কৃষকের কথা চিন্তা করে, হাজার হাজার মণ ধানের ফলনের কথা ভেবে সহায়তা আমি এমপি, ডিসি ও তাহিরপুর মধ্যনগর উপজেলা ইউএনওদের কাছে অনুরোধ করব বাঁধ নির্মাণের।
এখানে বাঁধ দেওয়া হাওরের পরিবেশগত সমস্যা জানিয়ে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় ভারী বর্ষণ শুরু হলে যাদুকাটাসহ বিভিন্ন নদীর পানির চাপ পড়ে নজরখালীসহ আরও কয়েকটি পয়েন্টে। ঢলের প্রবল স্রোতে নজরখালী দিয়ে বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ করলে আশপাশের হাওরগুলো অনেক ঝুঁকিমুক্ত থাকে। আর ঢলে বাধা পেলে গুরমা, মাঠিয়াইনসহ অন্যান্য হাওর রক্ষা বাধ বিপন্ন হয়ে উঠে। ফসলহানি হওয়ার শঙ্কা বাড়ে, তাই আমরা এখানে বাঁধ দিতে পারি না। একবার ইউএনও সাহেবের অনুরোধে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। সেসময় প্রচুর ফসলের ক্ষতি হয়েছিল। তবে এখানে পাউবো কখন বাঁধ দেয়নি, কারণে এখানে বাঁধ করতে পরিবেশগতও সমস্যা আছে।